বছর চারেক আগে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আমন ও বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী তিনটি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে বোরো মৌসুমের পানি সাশ্রয়ী জাত ব্রি ধান ৯২ অন্যতম, যা কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। চলতি বোরো মৌসুমেও কৃষকেরা এ ধানে বিঘায় ফলন পেয়েছেন সাড়ে ২৮ মণ। চিকন জাতের ধানের ফলন ও দামে খুশি হয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা।
ব্রি’র তথ্যমতে ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশের হাওর ও সমতল এলাকায় চাষ হচ্ছে ব্রি ধান ৯২। এ জাতের ধানের পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৭ সেমি। গাছের কাণ্ড শক্ত বিধায় ঢলে পড়ে না। ফলে কৃষকরা বাড়তি হিসেবে খড়ের দাম ষোলআনা পেয়ে থাকেন। ধানের দানা লম্বা ও জিরা কিংবা ব্রি ধান ২৮ এর মতো চিকন। পাতা হালকা সবুজ, ডিগপাতা খাড়া এবং ব্রি ধান ২৯-এর চেয়ে প্রশস্ত। পাকার সময় কাণ্ড ও পাতা সবুজ থাকায় সহজেই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাটা যায়। শ্রমিক খরচেও সাশ্রয় হয় বেশ।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) রাজশাহী অঞ্চলে চাষ হচ্ছে ব্রি ধান ৯২। সমালয়ে কয়েকশ বিঘা জমিতে একত্রে এই ধান চাষ হচ্ছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোকড়াকুল গ্রামে ১১০ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল ৯২ জাতের ধান চাষ করেছেন চাষিরা। পাকা ধান কর্তনে ও ফলন দেখতে গত সোমবার সকালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর ছুটে এসেছেন। মাঠেই ধান কেটে বিঘায় গড়ে সাড়ে ২৮ মণ ধানের তথ্য জানিয়েছেন ব্রি’র মহাপরিচালক।
এ সময় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে। কেননা বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার, দেশে কোনো পতিত জমি থাকবে না। যেখানে জমি আছে, সেখানে চাষাবাদ করা হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। আমাদের দেশে যত ধরনের ধান উদ্ভাবন হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ৯২। সবচেয়ে ভালো এবং ফলন প্রায় সাড়ে ২৮ মণ। এই ধান হেলে পড়ে না। চিকন জাতের ধান বাজারে দামও বেশি, মানুষ খেতে পছন্দ করে। রাজশাহীর পুঠিয়ায় প্রথমবারের মতো ব্রি ধান ৯২ চাষ করা হয়েছে। আপনারা ধানের ফলন দেখতে পাচ্ছেন, কত সুন্দর ফলন হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০ থেকে ১২ দিন আগেই এই ধান কাটা যাবে এই ধান। ফলে কৃষকরা বাড়তি সুবিধা পাবেন এটা নিশ্চিত।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) রাজশাহী অঞ্চলের অফিস প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ফজলুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী অঞ্চল যেহেতু খরাপ্রবণ এলাকা, তাই খরাপ্রবণ এলাকায় চাষাবাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী ধান ব্রি-৯২। ফলন প্রায় ২৮ মণ হারে পাচ্ছেন কৃষকরা। পুঠিয়ার এই মাঠে একসঙ্গে বীজতলা তৈরি, রোপণ ও আজ কাটা হচ্ছে একসঙ্গেই ১১০ বিঘা জমির ধান। এ ধান কাটার পর জমিতে বোনা হবে সরিষা। এরপর করা হবে আমন ধান, তারপর আবার সরিষা অর্থাৎ একই জমিতে বছরে চার ফলন পাবেন কৃষকরা। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন সেজন্যই কৃষির সব বিভাগ একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এ ধানের বীজ বিএডিসি কিংবা আমাদের ব্রি অফিস থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন কৃষকরা।
ড. মো. ফজলুল ইসলামের সভাপতিত্বে বোরো-ধৈঞ্চা-রোপা আমন এবং সরিষা চাষের এ ক্রপিং প্যাটার্ন নিয়ে মাঠ দিবসে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শামছুল ওয়াদুদ এবং জেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোজদার হোসেনসহ স্থানীয় কৃষকরা।