সেখ জিয়াউর রহমান, গাইবান্ধা থেকে: আগে যেখানে অন্যের জমিতে কাজ করে ঠিকমতো তিন বেলা ভাতই জুটতো না, এখন সেখানে তিনি প্রায় কোটি টাকার মালিক।
অক্লান্ত পরিশ্রম করে সফল হওয়া এ ব্যক্তির নাম আবদুল গফুর শেখ। বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের সুলতানপুর বাড়াইপাড়া গ্রামে। তিনি নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করেন। ঘাস চাষেই বদলে দিয়েছে গরীব গফুরের জীবন।
আবদুল গফুরের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া আড়াই বিঘা জমির মধ্যে দেড় বিঘা জমিতে ফসল ফলিয়ে ছয় সদস্যের সংসার ঠিকমত চলতো না। ২০০৩ সালে তার জমি বিক্রি করে মেজ ছেলে ফারুককে বিদেশে পাঠানোর জন্য এক লোককে টাকা দিয়ে প্রতারিত হন। পরে অন্যের জমিতে কাজ করে প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা আয়ে তার সংসার চলতো না।
২০০৪ সালের প্রথম দিকে পলাশবাড়ির দুলু মিয়ার কাছ থেকে নেপিয়ার জাতের ঘাসের বহুমুখী ব্যবহারের কথা শুনে আবদুল গফুর উদ্বুদ্ধ হন ঘাস চাষে। এরপর তিনি নেপিয়ার ঘাসের চারা সংগ্রহ করে পাঁচ শতক জায়গায় লাগান। এর আগে সমিতি থেকে ৭ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি গাভী কিনেন।
এদিকে গাভীটি একটি বাচ্চা দেয়। ফলে গাভীর দুধ বাড়তে থাকে। আবার ঘাসও বিক্রি করে টাকা পান। হাতে বেশ টাকা আসতে শুরু করে তার। সেই টাকা দিয়ে জমি ইজরা নিয়ে ঘাস চাষ করেন। বর্তমানে তিনি কুড়ি বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। এরমধ্যে আট বিঘা নিজের কেনা ও বারো বিঘা ইজারা নেয়া। একবিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতিমাসে খরচ বাদে ঘাস বিক্রি করে মাসিক আয় ১ লাখ টাকারও বেশি। খড়ের ঘরের বদলে বর্তমানে ২০ শতক জমিতে আধাপাকা ঘর তৈরি করেছেন। তার খামারে বিভিন্ন উন্নত জাতের ২২টি গাভী আছে। এর মধ্যে ৮টি গাভী দুধ দিচ্ছে। সে দুধ বিক্রি করে দৈনিক ২ হাজার ২শ টাকা আয় হচ্ছে।
এছাড়া ঘাসের জমিতে পানি সেচের জন্য ২টি শ্যালোচালিত মেশিন আছে। এছাড়া হাঁস-মুরগি ও ছাগল রয়েছে তার। বাড়িতে বিদ্যুৎ ছাড়াও রয়েছে একটি সৌর বিদ্যুৎ, ২টি মোটরসাইকেল ও পাঁচটি ভ্যান। কর্মচারী রয়েছে তিন জন, তাদের প্রতিজনের মাসিক বেতন ৯ হাজার টাকা। তারা প্রতিদিন জমি থেকে ঘাস কেটে পলাশবাড়ি, ঢোলভাঙ্গা, ধাপেরহাট, মাঠেরহাট ও গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।
আবদুল গফুরের আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০০ জন কৃষক ৮০ থেকে ৯০ একর জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করছেন।
আবদুল গফুর বলেন, “আমার স্বপ্ন এ ঘাস চাষ করে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হওয়া, যাতে আরো অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ঘাস চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলাতে পারে।”
গাইবান্ধা জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, “জেলার মধ্যে বড় পরিসরে একমাত্র আবদুল গফুর বাণিজ্যিকভাবে এ ঘাস চাষ করছেন। এখন অনেকেই তাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে।