ইলিশের অভাব নেই তবুও কমছে না দাম

1086

ইলিশ

কয়েকদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় সেই ইলিশে ঠাসা এখন চাঁদপুরের প্রধান মৎস্য আড়ত। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার প্রায় ৬ হাজার মণেরও বেশি ইলিশ চাঁদপুর থেকে মোকামে সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইলিশ ব্যবসায়ীরা।

চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে ইলিশের প্রচুর আমদানি। কিন্তু দাম খুবই চড়া। কেজি আকারের ইলিশ মণপ্রতি ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সাইজের ইলিশের মণ ১৯ থেকে ২২ হাজার টাকা। অর্থাৎ ছোট আকারের ইলিশ কিনতে হলে কেজি পড়ছে পাঁচশ টাকার উপরে। মধ্যম সাইজের ইলিশের কেজি ৭ থেকে ৮শ টাকা।

সাধারণ মানুষ ইলিশ কিনতে পারছে না। দাম শুনে অবাক হচ্ছে। চাঁদপুরের আড়তগুলোতে এত ইলিশের ছড়াছড়ি কিন্তু দাম কমছে না। বেশি আমদানিতে মাছের দাম না কমায় হতাশ সাধারণ মানুষ।

শিক্ষক খোরশেদ আলম ও ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ইলিশের আমদানি বেড়েছে শুনে কিনতে এলাম। এসে বুঝতে পারি আড়তদার, চালানী ও ঘাটের খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে চাঁদপুরের ইলিশ সাম্রাজ্য। তিন ধরনের সিন্ডিকেটে চলে ঘাটে আসা পুরো ইলিশের কেনাবেচা। দেশের বড় বড় শহরের ডিপার্টমেন্টাল বিগ বাজার টেনে নিয়ে যাচ্ছে চাঁদপুরে আসা ইলিশগুলো। আড়তে ইলিশ উঠানোর কিছুক্ষণ পরেই বাক্সভর্তি করা হচ্ছে।

তারা বলেন, শখ করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ইলিশ কেনার জন্য ঘাটে এলেও উচ্চমূল্যে তা কেনা ছাড়া উপায় নেই। প্রশাসনের ইলিশ বাজার মনিটরিং না থাকায় মৌসুমেও দাম কমছে না ইলিশের। প্রচুর আমদানিতে সুফল পাচ্ছে না চাঁদপুরের মানুষ।

মাছঘাটে কিছু সময় অপেক্ষো করে দেখা গেছে, মাছ ব্যবসায়ী শবেবরাত হাজী, বাবুল হাজী, ছোট রব চোকদার, কৃষ্ণা, গফুর জমাদারের আড়তে প্রচুর ইলিশ এসেছে। আগের দিন কালু ভূঁইয়া, ইকবাল বেপারী, কুদ্দুছ খাঁ, উত্তম দের আড়তে অনেক মাছ বিক্রি হয়েছে। এসব আড়তে নদী পথে ফিশিংবোট বোঝাই হয়ে এবং সড়ক পথে ট্রাক-পিকআপভ্যানে করে শত শত মণ ইলিশ চাঁদপুর ঘাটে আনা হয়।

ঘাটের ইলিশ পাইকার নেয়ামত বলেন, প্রায় ৩০ মণ ইলিশ বাবুল হাজীর আড়তে বিক্রি করেছেন। তিনি ভালো দাম পেয়ে বেশ খুশি।

তিনি বলেন, গত তিনদিন দক্ষিণাঞ্চলের কালকিনি, ডালচর, সামরাজ, পাতিলা, মনপুরা, টুরকী এলাকায় জেলেরা বেশি ইলিশ পাচ্ছে। আগের বেশ কিছুদিন ইলিশ পেয়েছিল হাতিয়ার সাগর জেলেরা। এখন পাচ্ছে দক্ষিণের পটুয়াখালী, ভোলা ও বরিশালের জেলেরা।

তছলিম বেপারী বলেন, চাঁদপুরের জেলেদের কপাল মন্দ। ভাদ্র আশ্বিনেও পদ্মা-মেঘনায় প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা পাচ্ছে না জেলেরা। ছোট সাইজের ইলিশ পেলেও তাদের খরচ পর্যন্ত উঠছে না। ইলিশ না পেয়ে জেলার ৫১ হাজার জেলে পরিবার খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি বলেন, চাঁদপুরের মৎস্য আড়তে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের আমদানি হচ্ছে। কিন্তু দাম কমছে না। আগামী ৯ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ৯০ কিলোমিটার এলাকায় মা ইলিশ প্রজননের জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সময় মা ইলিশ পেটে ডিম নিয়ে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ধাবিত হবে এবং প্রজননের জন্যে ডিম ছাড়বে। সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ওপরে চলে আসবে পদ্মা-মেঘনায়। নিষেধাজ্ঞা সময়ে এসব নদীতে প্রচুর ইলিশের দেখা মিলে।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ