জেনে নিন, নিম তেল তৈরি করার নিয়ম ও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা

9018

নিমের বীজ থেকে নির্যাস বের করে বানানো হয় নিমের তেল।
নিমের তেল কসমেটিকস এবং অন্যান্য সৌন্দর্য প্রসাধনীতেও ব্যবহার করা হয়। সাবান, চুলের তেল, হ্যান্ডওয়াশ প্রভৃতিতে নিমের তেল ব্যবহার করা হয়। নিমের তেল ত্বকের রোগ সারাতেও বেশ কার্যকর। এ ছাড়া গায়ে মেখে ঘুমালে মশায় কামড়ায় না। নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে দেহেও মালিশ করলেও নানা উপকার হয়। বাচ্চাদেরকে নিমের তেল খাওয়ালে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

নিম তেল তৈরি

নিম (Azadirachta Indica) তেল (neem oil) তৈরি করা হয় নিমের বীজের শাঁস (seed kernels) থেকে। নিমের বীজের শাঁসকে পিষিয়ে নেওয়া হয় expeller (ঘানিতে) এ, সাধারণত ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। এই পদ্ধতিতে বীজের সমস্ত তেল নিস্কাশিত হয় না। তারপর যে নিমের খোলটা (cake) পাওয়া যায় তাকে hexane solvent দিয়ে extract করা হয়। এই দুটো মিশ্র প্রক্রিয়ায় নিমের সমস্ত তেল পাওয়া যায়। নিমের তেলের ব্যবহার করা হয় নিম সাবান, নিমের কীটনাশক তৈরিতে। নরম পোকা যেমন aphids, mileybugs মারতে এই তেল খুব কার্যকরী। নানা রকম চর্মরোগে, যেমন ব্রন, একজিমা, সোরিয়াসিসে, পোড়া জায়গায়, uv রশ্মি থেকে রক্ষা ও skin rashes এ এই তেল ব্যবহৃত হয়।

নিমের তেল এর উপকারিতা

নিমের তেলের গুণাবলীঃ নিমের ফল থেকে সরাসরি নিম তেল সংগ্রহ করা হয় বলে এই তেলের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। তিক্ত স্বাদের এই উপাদানটি আপনার শরীরের অধিকাংশ সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিয়ে থাকে। শুধুমাত্র নিমের তেল আপনার কোন কোন উপকার সাধন করে থাকে, চলুন একটু দেখে নেই।

১। ত্বকের যত্নে নিম তেল-নিম তেলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকে সহজে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না।নিম তেল ফ্যাটি এসিডে সমৃদ্ধ যার ফলে তেলটি সহজে ত্বকের সাথে মিশে যায় এবং সংকোচন-প্রসারণ সহজতর হয়।নিয়মিত নিম তেল ব্যবহার করলে ত্বকের বলিরেখা ও বার্ধক্যজনিত যাবতীয় দাগ দূর করা সম্ভব।নিম তেলে অ্যাসপিরিন জাতীয় উপাদান রয়েছে, যা ব্রণ হওয়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে।
ত্বকের লাল ভাব ও ব্রণের ক্ষত থেকে ব্যথা হলে নিমের তেল তা সারিয়ে তোলে।
নিম তেল ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে অ্যাকজিমা প্রতিকার ও প্রতিরোধ করে। তবে, বংশগত কারণে কারও অ্যাকজিমা হলে নিমের তেল তা পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে সক্ষম নাও হতে পারে।ত্বকের ছোট ছোট লালচে দাগ দূর করে।ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন তৈরিতে বাধা দেয়।

২। চুলের যত্ন-চুলে ও মাথার ত্বকে নিয়মিত নিম তেল ব্যবহারের মাধ্যমে খুশকি থেকে দূরে থাকা সম্ভব।আপনার ব্যবহার করা শ্যাম্পুতে কয়েক ফোঁটা নিমের তেল মিশান। এবার চুলে শ্যাম্পু মেখে ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করুন। এভাবে আপনার উসকোখুসকো ও প্রাণহীন চুল তার উজ্জ্বল্য ফিরে পেতে পারে।নিয়মিত নিম তেল ব্যবহারে উকুন তাড়ানো সম্ভব।চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।চুল ভাঙা রোধ করে

৩। নিম ফাংগাল-বিরোধী হিসেবে কাজ করে। চুলের খুশকি দূর করতে, উকুন থেকে রেহাই পেতে ও চর্মরোগে নিম তেলের সঙ্গে নারিকেল তেল (১/১০ অনুপাত) মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

৪। ২/৩ ফোঁটা নিম তেলের সঙ্গে পানি মিশিয়ে মুখের ব্ল্যাকহেডে লাগাতে পারেন। এটি প্রতিদিন লাগালে ব্ল্যাকহেড থেকে পরিত্রাণ পাবেন ও এটি ব্ল্যাকহেড ফিরে আসা প্রতিরোধ করবে।

চুল ঝরা
নিমতেলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এর ফলে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। নিমতেল চুলের পি এইচ ভারসাম্যকে ঠিক রাখে। যেটা চুলের জন্য খুবই দরকারি। চুল যদি পাতলা হয়ে যায় তাহলে নিমতেল ব্যবহার করুন। রোজ নিমতেল ব্যবহার করলে চুল অনেকবেশি ঘন, লম্বা আর মজবুত হবে।

শুষ্ক চুল

নিম তেলে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ফ্যাটি অ্যাসিড। যেটা সুন্দর চুলের জন্য খুবই দরকারি একটি উপাদান। এটি চুলকে সুন্দর ভাবে কান্ডিশনিং করে। এবং চুলকে নরম রাখে এবং একটা সুন্দর ফুরফুরে লুক দেয়। চুলকে খুব ভালো ভাবে কান্ডিশনিং করার জন্য নিমতেল ভালো ভাবে স্ক্যাল্পে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। এবং তারপর তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। চুল যথেষ্ট চকচকে ও হেলদি হবে।

খুশকির সমস্যা

নিমতেলে আছে অ্যান্টিফাংগাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যা ‘ক্যানডিডা’ নামক ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করে। যার কারণে খুশকির সমস্যা হয়। এই সমস্যাকে নিমতেল খুব ভালো ভাবে প্রতিরোধ করে। এছাড়াও স্ক্যাল্পে অনেক সময় ফুসকুড়ি হয়, লাল হয়ে যায়। এবং মাথা খুব চুলকোয়। এগুলি দূর করে নিমতেল। এছাড়াও স্কাল্পে অন্য কোন ইনফেকশন হলেও সেটি খুব সুন্দর ভাবে প্রতিরোধ করে।

উকুনের সমস্যা

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য অনেক কিছু করেও তেমন কোন স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায় না। কিন্তু যদি ব্যবহার করা যায় নিমতেল, তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। নিমতেল ভালো করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে, সারারাত লাগিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ভালো করে আঁচড়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। উকুন চলে যাবে।

বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে

ফেসপ্যাকের সঙ্গে নিমের তেল মিশিয়ে লাগালে ত্বক সজীব হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ত্বকে বলিরেখা পড়া, যেকোনো ধরনের প্রদাহ এবং খোস-পাঁচড়া দূর করে নিমের তেল।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১১এপ্রিল২০