কার্পাসডাঙ্গা পল্লির পাটজাত সামগ্রী তৈরি পণ্য যাচ্ছে বিদেশে

85

পাটজাত সামগ্রী তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা খ্রিষ্টান মিশন পল্লির নারী-পুরুষ। তাদের তৈরি পণ্য যাচ্ছে বিদেশে। প্রত্যেক দিন কাজের অবসরে এ পল্লির বাসিন্দারা চাহিদামতো পাটের সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা দিনের অবসরের পুরোটাই ব্যয় করছেন এ কাজে।

জানা যায়, ১৯৭৬ সালে ইতালি থেকে কার্পাসডাঙ্গায় খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার করতে আসেন ফাদার জন। তিনিই তাদের এ কাজে সম্পৃক্ত করেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলেও এ কাজ থেমে যায়নি। তারা চাহিদা মোতাবেক পাট দিয়ে তৈরি করে গিফট বক্স, ফটো অ্যালবাম, ওয়ালম্যাট, ক্রিসমাস ডেকোরেশন, টেবিলম্যাট ও খেলনা ছাড়াও ঘরের আড়াই টাঙানো শিকা ও তার ভেতরকার বক্স, পাখি, মাছ, মেয়েদের ব্যবহƒত হাতব্যাগ, বালতি, ফুলদানি, জায়নামাজ, জুয়েলারি বক্সসহ নানারকমের পণ্য তৈরি করে।

স্থানীয় বুলবুলি মণ্ডল জানালেন, ৩০০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৮০ সেন্টিমিটার চওড়া, ২০০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৮০ সেন্টিমিটার চওড়া, ৫২০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২৯০ সেন্টিমিটার চওড়া কার্পেটসহ চাহিদা মোতাবেক পাট দিয়ে তৈরি করা হয় টেবিলম্যাট, ঘরের আড়ায় টাঙানো শিকি ও তার ভেতরকার বাক্স, পাখি, মাছ ও মেয়েদের ব্যবহƒত হাতব্যাগ, বালতি, ফুলদানি, জায়নামাজ ইত্যাদি। পাট দিয়ে তৈরি একটি কার্পেট ও ম্যাটের টুকরো টুকরো অংশ জুড়ে পরিপূর্ণরূপ আনা লাগে। কর্মীদের দিয়ে ওই অংশগুলো তৈরি করে নেয়া হয়। সে অনুযায়ী তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়। ১২ সেন্টিমিটার লম্বা ও চওড়া ছয় সেন্টিমিটার কার্পেট তৈরি করতে একটি তৈরি করা টুকরার মজুরি পড়ে ৭৭ টাকা, ছোট চার কোনা তৈরি করা হয় প্রতি টুকরা ২৭ টাকা মজুরি দরে, তিন কোনা তৈরি করা হয় প্রতিটি ৭৬ টাকা মজুরি দরে, পাঁচ ও ছয় কোনা তৈরি করা হয় প্রতিটি ৬২ টাকা মজুরি দরে ও শেষের অংশ দুটি সেলাই করা হয় ৪০০ টাকা মজুরি দরে। তারপর রং করে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হয়। কর্মীরা এই অংশগুলো যিনি যত তৈরি করতে পারবেন, তিনি তত টাকা রোজগার করতে পারবেন। কাজের অবসরে এ কাজ করে একজন কর্মী প্রতি মাসে সাত-আট হাজার টাকা রোজগার করতে পারছেন।

কর্মী সীরা মণ্ডল বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বিয়ের পর তারা আলাদা হয়ে যান। শ্বশুরকুল থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। তার স্বামী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাতে সংসারের টানাটানির শেষ ছিল না। সেই টানাটানি কাটিয়ে উঠতেই তিনি পাট দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পের কাজ শুরু করেন। এই কাজ করে তিনি তার দুই ছেলেমেয়েকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছেন। মেয়ে নার্সিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করছেন। ছেলে ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। এ কাজে ছেলের স্ত্রীকে তিনি যুক্ত করেছেন। হস্তশিল্পের এ কাজ করে তিনি প্রায় চার মাস পরপর ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন।’

কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস বলেন, দেশের জাতীয় সম্পদ পাট। পাট দিয়ে ১৯৭৬ সাল থেকে কার্পাসডাঙ্গা মিশন পল্লিতে যে পণ্যগুলো তৈরি হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে, তা প্রশংসার দাবিদার। সরকারিভাবে এ কাজের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার কারণে এর বিকাশ ঘটছে না। এ পল্লিতে হস্তশিল্পের কাজ ভালো পরিবেশে করার জন্য শেড নির্মাণ করা হবে। তিনি দাবি করেন, সরকারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও নারী-পুরুষকে এ কাজে সম্পৃক্ত ঘটালে এলাকার বেকার সমস্যা লাঘব হবে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা মিতা বলেন, কার্পাসডাঙ্গা মিশন পল্লিতে বিশেষ করে মেয়েরা পাটজাত দ্রব্য ব্যবহার করে যে পণ্য তৈরি করছেন, তা প্রশংসনীয়। এ পর্যন্ত এ হস্তশিল্পের সম্প্রসারণ ও বিকাশ ঘটানোর জন্য তারা কোনো সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা চাইনি। তারা সহায়তা চাইলে অবশ্যই করা হবে।