জয়পুরহাটে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির কার্যক্রম শুরু

306

2017-11-25_4_126649

জয়পুরহাট: রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমাতে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট (আইএফএমসি) প্রকল্পের আওতায় জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলাতেই এ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রকে জানায়, রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাই মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দাদড়া, চকমোহন, হাতিগাড়া, আমদই, চিরলা এবং কোমরগ্রামের ছয়জন কৃষক-কৃষাণীর বাড়িতে প্রথমে ভার্মি কম্পোস্ট সার বা কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করা হয়।

এতে সফলতা পাওয়ায় সদর উপজেলার পৌরসভাসহ ৯ ইউনিয়নের ২২৫টি গ্রামে ২২৫ জন কৃষক-কৃষাণির বাড়িতে এবং প্রতিষ্ঠানে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্র আরো জানায়, পানি, বায়ু, খনিজ পদার্থ এবং জৈব পদার্থ এ ৪টি উপাদান নিয়ে মাটি গঠিত, তন্মধ্যে জৈব পদার্থ হলো মাটির প্রাণ, যা বাংলাদেশের মাটিতে ৫% এর মধ্যে ১% থেকে সর্বোচ্চ ১.৫% আছে।

একদিকে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, লবণাক্ততা, ভূমি বন্ধুরতাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের সকল অঞ্চলে ২-৩টি ফসল উৎপাদন হয় না, সেখানে জয়পুরহাট সদর উপজেলার মাটিতে ৩/৪টি ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। ১৬ কোটি মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে এখানকার কৃষকেরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে উপজেলা কৃষি অফিস।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে একটি জমিও পতিত না রেখে এখানকার কৃষকেরা বছরে ৩/৪টি ফসল উৎপাদন করছেন। ফসল উৎপাদনে জমির মাটির ব্যবহার যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, রাসায়নিক সারের ব্যবহারও সেই পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে জৈব পদার্থ বা জৈব সার ব্যবহারের হার আশংকাজনক হারে হ্রাস পেলে কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাবে না। ঘরবাড়ি তৈরি, শিল্পায়ন, নগরায়ণসহ বিভিন্ন কারণে জমির পরিমাণ প্রতিবছর ০.৭২%-১% হারে কমে গেলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। আগামী প্রজন্মের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এবং মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাটিতে যত বেশি জৈব পদার্থ বা জৈব সার ব্যবহার বৃদ্ধি করা যাবে, সেই মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়ে ফসল উৎপাদনে বাম্পার ফলণেরসমূহ সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়মিত কর্মকান্ডের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ, দলীয় সভা, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার হিসেবে খামারজাত সার, কম্পোস্ট, কুইক কম্পোস্ট এবং ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরি বিষয়ে কৃষক-কৃষাণিদের নিয়মিতভাবে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। জয়পুরহাটের ধান, সবজি, আলু, কলা, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদনে এবং ছাদ কৃষিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের চাহিদা পূরণে কেঁচো সারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারকে ৯.৫০ লাখ মে. টন রাসায়নিক সার আমদানি করতে হয়েছে, এতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ বিদেশে চলে যায়, যদি এদেশের প্রতিটি কৃষক-কৃষাণি প্রতিটি বাড়িতে একটি করে জৈব সারের ফ্যাক্টরি বা হাউস তৈরি করে জৈব সার ব্যবহার করেন, তাহলে জনগণের অর্থ সার আমদানীতে কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়ে এ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সেই অর্থ কাজে লাগানো যাবে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার উদ্যোগকে কাজে লাগাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলাম সাজু জানান, উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় গত বছরের মতো চলতি বছরেও এডিপির অর্থ থেকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সকল জনপ্রতিনিধি, বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষক-কৃষাণিদের মাঝে কেঁচো সার তৈরির আরো উপকরণ বিতরণ করা হবে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিজন কৃষক-কৃষাণীকে কেঁচো সার তৈরির ২টি রিং এবং কেঁচো প্রদান করা হচ্ছে।

দাদড়া আইএফএম কৃষক মাঠ স্কুলের সদস্য আ. মজিদ ও তার স্ত্রী সালেমা খাতুন জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া রিং ও কেঁচো ৩ মাসের মধ্যে জৈব সার উৎপাদন করে জমিতে ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে শাক-সবজি, ফসল উৎপাদন করছি, পাশাপাশি অন্যদের কাছে ১০ টাকা কেজি দরে কেঁচো সার বিক্রি করে সংসারে আয়ও করতে পারছি।বিএসএস

পোল্ট্রি কনসালট্যান্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের “Hubbard Technical Seminar” অনুষ্ঠিত

৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভে সিভিএএসবির আনন্দ শোভাযাত্রা

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন