মো. জাহিদুল রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকে: প্রকৃতির বিস্ময়কর সৃষ্টি রেশম একটি অর্থকারী পণ্য। রেশমের মিহি সুতায় তৈরি হয় মিহি সুন্দর রেশম কাপড়। রেশম সুতা দিয়ে তৈরি ঢাকার মসলিন কাপড়ের একদা বিশ্বখ্যাতি ছিল। যুগে যুগে সৌন্দর্য প্রিয় রুচিশীল অর্থবান মানুষ বিষেশ করে নারীদের রেশম কাপড়ের প্রতি আকৃষ্টতা বেশি।
পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-৭১সালে) রেশমকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় নেয়া হয় এবং রাজশাহীতে রেশম সুতা ও রেশম কাপড় তৈরির সিল্ক কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি অর্থায়নে। এ প্রতিষ্ঠান রেশম বস্ত্র তৈরিতে এখনো নিজস্ব ধারা ও সত্তা বজায় রেখেছে।
বর্তমানে রাজশাহী সিল্ক কাপড় বেশ নামকরা। রেশম চাষ সম্প্রসারণের লক্ষে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নির্দেশে গঠিত হয় রেশম বোর্ড। রেশম চাষের প্রসার ও রেশম সুতা উৎপাদনের জন্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে এই বোর্ড। সেই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের শাখা অফিস খোলা হয় আমাদের ঝিনাইদহে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার অন্তর্গত হলিধানী একটি পুরাতন গ্রাম। এ গ্রামের নামানুসারে ইউনিয়ন পরিষদের নাম হয়েছে হলিধানী ইউনিয়ন। ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা পাকা সড়ক হলিধানী বাজারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। ঝিনাইদহ শহর থেকে পশ্চিম দিকে হলিধানী বাজারের দূরুত্ব প্রায় ১০ কি.মি.। এ হলিধানী বাজরের পশ্চিমে পাকা রাস্তার দক্ষিণে এক মনোরম প্রকৃতির পরিবেশে ‘হলিধানী’ রেশম চাষ নার্সারি অবস্থিত। নার্সরির মোট জমির পরিমাণ ৭২ বিঘা।
তন্মধ্যে প্রায় ৫৫ বিঘায় তুঁত গাছের চাষ করা হয়। এই তুঁত গাছের পাতা থেকেই রেশম ডিম ও পোকা উৎপাদন হয়। এ নার্সারিতে রয়েছে রেশম পোকা প্রজনন কেন্দ্র অতিউন্নত জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত মানের রেশম ডিম উৎপাদন করা হয় এই নার্সারিতে এবং তা আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ার সংরক্ষণ করা হয়। ডিম ফুটিয়ে রেশম পোকা উৎপাদন করে উন্নত ও আধুনিক পদ্ধতিতে এখানে উৎপাদিত হচ্ছে অসংখ্য রেশম গুটি।
প্রতি বছর ৪ বার চৈত্র, জৈষ্ঠ, ভাদ্র ও অগ্রহায়ণ মাসে রেশম গুটি উৎপাদন হয়। রেশম গুটি থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ার রেশম সুতা তৈরি করা হয় এই নার্সারির কারখানায়।
১২ কেজি রেশম গুটি থেকে তৈরি হয় ১ কেজি মিহি সিল্ক সুতা। সিল্ক কাপড় তৈরির জন্যে এখানকার সুতা বিক্রয় করা হয় রাজশাহী সিল্ক কারখানাই। এ নার্সারি থেকে প্রতি বছর প্রায় ৭/৮ লাখ টাকার রোগমুক্ত রেশম ডিম সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। হলিধানী নার্সারিতে এ কাজের জন্য প্রায় ২০০ নারী ও পুরুষ প্রতিদিন কর্মরত রয়েছে। মানসম্মত রেশম সুতা উৎপাদন সম্ভব যদি আবহওয়া অনুকুলে থাকে।
ঝিনাইদহের আবহওয়া তুঁতগাছ ও রেশম পোকার ডিম উৎপাদনের জন্য উপযোগী। সে জন্য ইহা একটি লাভজনক রেশম উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তুঁত চারা এনে রোপিত হয় এখানে। আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় মানসম্মত তুঁতগাছ উৎপাদিত হচ্ছে এ কেন্দ্রে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন