ব্যাংকার থেকে সফল খামারি চট্টগ্রামের আসাদ!

191

চট্টগ্রামের তরুণ এস এম আসাদ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক শেষ করে যোগ দিয়েছিলেন বেসরকারি একটি ব্যাংকে। তিন বছর পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন হয়েছেন সফল খামারি। ব্যাংকার থেকে পুরোদস্তুর খামারি বনে যাওয়া আসাদ ‘সয়েল মিল’ ব্রান্ডের নাম দিয়ে দই, দুধ আর মাংস বিক্রি করেন। তার আয় চাকরির বেতনের চেয়েও বেশি।

কেন এই তরুণ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে খামারি হয়েছেন সে গল্প বলেছেন বাংলাভিশনকে।

তরুণ খামারি আসাদ জানান, ২০১১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করে চাকরি নেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে এক বছর চাকরির পর ছেড়ে দেন সেই চাকরি। এরপর ২০১৭ সালে যোগ দেন বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকে। চাকরির পাশাপাশি জমানো টাকা দিয়ে ২০১৮ সালে চার লাখ টাকায় দুটি গাভী কিনে স্থানীয় মসজিদের জমি ভাড়া নিয়ে শুরু করেন লালনপালন। কিন্তু যার মননে উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন তাকে যেন কিছুতেই টানছিলোনা অন্যের অধীনে করা চাকরি। তিন বছর চাকরি করার পর স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেন ব্যাংকের চাকরি, হয়ে উঠেন পুরোদস্তুর খামারি।

চার বছরের মধ্যে ব্যবসার পরিধি বেড়েছে জানিয়ে আসাদ বলেন, বর্তমানে তার খামারে গরুর সংখ্যা ২২টি। শুধু দুধ বিক্রির টাকায় পোষানো সম্ভব না হওয়ায় তার খামারে উৎপাদিত দুধ থেকে উৎপাদন শুরু করেন দই। অল্প সময়ে ‘সয়েল মিল’ নামে এই দইয়ের চাহিদা বাড়ে স্থানীয় পর্যায়ে। কিন্তু এখানেই থামতে চাননি আসাদ। ব্যবসার পরিধি বাড়াতে সম্প্রতি বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ডার নিয়ে জবাই করা গরুর মাংসও বিক্রি করছেন তিনি। এ ছাড়া প্রতিবছর কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা মাথায় রেখে গরুও বিক্রি করছেন এ তরুণ। গত বছর কেবল কোরবানির ঈদেই বিক্রি করেন ৪৫টি গরু।

তরুণ এ খামারি বলেন, ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে খামারি হওয়ার বিষয়টি প্রথমে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা ভালোভাবে নিতে পারেননি। বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী অনেকেই বিষয়টি নিয়ে তাচ্ছিল্যও করেছিলেন। কিন্তু ব্যবসায় উত্তরোত্তর সাফল্য দেখে এখন বন্ধ হয়ে গেছে সমালোচনা। পরিবারও এখন বেশ খুশি।

কেন চাকরি ছেড়ে খামারি হয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদ জানান, ‘অন্যের অধীনে চাকরি করা কখনোই টানেনি আমাকে। সব সময় চেয়েছি নিজে কিছু করবো। দেশের নামকরা খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো একদিন নিজের একটি ব্র্যান্ড হবে, যে ব্রান্ডের মাধ্যমে আমাকে চিনবে সবাই। সেইসাথে ব্যবস্থা করতে পারবো কিছু মানুষের কর্মসংস্থানেরও। তাই নিজের স্বপ্ন পূরণে এলাকায় বিভিন্ন সামজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরিচিতিকে সম্বল করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ লিটার দুধ বিক্রি হয়। সেইসাথে খামারে উৎপাদিত দুধ থেকে তৈরি দইয়েরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’

তিনি বলেন, শুধু দই বিক্রি করেই তার মাসিক মুনাফা হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। তবে প্রতিবছর রমজান মাসে তা চার থেকে পাঁচগুণ বেড়ে যায়। এ বছর রমজানে কেবল দই বিক্রি করে তার দুই লাখ টাকার মতো মুনাফা হয়েছে। তার অধীনে বর্তমানে কাজ করছেন চারজন।

এখানেই থেমে নেই এই তরুণ উদ্যোক্তা। খামারে থাকা গরুর জন্য ভাড়া করা ৪০ শতক জমির মধ্যে ঘাসও উৎপাদন করেন তিনি। সেইসাথে ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি স্কুলও রয়েছে তার। শুধু যে ব্যবসা নিয়েই ভাবেন তিনি তা নয়। এমবিএ টাও যে বাদ রয়ে গেছে সে ভাবনা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়ে ব্যবসার পাশাপাশি শেষ করেছেন স্নাতকোত্তরও।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা, কেবল দই ,দুধ ও মাংস বিক্রিতে সীমাবদ্ধ না রেখে তার প্রতিষ্ঠিত ‘সয়েল মিল’ ব্র্যান্ডের অধীনে উৎপাদন করতে চান মিষ্টি ও দুগ্ধজাতীয় বিভিন্ন খাবার। এবার এলাকার গন্ডি পেরিয়ে তার উৎপাদিত পণ্য পৌঁছে দিতে চান চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে। চাকরি না পেয়ে হতাশায় ডুবে যাওয়া তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন চট্টগ্রামের এ যুবক।