গাড়ল পালনে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখাছেন আব্দুল মান্নান

99

মেহেরপুরের গাংনীর জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান। পাঁচ বছর আগের কথা মনে পড়লে চোখে জল আসে তার। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করা বেশ দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল তার। অভাব হাঁ করে গিলে খাচ্ছিল। দিনমজুরি করে কি আর সংসার চলে স্বাচ্ছন্দ্যে? গ্রামের ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ানের পরামর্শে মান্নান বাড়ির

একটি এঁড়ে বিক্রি করে উন্নত জাতের পাঁচটি গাড়ল কেনেন। বছর গড়াতেই দুটি গাড়ল ৬টি বাচ্চা দেয়। আশার আলো দেখতে পান তিনি। পাঁচ বছর পর মান্নানের পালে রয়েছে ৩২টি গাড়ল। এখন আর কারও কাছে মান্নানকে হাত পাততে হয় না সংসারের খরচের টাকার জন্য। শুধু মান্নান নয়, তার মতো মেহেরপুরের অনেক শিক্ষিত যুবক চাকরির প্রত্যাশা না করে গাড়ল পালনে ঝুঁকেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, মেহেরপুর জেলায় ৫১১টি গাড়লের খামার রয়েছে। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বাড়ি বাড়ি গাড়ল পালন করা হচ্ছে। গাড়ল বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়। প্রতিবারে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা প্রসব করে মা গাড়ল। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি গাড়ল থেকে ৩৫-৫০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। দামও বেশি এবং খেতে সুস্বাদু। খাবার, আবাস ও পালন পদ্ধতি দেশীয় ছাগল ও ভেড়ার মতোই। প্রতিটি গাড়ল প্রতিবারে ১-৩টি বাচ্চা দেয়। প্রতিটি বাচ্চা ৩ থেকে ৫ হাজার এবং প্রাপ্তবয়স্ক ১০ হাজার থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

আমঝুপির গাড়ল পালনকারী কামরুল ইসলাম জানান, গাড়লের মাংসের পুষ্টিমান এবং স্বাদ ছাগলের মাংসের প্রায় অনুরূপ। এর মাংসে বিরক্তিকর গন্ধও নেই। এছাড়া গরুর সঙ্গে একই খামারে বা ঘরে ছাগল পালন করা যায় না কিন্তু অতি সামান্য খরচ ও সহজ পরিচর্যায় গরুর সঙ্গে ভেড়া পালন করা যায়। আলাদা উন্নত বাসস্থানের প্রয়োজন হয় না। গাড়ল পালনে প্রাথমিক খরচ তুলনামূলক অনেক কম। একই কথা জানান, বাঁশবাড়িয়ার গাড়ল পালনকারী আলামিন। তিনি আরও জানান, গাড়ল তাড়াতাড়ি বংশ বিস্তার করে। গাড়লের মলমূত্র জমির সার হিসেবে ব্যবহƒত হয়, জমির আগাছা খেয়ে উপকার করে, জলাশয়ের ঘাস চরে খেতে পারে এবং রোগ-ব্যাধি কম হয়।

মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, ভারতীয় উন্নত জাতের সঙ্গে স্থানীয় ভেড়ার শংকরায়নে একটি নতুন জাতের সৃষ্টি হয়েছে। যেটা গাড়ল নামে পরিচিত। গাড়ল পালনে খামারি ও সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকেই স্বাবলম্বী এবং অনেকেই বাড়ি গাড়ির মালিক হয়েছেন। এ জাত সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনীতিতে আরও সুবাতাস বয়ে যাবে।