টাঙ্গাইল থেকে: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ঘাটাইল এস ই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক শামছুল আলম। কৃষি বিষয়ক পাঠদানে বিদ্যালয়ে তিনি যেমন সফল তেমনি সফল কৃষি কাজেও।
জন্মস্থান উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে রসুলপুর গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষ শুরু করেছেন এই শিক্ষক। তিনি বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন। এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন ৭ একর জমির উপর প্রায় ৪ হাজার লটকনসহ দেশি-বিদেশি ৫০ জাতের ফলদ গাছ লাগিয়ে।
শামছুল আলম একজন শিক্ষানুরাগী হলেও কৃষি কাজের প্রতি রয়েছে তার প্রবল আগ্রহ ও অদম্য প্রচেষ্টা। নিজ গ্রামে এক একর পাঁচ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কৃষি শিক্ষক হওয়ার সুবাধে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি হাতেকলমে শিক্ষাদানের জন্য শুরুতে একটি ফলের বাগান করেন।
শখ করে ছোট একটি বাগান করেন আর এই ছোট বাগান থেকেই মনে প্রবল আগ্রহ দেখা দেয় বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষ করা। তিনি স্বপ্ন দেখেন শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় জনবল কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে কীভাবে কেমিক্যালমুক্ত ফলের চাষ করে একজন সফল চাষি হওয়া যায়। তাই তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানের জন্য প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নিজ হাতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গড়ে তোলেন ৭ একর জমির উপর দেশি- বিদেশি প্রায় ৫০ প্রজাতির ফলদ বৃক্ষের বিশাল বাগান। এই ফলদ বৃক্ষের মধ্যে ৪ হাজার লটকনের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতের ৯০টি আম গাছ, ৬০টি সৌদী খেজুর, মালটা ১৬০টি, কমলা লেবু ৩০টি, ৪০টি বাতাবি লেবুসহ প্রায় ৭ হাজার গাছ। মূলত লটকন, আম, সৌদি খেঁজুর ও মালটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করাই তার মুখ্য উদ্দেশ্য।
শামছুল আলম জানান, ফলন ভালো হলে এ বাগান থেকে প্রতি বছর ৫/৭ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, তিনি বাড়ির প্রবেশদ্বারকে সুসজ্জিত করেছেন পামওয়েলের গাছ দ্বারা। বাড়ির সামনে একটু এগুলেই দেখা যায় সবুজে সমারোহ একটি বিশাল বাগান। এ বাগানটিতে রয়েছে লটকনসহ প্রায় ৫০ জাতের দেশি-বিদেশি চেনা-অচেনা হরেক রকমের ফলের গাছ। দেশি ফলের মধ্যে কমলা, মাল্টা, লটকন, আতা, বাতাবি লেবু, আমড়া, আম, জাম, বারোমাসি কাঁঠাল, ডালিম, বাউকুল, তাল, বেল, আমলকি, কাঠলিচু, গাব, মিষ্টিগাব, চালতা, পিচফল, জামান ফল, চেরিফল, হেমফল, কাউফল, ছফেদা, অরবরই, কলা, আনারস, জলপাই, করমচা, পেঁপে, জামরুল, কামরাঙ্গা, পেয়ারা, নারিকেলসহ আরো অন্যান্য ফলের গাছ।
বিদেশি ফলের মধ্যে রয়েছে- সৌদী খেজুর, ফোর কেজি আম (যা সংগ্রহ করা হয়েছে ব্রুনাই থেকে), ড্রাগন ফল, রাম ভুটান, প্লামফল, আলুবুখারা, ডুরিয়ান (যা সংগ্রহ করা হয়েছে মালেয়েশিয়া থেকে), কিউজাই এবং ব্যানেনা ম্যাংগো (যা সংগ্রহ করা হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে)।
এ ছাড়াও তার বাগানে রয়েছে সেগুন, মেহগিনি, আকাশমনি, লম্বু, গর্জন, আগর, পলাশ, জারুল, তুলশি, শতমূলি, কালোমেঘ, অ্যালোভেরা এবং পান, সুপারি, তেজপাতাসহ বিভিন্ন রকমের বাহারি গাছ।
গাছগুলো সংগ্রহের ব্যাপারে শামছুল আলম জানান, আমার বাগানে নেই, এমন ফল গাছের নাম শোনলেই তা সংগ্রহের প্রবল ইচ্ছা জাগে এবং যে কোন উপায়ে ঐ ফল গাছ সংগ্রহের চেষ্টা করি। তিনি জানান, ৬ বছর আগে ফলের এ গাছগুলো লাগিয়েছি। গত বছর সামান্য পরিমাণ ফল পেয়েছি, এ মৌসুমে ভালো ফলনের আশা করছি।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তার এই বাগান করার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, কৃষিবিষয়ক শিক্ষক হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কৃষি বিষয়ে শিক্ষাদান করতে গিয়ে কৃষির প্রতি প্রবল আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এ আগ্রহ থেকেই মূলত এ বাগান শুরু করি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বিশ্বাস বলেন, বাগানটিতে আমি কয়েকবার ঘুরে দেখিছি। বাগানটি খুবই চমৎকার। বাণিজ্যিকভাবে বাগানটি করে তিনি যাতে লাভবান হন এ জন্য বিভিন্ন সময় তাকে সহযোগিতাসহ পরামর্শ দিয়ে আসছি। এনডি।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন