দরিদ্র দেশে খাদ্য উৎপাদনে বড় বাধা সারের উচ্চমূল্য

133

বিশ্বের প্রায় সব দেশ উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। সারের উচ্চমূল্যে উৎপাদন ব্যাহত হলে এ চাপ অব্যাহত থাকবে। গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত প্রায় সব নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের ওপরে ছিল। অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরেও ছিল। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ খাদ্য নিরাপত্তা আপডেটে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৯ শতাংশ এবং নভেম্বরে ছিল ৮.১ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৭ শতাংশ। তবে মাস হিসেবে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল গত আগস্টে ৯.৯ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডিসেম্বর ২০২২ প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও আবহাওয়াগত কারণে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য থাকবে। যদিও সুদের হার বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়েছে, সামাজিক উদ্বেগ বাড়িয়েছে এবং অনেক দেশের বাজেটে চাপ তৈরি করেছে। যারা খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক ব্লগে বলা হয়, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সারের উচ্চমূল্য। এতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের শস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্বের ৪৫টি দেশের ২০৫ মিলিয়ন মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে রয়েছে।

এসব দেশের বেশির ভাগই নাইট্রোজেন, পটাশ, ফসফেট, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি কাঁচামাল সংকটে রয়েছে। ২০২০ সালের পর থেকে বিশ্বে সারের দাম তিন গুণ বেড়েছে। এ বাজার এখনো অস্থির রয়েছে। এ অবস্থায় উন্নত দেশগুলোর কৃষকরা ভর্তুকি সুবিধার কারণে প্রয়োজনীয় সারের ব্যবস্থা করতে পারলেও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত সার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। রাশিয়া ও বেলারুশের মতো দেশগুলো থেকে সার রপ্তানিতে বিধি-নিষেধের কারণে দরিদ্র দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্য গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণ সাগরের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে খাদ্যের দাম বাড়তে থাকে।

এফএও বলেছে, গম ও ভুট্টার দাম গত বছর রেকর্ড উচ্চে পৌঁছেছে, যদিও ডিসেম্বরে অন্যান্য শস্যের দামের সঙ্গে এগুলোর দাম কমেছে। ২০২২ সালে এফএওর খাদ্যমূল্য সূচকের গড় মান ছিল ১৪৩.৭ পয়েন্ট। ১৯৯০ সালে এফএও মূল্য সূচক প্রবর্তন করার পর যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। সূচক অনুযায়ী ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মূল্যসূচকের মান ১৮ পয়েন্ট বেড়েছে। এর ফলে ২০২২ সালে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১৪.৩ শতাংশ বেড়েছিল।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে হবে ১.৭ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে হবে ২.৭ শতাংশ।