কোরবানির গরু কিনতে সতর্কতা অবলম্বন করুন

1180

untitled-61_76589

আসছে ঈদ-উল-আজহা, পবিত্র কোরবানির ঈদ। সারা বিশ্বের মোসলমানদের প্রিয় ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশে গবাদিপশু কোরবানি দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গবাদিপশু কোরবানি দেয়া হয়।

কোরবানি উপলক্ষে আমাদের দেশের গবাদিপশুর খামারি ভাইয়েরা বিভিন্নভাবে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ করে থাকেন। এর মধ্যে কিছু অসাধু খামারি এই সকল গবাদিপশু বিশেষ করে গরুতে বিভিন্ন গ্রোথ হরমোন, স্টেরয়েড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে মোটাতাজাকরণ করে থাকেন।

বিভিন্ন উন্নত দেশের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিরূপ প্রতিক্রিয়া জন্য পশু মোটাতাজাকরণের জন্য এইসব স্টেরয়েড নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও মোটাতাজাকরণের জন্য স্টেরয়েড হরমোন যেমন- Decason, Oradexon, Prednisolon, Betnenal, Cortan, Steron এবং আদম-৩৩ ভেটেরিনারি মেডিসিন নামে বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু এইসব আইটেম, যা সাধারণত গুরুতর রোগীদের জীবন রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়, সেইসব এখন গরু, ছাগল এবং অন্যান্য কোরবানির পশুর মধ্যে ইনজেকশন করা হচ্ছে বা খাওয়ানো হচ্ছে।
এই স্টেরয়েড বা হরমোন প্রাণীতে ব্যবহার না করার জন্য প্রাণী ফিড অ্যাক্ট-২০১০ অনুযায়ী দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গবাদিপশু পালনকারী কৃষকদের একাংশ অল্প দিনের মধ্যে কোরবানির পশু দ্রুত মোটাতাজাকরণের জন্য মানুষের ওষুধ যেমন dexamethasone, Periactin, Oradexon, Decason ইত্যাদি ট্যাবলেট ব্যবহার করছেন যাতে উৎসবের সময় গরু ব্যবসা থেকে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করা যায়।

এই সব ওষুধ খাওয়ানোর জন্য গবাদিপশুর কিডনি ও লিভার যথাযথভাবে কাজ করে না, ফলে পশুর শরীর হতে পানি বের হতে না পেরে শরীরে পানি জমতে শুরু করে। ফলে গরু মোটা দেখায়। প্রকৃতপক্ষে গরুর শরীরে কোন মাংস উৎপাদন হয় না।

এই অবৈজ্ঞানিক মোটাতাজাকরণ পদ্ধতিতে একটি পশুকে কোরবানির ঈদের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে অসাধু ব্যাপারীরা প্রতিটি গরুকে একত্রে দিনে ২০ থেকে ২৫টি পর্যন্ত ট্যাবলেট খাওয়ান। ট্যাবলেট খাওয়ানোর ফলে ধীরে ধীরে এটা কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গের ওপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি, প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, শরীরে পানি জমা হওয়ার কারণে কিছু দিনের মধ্যে গরু মোটা দেখায়।

অপরপক্ষে, গরু দ্রুত মোটাতাজাকরণ পদ্ধতিতে ওষুধ দেয়ার পর ২০-২৫ দিনের মধ্যে পশুর মৃত্যুও হতে পারে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে গরুকে ইউরিয়া, গুড় এবং খড় (UMS) নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে দৈনিক খাওয়ানো হলে গরুর শরীরে মাংস উৎপাদিত হয়ে গরু হৃষ্টপুষ্ট দেখায়।

স্টেরয়েড হরমোন ব্যবহার করা গরুর মাংস খেলে মানুষের কিডনি-লিভারসহ অন্যান্য সংবেদনশীল অঙ্গ নষ্ট হয়ে দ্রুত বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। স্টেরয়েড হরমোন অযৌক্তিক ব্যবহারে কারণে আক্রান্ত পশুর মাংস গ্রহণ করা হলে মানুষের শরীরে ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত পশুর মাংস গ্রহণ করলে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিবর্তন শিশু ও নারীর মধ্যে দেখা দেয়। শিশু খুব প্রাথমিক পর্যায়ে স্থূলতা লাভ করবে এবং তাদের রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের সঙ্গে অনেক রোগ বিকাশ লাভ করবে।

বাস্তবতা হচ্ছে মানুষ জ্ঞাতসারে এবং অজ্ঞাতসারে পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় অবৈজ্ঞানিকভাবে মোটাতাজাকরা গরু কোরবানি দিয়ে থাকে এবং মাংস খেয়ে থাকে, ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগ হতে আরোগ্য লাভের জন্য অনেক টাকা খরচ করে থাকে। কোরবানির গরু কেনা নিয়ে ভয়েও থাকেন অনেকে। তবে যদি ট্যাবলেট বা হরমোন পুশ করে মোটাতাজা করা গরু চেনার উপায় জানা থাকে তাহলে ভয়ের কোনো কারণ থাকে না। যদি পশুটি কৃত্রিমভাবে স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানোর ফলে বা ইনজেকশন দিয়ে মোটাতাজা করা হয়ে থাকে তাহলে-
– গরুটি হবে খুব শান্ত
– ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারবে না
– পশুর উরু অনেক মাংসল মনে হবে
– স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ালে গরু উগ্রভাব দেখাবে না, দুর্বল ভাব দেখা দিবে
-এ গরু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাই না করলে মারাও যেতে পারে, অথবা কৃত্রিমভাবে ফোলানো শরীর শুকিয়ে যেতে পারে।
– অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখাবে
– আঙুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে।

অতিরিক্ত হরমোন খাওয়ানো গরুর মাংস আগুনেও হরমোনমুক্ত হয় না। এমন গরুর মাংস খাওয়া খুবই বিপজ্জনক। সাধারনত দেখা যায় বড় সাইজের গরুগুলির মধ্যেই ইনজেকশন দিয়ে বা হরমোন অথবা ট্যাবলেট খাওয়ানোর মত ঘটনা ঘটে থাকে। তাই কোরবানিতে বড় গরু না কিনে মিডিয়াম সাইজের গরু কেনা যেতে পারে। তাই আতংকিত না হয়ে সতর্কতার সাথে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা জন্য কোরবানির গবাদিপশু ক্রয় করুন।

লেখক: ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ বহির্বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ফার্মগেট, ঢাকা।

বিষাক্ত ডিম নিয়ে ইউরোপে তোলপাড়

টেকসই জলাশয় ও মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করতে সমুদ্র বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন : মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী

নিরাপদ খাদ্য ও নীতিমালা কার্যকরের ওপর ডিসিসিআইয়ের আলোচনা সভা

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম