রাজশাহীতে ভুট্টার বাম্পার ফলন, দামেও খুশি কৃষক

139

রাজশাহীতে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। ভুট্টার বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে দ্বিগুণ ভুট্টা চাষের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার নয়টি উপজেলা ও মহানগরীর দুটি থানায় এবার ১৬ হাজার ৫৯৩ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। কৃষকদের চাষাবাদের তালিকায় উচ্চফলনশীল ভুট্টার জাত এনএইচ-৭৭২০, এনকে-৯৪০, সুপার সাইন-২৭৪০ ও এম গোল্ড-৯০০ বেশি রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন। অল্প খরচে ও অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফসল হওয়ায় কৃষক গম কাটার পরে খরিপ মৌসুমেও ভুট্টা লাগিয়েছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, রাজশাহী অঞ্চলে ভুট্টার মৌসুম দুটি (রবি মৌসুম ও অপরটি খরিপ মৌসুম)। রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভুট্টার বীজ বপন করা হয়। খরিপ মৌসুমে এই অঞ্চলে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ভুট্টার বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের পর ভুট্টা পেতে সময় লাগে প্রায় চার মাসের মতো। ভুট্টার বিঘাপ্রতি ফলন হয় ২২ থেকে ২৫ মণ। এবারও আবহওয়া ভালো থাকায় ২২ মণের ওপরেই ফলন হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে বাগমারাতে। ৩ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে ভুট্টার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৩১১ মেট্রিক টন। এছাড়া পুঠিয়ায় আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৩২ মেট্রিক টন। গোদাগাড়ীতে ৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন। পবাতে ২ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন। বাঘায় ৯৫২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন। চারঘাটে ১ হাজার ৮৮৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন। মোহনপুরে ১৭৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩০৪ মেট্রিক টন। দুর্গাপুরে ৮১৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন। তানোরে ৩২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০৬ মেট্রিক টন। এছাড়া নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ২৬ হেক্টর জমিতে ১৭৪ মেট্রিক টন ও মতিহারে ১১ হেক্টর জমিতে ৮১ মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

চাষিরা বলছেন, এবার প্রতি মণ কাঁচা ভুট্টা ৯০০ টাকা এবং শুকনা ভুট্টা ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলনও ভালো হয়েছে।

বাঘা উপজেলার চাষি আবদুল মোতালেব বলেন, চরের মাটি বেলে যুক্ত। পানি ধরে রাখতে পারে না। ফসলের জমিতে পানি দিতে না পারলে ফসল ভালো হয় না। তবে ভুট্টার জমিতে খুব একটা সেচের প্রয়োজন হয় না। ধানের তুলনায় এ ফসল চাষ করাও অনেকটা সহজ। এ কারণেই আমি বছরে দু’বার ভুট্টার আবাদ করি। প্রতি বিঘার বিপরীতে তার খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে বীজ, সার, পানি, জমি প্রস্তুত, লাগানো, শ্রমিক মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। প্রতি বিঘায় ২০ মণ করে ফলন হয়েছে। দাম ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় তিনি খুশি।

বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের চাষি ইউসুফ আলী বলেন, প্রায় ৮ থেকে ৯ বছর আগে থেকে অল্প অল্প করে ভুট্টার আবাদ শুরু করি। লাভজনক হওয়ায় সময়ের ব্যবধানে চাষের জমির পরিধি বাড়িয়েছি। বাজারে ভুট্টার ভালো দাম পাওয়ায় খুশি তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গেল কয়েক বছর ধরেই ভুট্টা চাষ বাড়ছে। তাই চাষিরা যেন ভালো বীজ পান, সেটা কৃষি বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। ভুট্টার ফলন ও চাহিদা দুটিই ভালো। এ কারণে ফসলটির আবাদ দিন দিন বাড়ছে। আর ভালো বীজের কারণে ভালো উৎপাদনও হয়ে থাকে। স্বল্প সময়ে ভালো লাভ দেখেই চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। এ বছরও ভুট্টার বাজার ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনও হয়েছে ভালো। আমরা আশা করছি, আগামী বছর ভুট্টা চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।