পঞ্জিকার হিসাবে বর্ষাকাল শুরু হলেও বর্ষার দেখা নেই যশোরে। এ সময় অর্থাৎ ফাল্গুন থেকে মধ্য আষাঢ় রেণুপোনা উৎপাদন ও বিক্রির ভরা মৌসুম। এ সময় যশোরের মৎস্যপল্লি-খ্যাত চাঁচড়ার হ্যাচারিগুলোয় রেণু ও পোনা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। কিন্তু এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে রেণু ও পোনা উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছেন এখানকার হ্যাচারি মালিক ও মাছচাষিরা।
মৎস্যচাষিরা জানান, প্রায় এক মাস ধরে যশোরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। এ কারণে রেণু উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। সহনীয় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা ও খরার কারণে ছোট পুকুর বা খালগুলোয় প্রতিদিনই রেণু ও পোনা মাছ মারা যাচ্ছে। এজন্য অধিকাংশ মাছচাষি হ্যাচারি থেকে মাছ সংগ্রহ ও বিক্রি করা কমিয়ে দিয়েছেন। আর চাহিদা কমে যাওয়ায় হ্যাচারিগুলোও উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে।
যশোর চাঁচড়ার মাতৃ ফিস হ্যাচারির মালিক জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, গরমের কারণে পুকুরের মালিকরা প্রত্যাশার চেয়ে রেণু ও পোনা ক্রয় করা সীমিত করেছেন। এ কারণে আমরাও বাধ্য হচ্ছি রেণু ও পোনা উৎপাদন কমিয়ে দিতে। কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না পাওয়ায় তাপ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এ বছর মৌসুমের প্রায় শেষ সময়ে এসে দাঁড়ালেও মাছের বিকিকিনি নেই বললেই চলে। যা বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে শ্রমিকের খরচও মেটাতে পারছি না।
একই কথা বলেন মৎস্যচাষি অহিদুল্লাহ লুলু। তিনি বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃষ্টি না হলে আমরা এ বছর পুরোপুরি ব্যর্থ হবো। শুধু হ্যাচারি মালিকরা নন, পুকুর মালিকরাও এমন পরিস্থিতিতে শোচনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
যশোর জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও চাঁচড়া মাতৃ ফিস হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী আলহাজ ফিরোজ খান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আপাতত বেচাকেনা কমে গেছে। তবে যশোরের চারটি হ্যাচারিতে জি-৩ রুই মাছের বেচাকেনা বেড়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত বৃষ্টি হলে আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।
যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, তাপমাত্রার কারণে মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদনে কিছুটা সমস্যা হয়েছে ঠিক। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখে যা মনে হচ্ছে, তা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই উন্নতি হবে। বৃষ্টি শুরু হলে মাছচাষিরা পুরোদমে রেণু ও পোনা বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
মৎস্যচাষিদের সূত্রে জানা গেছে, এ মুহূর্তে যশোরের চাঁচড়ার মোট ৪০টি হ্যাচারি রেণু ও পোনা উৎপাদন করছে। এখানে বছরে দুই লাখ ৬০ হাজার কেজি রেণু উৎপাদিত হয়।