ফুলের রাজধানী যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর পানিসারার উন্নত মানের দার্জিলিং কমলা চাষে সফল হয়েছেন ফুলচাষি শাহাজান আলী। চলতি বছর তার ৬২ শতাংশ সমতল জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলার ব্যাপক ফলন এসেছে। বাংলাদেশের বিরাজমান আবহাওয়ায় উন্নত জাতের এ কমলার আশাতীত ফলনে কৃষি অর্থনীতিতে বিপুল সম্ভাবনা দেখছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
ঝিকরগাছার গদখালীর পানিসারার মাঠে জারবেরা ফুলের শেটের পাশেই কৃষক শাহাজান আলীর এ কমলা বাগান। ২০১৯ সালে ইউটিউব দেখে চায়না কমলা চাষ পদ্ধতি জানতে পারেন ফুলচাষি শাহাজান। পরে তিনি পার্শ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার একটি খামার পরিদর্শন করেন। প্রথমে তিনি তার জারবেরা ফুলের খামারে পাশে সীমিত পরিসরে চায়না লেবুর চাষ শুরু করেন। এরপর তিনি বাইরে থেকে দার্জিলিং জাতের কমলা গাছের চারা এনে সেখানে গড়ে তোলেন কমলা বাগান। বর্তমান তার বাগানে প্রতিটি গাছেই শত শত দার্জিলিং কমলা ধরেছে। এসব কমলা কেনার জন্য পাইকার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই তার বাগানে ছুটে আসছেন।
শাহাজান আলী বলেন, ফুলচাষের পাশাপাশি ২০১৯ সালে শখ করে তিনি সীমিত পরিসরে চায়না কমলা লেবুর গাছ লাগান। এরপর থেকে তিনি ইচ্ছা করেন তার বাগানে দার্জিলিং কমলা লেবুর গাছ লাগাবেন। পরে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বাইরে থেকে চারা সংগ্রহ করে ৬২ শতাংশ জমিতে বাগান গড়ে তোলেন। প্রথম বছর ২০২২ সালেই তিনি গাছে ফলন পান এবং আড়াই লাখ টাকার বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, এ বছর তার কমলা গাছে প্রচুর পরিমাণ কমলা ধরেছে। প্রতিটি গাছই কমলার কারণে মাটিতে নুয়ে পড়ছে। সমতল ভূমিতে উন্নত জাতের দার্জিলিং কমলা হবে এটা তিনি কখনও কল্পনাও করতে পারেননি। এ বছর শাহাজান আলীর কমলা বাগানের দাম চার লাখ টাকা উঠবে বলে তিনি আশা করছেন।
কৃষক শাহাজান আলী আরও বলেন, দার্জিলিং কমলা চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ কম। গাছ লাগানোর পর সামান্য জৈব সার আর নিয়মিত সেচ দিলেই চলে। এতে কোনো ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করা লাগে না বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, তার বাগান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার স্ত্রী নূর জাহান ও স্থানীয় কৃষি বিভাগ সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করে আসছে।
শাহাজান আলীর স্ত্রী নূরজাহান বেগম জানান, তার স্বামীর পাশাপাশি তিনি নিজেও একজন ফুলচাষি। স্বামী প্রথমে ফুল চাষের পাশাপাশি কমলা চাষে ঝুঁকে পড়াকে বেশি পছন্দ করছিলেন না। কিন্তু এখন গাছের ফলন ও দাম দুইই পেয়ে তিনি বেশ খুশি। তিনি বলেন, স্বামীর পাশাপাশি তিনি নিজেও সার্বক্ষণিক দার্জিলিং কমলা বাগানের পরিচর্যা করেন। এতে বেশ তৃপ্তি পান বলে তিনি জানান।
শাহাজান আলীর এ কমলা বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি উদ্যোক্তারা ছুটে আসছেন তার বাগানে। বাগানে কথা হয় মাগুরা জেলার রাউতড়া গ্রামের নাসির অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি কৃষি প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার দেড়শ বিঘা জমিতে কুল, পেয়ারা, মাল্টা ও ড্রাগন বাগান আছে। খবর পেয়ে দার্জিলিং কমলা ক্ষেতটি দেখতে এসেছেন।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, করোনা পরিস্থিতির পর থেকে বাংলাদেশে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এসব চাহিদা পূরণে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ কমলা, মাল্টা জাতীয় ফল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরকার ‘নিরাপদ উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল উৎপাদন ও সংগ্রহোত্তর প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফল চাষের সম্প্রসারণ করছে। এরই আলোকে কৃষক শাহাজান আলীকে ২০১৯ সালে দার্জিলিং কমলার চারা সরবরাহ করা হয় কৃষি বিভাগ থেকে।