আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ থেকে: কৃষকের স্বপ্ন হচ্ছে তার রোপন করা ফসলের ভালো ফলন ঘরে তোলা। আর সেই সবুজ স্বপ্নকে জমির বুকে রোপন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর কৃষকরা।
নওগাঁ জেলার খাদ্যশস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত আত্রাই উপজেলা। এই উপজেলার কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলার পর বর্তমানে প্রধান ফসল ইরি-বোরো চাষে নতুন স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষে ইরি-বোরোর আবাদ নিয়ে এখন ব্যস্ত চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতে এবার বীজতলার তেম কোন ক্ষতি হয়নি। উপজেলার প্রতিটি মাঠে মাঠে চলছে এখন শুধু ইরি-বোরো ধান রোপনের মহোৎসব। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠের কাঁদা-জলে ভিজে ধানের চারা রোপনের কার্যক্রম চালাচ্ছে কৃষকরা। বর্তমানে আত্রাইয়ের মাঠগুলো এখন কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দেয়ায় এবং বোরো চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় বোরো চাষের পাশাপাশি আলু, গম ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
অফিস সূত্রে জানা, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ১৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে নওগাঁ জেলার খাদ্য উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে আত্রাই। এ জন্য বোরো মৌসুমে সেচ কার্যক্রম যথাযথ রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগও রয়েছে তৎপর।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার বিদ্যুৎ চালিত মোটর ও গভীর নলকূপ রয়েছে। যেগুলো কেবলমাত্র বোরো চাষে সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়।
উপজেলার বজ্রপুর গ্রামের কৃষক মেহেদি হাসান বলেন, আমাদের এলাকায় প্রতি বছর বন্যার কারণে অনেক ক্ষতি হয়। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় আমাদের এলাকায় বীজতলাগুলো কোল্ড ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হয়নি। এ জন্য বোরো চারা অনেকটাই সহজলভ্য হয়েছে। সেই সাথে ধানের ফলনও বাম্পার হবে বলে আমরা আশাবাদী।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আত্রাই জোনের এজিএম মো. ফিরোজ জামান বলেন, বোরো চাষে কৃষকরা যাতে সার্বক্ষণিক জমিতে পানি সেচ দিতে পারেন এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ সজাগ রয়েছে। বিশেষ করে আমরা প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এলাকায় বিদ্যুতের কোন লোডসেডিং রাখব না। এ জন্য ওই সময়ের মধ্যেই কৃষকদের সেচ পাম্প চালানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা আমাদের পরামর্শ মেনে চললে বোরোর জমিতে পানির কোন সংকট হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন বলেন, কৃষকরা যেন বোরো চাষে কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যেখানেই সমস্যা সেখানেই আমাদের উপস্থিতি এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময় পরামর্শ দিয়ে আসছি। আর কৃষকরা যদি এই মৌসুমে আমাদের দেওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে ইরি-বোরো চাষ করে এবং কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দেয় তাহলে এবার আমরা ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন