আয় বাড়াতে নারকেল বা সুপারি বাগানে চাষ করুন গোলমরিচ, যেভাবে করবেন

964

অর্থকরী ফসল হিসাবে গোলমরিচ অনেক পরিচিত। গোলমরিচের ইংরেজি নাম Black pepper এর Pepper শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ভাষার পিপালি” শব্দ থেকে যার অর্থ দীর্ঘ মরিচ। গোলমরিচ, (Piper nigrum Linn) Piperaceae গোত্রের একটি বহুবর্ষজীবী লতাজাতীয় (climbing/branching vine) উদ্ভিদ যার ফল berry হিসেবে পরিচিত। এটি Monoecious জাতীয় উদ্ভিদ তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে আলাদাভাবে পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল দেখা যায়।

পশ্চিমবঙ্গে যেখানে নারকেল ও সুপারি বাগান আছে সেখানে গোলমরিচের চাষ সহজেই করা যায়। এই মশলা ফসলটি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করে কৃষকরা আয় বাড়াতে পারেন।

পুষ্টিমূল্য: গোল মরিচে আমিষ, চর্বি এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও লৌহ থাকে।

ভেষজগুণ:

হজমে সহায়তা করে,
স্নায়ু শক্তি বাড়ায়,

দাঁতের ব্যাথা কমানোতে সহায়তা করে,
মাংসপেশী ও হাড়ের জোড়ায় ব্যাথা উপশম করে,

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ব্যবহার: মশলা হিসেবে গোলমরিচের ব্যবহার রয়েছে।

উপযুক্ত মাটি ও জমি: পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় ও আর্দ্রতা বেশি এমন এলাকায় গোলমরিচ জন্মে। এ ফসল ১০-৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। পি এইচ ৪.৫ – ৬.০ পর্যন্ত এ ফসল ফলানো যায়। পাহাড়ি এলাকার মাটি এই ফসল চাষের জন্য খুব উপযোগী।

জাত পরিচিতি: স্থানীয় জাত।

চারা তৈরি: গোল মরিচে ৩ ধরনের লতা/ কান্ড দেখা যায়-

প্রধান কান্ড যার পর্বমধ্য বড় রানার ডগা (সুট) ও ফল ধারণকারী পার্শ্বীয় শাখা। রানার ডগা হতে কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হয়। শীর্ষ ডগাও ব্যবহার করা যায়।

ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে ২-৩ টি পর্বসন্ধি (গিট) যুক্ত কান্ড কাটিং হিসেবে নার্সারীতে বা পলি ব্যাগে লাগানো হয়। পলি ব্যাগ উর্বর মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। কাটিং –এ ছায়ার ব্যবস্থা রাখা হয় ও প্রয়োজনে সেচ দিতে হয়। মে-জুন মাসে কাটিং লাগানোর উপযোগী হয়।

চারা লাগানো: গোল মরিচ ঠেস গাছের ছায়ায় লাগাতে হয়। ঠেস গাছ আগে থেকে ২.৫ মি. দূরত্বে লাগিয়ে গোল মরিচের কাটিং লাগানো হয়। ২-৩ টি কাটিং এক গর্তে লাগানো হয়। ঠেস গাছ হিসাবে সুপারী গাছ ব্যবহার করা যায়।

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষিতে নারকেল ও সুপারি গাছে গোলমরিচ গাছ তুলে দিলে বিঘাপ্রতি বাগিচায় ২০০০ – ৩০০০ টাকা বেশী রোজগারের সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে নারকেল / সুপারির একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অবধি গোলমরিচের লতা বাড়তে দিতে হবে যাতে পরিচর্যার সুবিধা হয় আর এরকমভাবে চাষে সুপারি/ নারকেলের সারেই মরিচেরও সার ব্যবস্থা চলবে, অনেকটাই প্রয়োজনে মরিচের গোঁড়ায় আলাদা ভাবে বা গাছে জলে গোলা সার দিলেই হবে।

সার ব্যাবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১১০ গ্রাম এস এস পি ও ৪৫০ গ্রাম পটাশ দিতে হয়। তবে এ পরিমাণ সার তৃতীয় বছর হতে দিতে হবে। এ পরিমাণের ১/৩ ভাগ ১ম বছর এবং ২/৩ ভাগ দ্বিতীয় বছরে দিতে হবে। সার সাধারণত: বছরে দুবারে দিতে হয়। একবার মে-জুন মাসে ও পরের বার আগষ্ট- সেপ্টেম্বর মাসে দিতে হয়। এছাড়া প্রতি বছর প্রতি গর্তে মে-জুনমাসে ১০ কেজি পচা গোবর ও প্রতি ১ বছর অন্তর-অন্তর প্রতি গর্তে ৬০০ গ্রাম চুন দিতে হবে।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: আগাছা দেখা দিলে পরিষ্কার করতে হবে ও মাটির রসের অভাব হলে জল সেচ দিতে হবে। ডগা বাড়তে থাকলে ঠেস গাছের সাথে বেঁধে দিতে হবে।

তথ্য সূত্র: শ্রী তপন কুমার মাইতি ও ড: শুভদীপ নাথ

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৭জুন২০