আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: কাক ডাকা ঘুম ঘুম প্রহর, চারদিকের অন্ধকার তখনো কাটে না। তার ওপর ঘন কুয়াশার চাদরে প্রতিদিন শুরু হয় কানন বালা, শেফালি আর সবিতা রানীসহ শতশত নারীর দিনকাল। শীতের এই সময়টা দুপুরের মিষ্টি রোদে যখন লাউ, শালগম, টমেটো, সিম, ফুলকপি বাঁধাকপি আর লাউয়ের ডগা কান্দির ক্ষেতে হেসে কুটিকুটি তখন নারীদের এ সংগ্রাম যেন পূর্ণতা পায়।
ঝালকাঠি সদর উপজেলায় প্রায় চার হাজার পরিবার শীতকালীন শাকসবজি চাষ করে জীবিকা চালায়। এসব পরিবারের নারীরাই মূলত এ মৌসুমের প্রধান কৃষক। আর বাড়ির পুরুষরা সার-কীটনাশক দিয়ে ফসল গোছানো ও বাজারে বিক্রি করেন। নারীরা ক্ষেতে পানি দেয়া, চারা বোনা, আগাছা পরিষ্কার, ফসল তোলাসহ সার্বিক কাজে ব্যস্ত থাকেন সকাল-সন্ধ্যা। তার মধ্যেই আবার সংসারের রান্না ও ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করতে হয় তাদের। স্থানীয় ভাষায়, শীতের এই লতাকৃষির সময়ে গ্রামগুলোর নারীদের গাধার খাটুটি খাটতে হয়। আর তার বিনিময়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, আলু, লাউ, সিমলা-বরবটি, শালগমসহ নানা প্রকার শাকসবজি ফলে মৌসুমজুড়ে।
জেলা সদরের নবগ্রাম, গাভারামচন্দ্রপুর, পোনাবালিয়া, বাসণ্ডা ও কীর্তিপাশা ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩৬টি গ্রামে কান্দি বা সজ্জন পদ্ধতির শাকসবজি চাষাবাদ জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকা ও বরিশালে রপ্তানি করা হয়। গ্রাম ঘুরে ঘুরে পাইকাররা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন বড় বাজারে। আবার অল্প পরিমাণে হলে বাড়ির পুরুষরা তা স্থানীয় হাটগুলোতে বিক্রি করতে নিয়ে যান। শীতের এই সময়টা কৃষক পরিবারে বেশ স্বচ্ছলতাও থাকে। তবে গত নভেম্বের মাসে পরপর দুবার বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের দারুণ ক্ষতি হয়েছে। তবু সেই দুর্যোগ কাটিয়ে একটু দেরিতেই ঝালকাঠির গ্রামে গ্রামে কান্দিতে কান্দিতে নারীর স্নেহ ভালোবাসার পরশে বেড়ে উঠছে শীতের লতাকৃষি। কান্দিতে সবজির পাশাপাশি আখ, আমড়া, পেঁপে ও পেয়ারা চাষ করে বছরের বাকি সময়টা চলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা।
শতদশকাঠি গ্রামের কৃষক সুখরঞ্জন বড়ালের স্ত্রী কানন বালা বড়াল বলেন, “আমাদের ধানা (ধানের জমি) জমি নাই। শ্রাবণ-ভাদ্রে পেয়ারা-আমড়া আর শীতকালে লতাকৃষিতেই সংসার চলে। জলবৃষ্টি না হলে শীতের আয় দিয়ে বছরের অর্ধেকের বেশি সময় চলে যায় আমাদের। সংসারের সুখের জন্য ঘরে বাইরে আমরা (নারীরা) কাজ করি।’
ভীমরুলি গ্রামের বয়োজেষ্ঠ্য সবিতা রানী হালদারের সঙ্গে দেখা হয় শেষ বিকেলে। তখন শালগম চাষের পরিচর্যা আর সঙ্গে কাঁচা মরিচের চারা লাগাচ্ছিলেন তিনি।
সবিতা বলেন, “এক সময় গ্রামগুলোতে নারীরা কোলাকাতরে (কান্দি বা ক্ষেতে) এত কাজ করতো না। তখন পেয়ারা, নারকেল, সুপারি আর সামান্য খোড়াকির (নিজেদের খাওয়ার জন্য) ধান হতো। তবে ওই সময় প্রায় ঘরেই অভাব ছিল। কিন্তু এখন গ্রামগুলোর বউরা অনেকেই কোলায় কাজ করে। প্রায় ১২ মাস এখন গ্রামগুলোতে সব ধরনের শাকসবজির চাষ হয়। ধান চাষ একেবারেই উঠে গেছে। গ্রামগুলোতে এখন চরম অভাবী পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ আবু বকর সিদ্দিক জানান, কৃষিপ্রধান গ্রামগুলোতে প্রণোদনা ও পরামর্শসহ নানাভাবে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করে আসছে। তবে কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ মজবুত করেছে গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থা।
ঝালকাঠির ৩৬টি গ্রামে প্রায় চার হাজার নারী এ মৌসুমে ব্যস্ত সময় পার করছেন লতাকৃষির কাজে। আর বিনিময়ে সংসারে স্বচ্ছলতাও থাকে পৌষ, মাঘ আর ফাল্গুনে। আসলে হাতে এ সময় পয়সা থাকায় নানা পার্বণের নামে গ্রামবাসীরা মেতে থাকেন নানা উৎসব আয়োজনে। প্রায় শতবছর ধরে শুরু হওয়া এ চাষাবাদ পদ্ধতি বর্তমানে আরো আধুনিক হয়েছে। এক সময় এই গ্রামগুলোতে ধান চাষ হতো। কিন্তু এখন জমিগুলো বেশিরভাগই নালা কেটে সজ্জন পদ্ধতিতে সাজানো হয়েছে। তাই ধানের চাষ করা হয় না বললেই চলে। পেয়ারা, আমড়ার সঙ্গে প্রায় ১২ মাসই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফল চাষ হয়। শীতকালের লতাকৃষির ওপর অনেকটা নির্ভর এখানকার কৃষিজীবীরা। আর ঝালকাঠির এ শীতের কৃষি বিপ্লবের গল্পে নারীরা এখানে নায়িকা নয়, নায়কের ভূমিকায়। সূত্র: নিউজবাংলাদেশ.কম
- চট্টগ্রামে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে ক্যাব’র অ্যাডভোকেসি সভা
- লিডবেটার গলফ একাডেমির আয়োজনে ‘কিডস গলফ টুর্নামেন্ট’ অনুষ্ঠিত
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন