চুয়াডাঙ্গা থেকে: জেলায় আগাম অটোজাতের শিমের বাজার দর ভালো থাকায় শিম চাষিরা এবার খুব খুশি। এর মধ্যে শিম বেচা বিক্রি করে অনেক চাষি আর্থিক ভাবে বেশ লাভবান হয়েছেন। ফলে বদলে গেছে তাদের আর্থিক অবস্থা। তাই দীর্ঘ মেয়াদি ফসলের চাষাবাদের চাইতে শিম চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি অধিপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ১২শ হেক্টর জমিতে আগাম অটো জাতের শিম চাষ হয়েছে। চলতি বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পরও শিমের আবাদ করেছেন চাষিরা। গ্রামের মাঠে দিকে তাকালে দেখা যায় সবুজের আবরণে শিমের ক্ষেত। মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৪-৫ ফুট উচু বাঁশের মাচা তৈরি করে আবাদ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশিল অটো জাতের শিম।
কুনিয়াচাঁদপুর গ্রামের শিম চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, কয়েক বছর ধরে প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তিনি শিম চাষ করছেন। প্রথম বছরে চাষটি ঠিকমত বুঝতে না পারায় তার লাভ ভালো হয়নি। পরের বছর থেকে শিম চাষে তার আয় হচ্ছে। তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরা আগ্রহী হয় এবং তারা শিম চাষ করতে শুরু করে। প্রথমে অল্প অল্প জমিতে শিম চাষ করতো তারা। লাভ বেশি হওয়ায় শিম চাষ করছেন বেশি। প্রতিবছর শিম বিক্রি করে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন।
তিরি আরো জানান, এবার তিনি আশা করছেন প্রতি বিঘার শিম এক লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।
শিম চাষি মিনু মিয়া, এনাফ বিশ্বাস, আবু হানিফ, বোরহান, আমিরুল, মালেক মেম্বর, ফারুক, চান্দু, কাশেম, মালেক বিশ্বাস, মনির হোসেন, নজরুল ইসলাম, শুকুর আলী জানান, শিম চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলে গেছে।
তারা জানান, শিম চাষ করার জন্য তারা হাতে কলমে কোন প্রশিক্ষণ পাননি। নিজ উদ্যোগে এবং অন্যের দেখা দেখি করে চাষ করছেন।
বীজ লাগানোর পর থেকে এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করতে বীজ, সার, বাঁশ, তার, শ্রমিক, সেচ ধরে খরচ হয় ১৬/১৭ হাজার টাকা। শিমের গাছ মাচায় উঠে গেলে ফুল এবং ফল ধরার সময় পোকা দমন এবং পচন রোধে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ স্প্রে করতে হয়। ৫০-৫৫ দিনের মাথায় শিম ধরা শুরু করে।
সদর উপজেলার শিম চাষি আয়নাল জানান, এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত শিম বাজারজাত করতে অন্য কোন স্থানে যেতে হয় না। রাজধানী শহর ঢাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে তাদের কাছ থেকে শিম কিনে নিয়ে যায়। এছাড়াও কোন কোন কৃষক শিম নিজে তুলে পার্শ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করে থাকে। এবছর শিমের বাজার বেশ ভাল। প্রথম দিকে কেজি প্রতি বাজার দর ১শ থেকে ১১০ টাকা হলেও বর্তমানে শিম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দাম থাকলে শিম চাষিরা আর্থিক দিক থেকে বেশ লাভবান হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর জানান, এলাকার জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপোযোগী। ভুট্টার পরপরই চাষিরা শিমসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে থাকে। সবজি চাষের ব্যাপারে চাষিরা বেশ অভিজ্ঞ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে এলাকার চাষিদের উন্নত কৃষি প্রযুক্তির আওতায় আনতে পারলে শিমসহ সবজি চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এমএস