টুঙ্গিপাড়ায় ৪৮ কৃষকের ‘যৌথ খামারে’ ধান চাষ

181

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৪৮ কৃষকের প্রায় ১৫০ বিঘা যৌথ জমিতে ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক চাষাবাদের এ পদ্ধতিতে কম খরচে কৃষক অধিক ধান উৎপাদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার কুশলী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে সমালয়ে চাষাবাদের উদ্বোধন করে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, এ পদ্ধতির চাষাবাদে কৃষকের বিঘাপ্রতি অন্তত ১২ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া বিঘাপ্রতি হাইব্রিডে ৩০ মণের স্থলে ৩৫ মণ ধান উৎপাদিত হবে। উফশী জাতে ২৫ মণের স্থলে ৩০ মণ ধান উৎপাদিত হবে।

আধুনিক চাষাবাদ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ‘সমলয়’ নামের এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে শুরু করে ধান মাড়াই পর্যন্ত সবই করা হবে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। স্বল্প মানুষের শ্রমে যন্ত্রের মাধ্যমে এই চাষের জমিতে কোনো আইল থাকে না। ফলে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের জমিতে বীজতলা থেকে ফসল কাটা সবই একই সময়ে একই সঙ্গে করা হয়।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন জানান, রামচন্দ্রপুর গ্রামের ৪৮ কৃষকের জমিতে এই পদ্ধতির চাষাবাদ হচ্ছে। চাষাবাদের শুরুতে ট্রেতে বীজতলা করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রচলিত চাষাবাদে প্রতি বিঘায় হাইব্রিড ধানবীজ চার কেজি ও উফশী ধানবীজ আট কেজি দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। সেখানে সমলয়ে চাষাবাদে বিঘাপ্রতি বীজ খরচ অর্ধেক হয়েছে। এতে কৃষকের খরচ বেঁচেছে।

১৫০ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে। এতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে মাত্র এক হাজার ২০০ টাকা। শ্রমিক দিয়ে ধান রোপণ করতে গেলে অন্তত ছয় হাজার টাকা খরচ হতো। এ ছাড়া নিড়ানি দেয়া হবে উইডার মেশিন দিয়ে। এতে মাত্র দুই শ্রমিক প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে অন্তত ১০ শ্রমিকের মজুরি সাশ্রয় হবে। এসব জমিতে ধান পাকার পর কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে কেটে মাড়াই করে দেয়া হবে। এ মেশিন দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটতে মাত্র দেড় হাজার টাকা ব্যয় হবে। এতে সাশ্রয় হবে অন্তত সাড়ে সাত হাজার টাকা। এ পদ্ধতির চাষাবাদে ২০ থেকে ২২ দিন বয়সের ধানের চারা রোপণ করতে হয়। তাই ধানের উৎপাদনও বেড়ে যায়।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে আট হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে আইল রয়েছে প্রায় ১২৬ হেক্টর। জমির আইল আনাবাদি থাকে। সব জমিতে সমলয়ে চাষাবাদ হলে ওই জমিও চাষাবাদের আওতায় আসত। এতে আরও ৭৫৬ মেট্রিক টন ধান বেশি উৎপাদিত হতো। এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরও সমৃদ্ধ হবে বলে মন্তব্য করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মো. নাজিম বলেন, এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন ধানের ফলনও ভালো হবে। ভালো ফলন পেলে অধিক লাভবান হবো বলে আশা করছি।

একই গ্রামের কৃষক মহিব শেখ বলেন, নতুন পদ্ধতির চাষাবাদে সবই যন্ত্রের ব্যবহার। এখানে শ্রমিক তেমন লাগে না। ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। তখন শ্রমিককে এক হাজার টাকা মজুরি দিতে হয়। ধান নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। এই চাষাবাদে অধিক ফলন পেয়ে দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারব। এতে আমাদের অধিক লাভ হবে।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে চাইছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে শ্রমিক কম লাগে। এছাড়া ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ পদ্ধতির চাষাবাদে একই জাতের ফসল আবাদ করতে হয়। ম্যানেজমেন্ট ও সেচ-নিকাশ খুব সহজ। ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হন। এ পদ্ধতির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

রামচন্দ্রপুর গ্রামে সমালয়ে চাষাবাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম কুমার বিশ্বাস।