গাভীর গর্ভকালীন রোগ জরায়ু বের হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা

3073

গাভীর গর্ভকালিন সময় রোগ (জরায়ু বের হওয়া) সম্পর্কে জানুন

জরায়ু বের হওয়া
গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর যোনীপথ দিয়ে জরায়ু বের হয়ে আসাকে Uterine Prolapse বলে। তবে কিছু কিছু গাভী গর্ভকালিন সময়ে শুয়ে থাকলে আংশিক বের হতে দেখা যায় এবং দাড়িয়ে গেলে আবার ভেতরে ঢুকে যায়। যেসব গাভীর বাচ্চা প্রসবের ৪/৫ ঘন্টার মধ্যে জরায়ু সম্পুর্ন বের হয়ে আসে সেসব গাভীতে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান দ্বারা জরায়ু ভেতরে সময় মত না ঢুকালে অবশেষে রক্তক্ষরন হয়ে মারা যায়। এ রোগের কারন লক্ষন চিকিৎসা ও প্রতিরোধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কারণ
প্রধানতঃ গাভীর শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাবে এ রোগ হয়।
বাচ্চা হওয়ার সময় অতিরিক্ত কোঁথ দিলে।
প্রসবের সময় বাচ্চা হ্যাচকা টান দিয়ে বের করলে।
জরায়ুতে অত্যাধিক চর্বি জমলে।
বাচ্চার সাইজ বড় হওয়ার কারনে আটকে যাওয়া গাভীতে এ রোগ বেশি হয়।
দুর্বলতা ও অপুষ্টিতে ভুগলে সেই গাভীতেও হতে পারে।
গর্ভফুল আটক বা অনভিজ্ঞ লোকের দ্বারা প্রসব করালে।

লক্ষণ
বাচ্চা প্রসবের পর আর দাড়িয়ে থাকতে পারে না বিধায় শুয়ে পরে।
শুয়ে থেকে জোরে জোরে কোঁথ দিতে থাকবে।
যোনীপথে জরায়ুর আংশিক অংশ বের হতে দেখা যাবে এবং এক পর্যায়ে সম্পুর্ন জরায়ু বের হয়ে যাবে।
অনেক সময় জরায়ু উল্টো হয়ে বের হওয়ার কারনে গোটা গোটা Cotyledon দেখা যাবে।

চিকিৎসা
গর্ভকালিন সময়ে যেসব গাভী শুয়ে থাকলে জরায়ু বের হয় inj: Calcium Forte-M 100cc (10% Dextrose Saline) সহযোগে ধীরে ধীরে রক্ত শিরায় দিতে হবে। যদি তাতেও জরায়ু বের হওয়া বন্ধ না হয় তাহলে পুনরায় ৭ দিন পর আবার উক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম করতে হবে।
inj: Newdecaphosphen 17cc করে ৪ দিন পরপর মাংশে অথবা শিরায় তিন ডোজ। উক্ত চিকিৎসা দেওয়ার পরও যদি জরায়ু বের হওয়া বন্ধ না হয় তাহলে যোনীপথ সুতা দিয়ে সেলাই করে রাখতে হবে বাচ্চা হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। প্রসব ব্যাথা উঠা মাত্রই সেলাই কেটে দিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। যদি সম্পুর্ন জরায়ু বের হয়ে আসে তাহলে নিন্ম পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে হবে
প্রথমেই জরায়ু পলিথিনের উপড় নিয়ে এন্টিসেপটিক যুক্ত ঠান্ডা পানি দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে যাতে কোন ময়লা জরায়ুর গায়ে লেগে না থাকে।
বের হওয়া জরায়ু ব্যাথা থাকার কারনে ফুলে যায়, ফলে ফোলা জরায়ু যোনীপথে ঢুকাতে কঠিন হয়ে পড়ে। তাই জরায়ুর ফোলা কমানোর জন্য চিনি অথবা বরফ দিয়ে কিছুক্ষন চেপে ধরতে হবে। এতে করে জরায়ু ছোট হয়ে যাবে এবং যোনীপথ দিয়ে ঢুকাতে সহজ হবে।
জরায়ু ঢুকানোর সময় যদি গাভী কোঁথ দিতে থাকে তাহলে inj: Nospa 15ml মাংশে দিয়ে নিতে হবে। যদি তাতেও কোঁথ দেয়া বন্ধ না হয় তাহলে 5% Dextrose saline সহযোগে Calcium forte-m 100cc ধীরে ধীরে রক্ত শিরায় দিলে সম্পুর্ন কোঁথ দেয়া বন্ধ হবে এবং স্যালাইন দেয়া কালেই জরায়ু ঢুকানো সম্পন্ন করতে হবে।

জরায়ুকে কোনরূপ মোচড়ানো ছাড়াই সঠিক স্থানে স্থাপন করতে হবে এবং ৪টি রেনামাইসিন ট্যাবলেট জরায়ুতে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
এর পর যোনীর (Vagina) উপড়ের অংশ মোটা সুতা দ্বারা সেলাই দিতে হবে যাতে পুনরায় জরায়ু বের হতে না পারে।
গাভীকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন পিছন দিক উচু ও সামনের দিক নিচু থাকে।

জরায়ুতে যাতে কোন সংক্রমন হতে না পারে এজন্য পেনিসিলিন গ্রুপের inj: Penbacllin দৈহিক 100kg/2.5cc করে ২৪ ঘন্টা পরপর মাংশে দিতে হবে ৪/৫ দিন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৪জানুয়ারি২০২১