পোশাক, ব্যাংক, আইটির পর এবার আধুনিক গরুর খামার

359

লাবিব গ্রুপের অধীনে পোশাকশিল্প, ব্যাংকিং, আইটি, মুঠোফোন, পোলট্রি, কৃষি, মৎস্যসহ ২০টির মতো কোম্পানি রয়েছে। এতে সর্বশেষ সংযোজন হলো ‘আলমগীর র​্যাঞ্চ লিমিটেড’ নামের গরুর খামার। ইতিমধ্যে দেশের চারটি এলাকায় তারা আধুনিক খামার গড়ে তুলেছে।

তৈরি পোশাকশিল্প, ব্যাংকিং, তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ও মুঠোফোনের ব্যবসায় আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় নেমেছেন নতুন ব্যবসায়। দেশের তিনটি এলাকায় ইতিমধ্যে গড়ে তুলেছেন চারটি আধুনিক গরুর খামার। এবারের পবিত্র ঈদুল আজহায় প্রথমবারের মতো এসব খামারের গরু বিক্রি করেছেন। বিক্রিতে বেশ সন্তুষ্ট হয়ে আগামী বছরের কোরবানির ঈদে ভালো মানের গরু ওঠানোর প্রস্তুতি এখনই নিতে শুরু করেছেন।

বলা হচ্ছে লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীরের ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা। বর্তমানে তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি। রপ্তানি ও বাণিজ্য খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হয়ে আসছেন তিনি। তাঁর লাবিব গ্রুপের অধীনে এখন পোশাকশিল্প, ব্যাংকিং, আইটি, মোবাইল ফোন, পোলট্রি, কৃষি, মৎস্যসহ ২০টির মতো কোম্পানি রয়েছে। এতে সর্বশেষ সংযোজন হলো ‘আলমগীর র​্যাঞ্চ লিমিটেড’ নামের গরুর খামার।

সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে সালাউদ্দিন আলমগীর জানান, করোনা মহামারির মধ্যেই আধুনিক গরুর খামার করা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। সে অনুযায়ী রংপুরের পীরগঞ্জে ৮০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন গরুর খামার, যেটির কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। পাশাপাশি ময়মনসিংহের ভালুকায় ২০০ বিঘা ও টাঙ্গাইলের সখীপুরে (দুটি) ১৮০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন আরও তিনটি খামার। এসব খামারে এখন এক হাজারের মতো গরু রয়েছে।

আলমগীর র​্যাঞ্চ দেশের চারটি এলাকায় নিজস্ব জমিতে গরুর খামার করতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এত দিন এসব জমি অনেকটা অব্যবহৃতই ছিল। সালাউদ্দিন আলমগীর বলেন, স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থান এবং দেশে আমিষের ঘাটতি পূরণে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে অব্যবহৃত জমিতে খামার করা হয়েছে।

সালাউদ্দিন আলমগীর বলেন, ২০১৫ সালে ভারত থেকে যখন গরু আমদানি বন্ধ হয়ে যায়, তখন পরবর্তী কোরবানির ঈদে কীভাবে গরুর চাহিদা মিটবে, তা নিয়ে দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। হঠাৎ গরুর মাংসের দামও বেড়ে যায়। গরু ও গরুর মাংসের সংকট কাটাতে সারা দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে খামার করা শুরু হয়। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ এখন গরু-ছাগল উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ভারত থেকে না এলেও দেশে উৎপাদিত গরু-ছাগল দিয়েই এখন চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় অনেকেই গরুর খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন। একই চিন্তা থেকে আলমগীর র​্যাঞ্চেরও যাত্রা শুরু হয়।

গরুর খামারে সফলতা অর্জন সম্পর্কে সালাউদ্দিন আলমগীর বলেন, এ ক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে নজর দিতে হয়। যেমন ভালো জাতের গরু নির্বাচন, কৃত্রিম খাবারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাবার নিশ্চিতকরণ, দক্ষ জনবল ও গরু বাজারজাতকরণ। আলমগীর র​্যাঞ্চ এসব বিষয়ে খুব জোর দিয়ে থাকে। তিনি জানান, তাঁরা প্রথমেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভালো জাতের গরু বাছাই করে নিয়ে আসেন। এরপর সব ধরনের কৃত্রিম খাবার, অনিরাপদ ওষুধ ও হরমোন ব্যবহার না করে গরুগুলোকে ভেজালমুক্ত, পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার খাওয়ানো হয়। অনেক খামারে গরুকে সুস্থ ও সবল দেখানোর জন্য কৃত্রিম খাবার খাওয়ানো হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আলমগীর র​্যাঞ্চ তাদের নিজস্ব চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি গরুকে টিএমআর পদ্ধতিতে খাবার দিয়ে থাকে। নিজেদের তৈরি সাইলেজ (একধরনের সবুজ পাতাযুক্ত ঘাস) ও দানাদার খাবার দেওয়া হয়। এই ঘাসের আবাদ করা হয় নিজস্ব জমিতে।

জানা গেছে, আলমগীর র​্যাঞ্চ গত ঈদুল আজহার সময় ঢাকার আশপাশে নিজস্ব চারটি সেলস সেন্টার বা বিক্রয়কেন্দ্রে গরু বিক্রি করেছে। রাজধানীর বছিলা ও মোহাম্মদপুর, গাজীপুরের বোর্ড বাজার ও গাজীপুর সদরে সেলস সেন্টারগুলো স্থাপন করা হয়।

দেশে গরুর ব্যবসাকে সুরক্ষা দিতে হিমায়িত মাংস আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার দাবি জানান আলমগীর র​্যাঞ্চের কর্ণধার। তিনি চান, দেশে ষাঁড় আমদানি নিষিদ্ধ হোক। তবে দেশে তরল দুধের চাহিদা মোটাতে গাভি আমদানির সুযোগ বহাল থাকতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সালাউদ্দিন আলমগীর প্রথম আলোকে জানান, দুই হাজার ষাঁড়ের উন্মুক্ত খামার করা এবং সম্পূর্ণ অটো মেশিনে পোলট্রি খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যতে বিদেশে হালাল মাংস রপ্তানির পরিকল্পনা আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৩ আগস্ট ২০২১