টেকসই উন্নয়নে পুষ্টি লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে বৈঠক

272

সভা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০১৫ সালে গৃহিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা(এসডিজি) ২০৩০ প্রস্তাবের প্রতি বাংলাদেশ দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে, যার ২য় লক্ষ্য হচ্ছে ‘ক্ষুধা নির্মূল, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও উন্নত পুষ্টির ব্যবস্থা করা এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। নানাবিধ কারনে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ পুষ্ঠির সুচকে পিছিয়ে আছে। পুষ্ঠির চাহিদা পুরণ ও মেধাবী জাতি বির্নিমানে বিগত কয়েক দশকে সরকার টেকসই অগ্রগতি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও খাদ্য ঘাটতি পুরণ সম্ভব হলেও পুষ্ঠিকর খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সরকারের উদ্যোগের কারনে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও পুষ্ঠিকর সুষম খাবার গ্রহনে এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি। শহরের জাঙ্কফুড, ভাজাপুড়া ফাস্টফুড তরুনদেরকে আকৃষ্ঠ করলেও তারা শাক, সবজি, মাছ মাংশ মিশিয়ে সুষম খাদ্যের বিষয়ে একেবারেই সচেতন নয়।

বিয়ে, মেজবানসহ নানা অনুষ্ঠানে প্রচুর পরিমান খাবার অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে এখনও একশ্রেণীর মানুষ পরিপূর্ন ভাবে তিন বেলা খাবার পায় না। তাই খাবার অপচয় রোধে যেমন সামাজিক সচেতনতা তৈরী দরকার, তেমনি সুষম খাদ্য গ্রহনের বিষয়ে সর্বসাধারনের মাঝে বৈজ্ঞানিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে। আর এ কাজে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠনগুলি বড় ভুমিকা পালন করতে পারে। তা নাহলে মেধাবী জাতি গঠন সম্ভব হবে না। ৩০ অক্টোবর ২০১৯ইং নগরীর বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে টেকসই উন্নয়নে পুষ্টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনঃ সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন এর ভূমিকা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করা হয়।

কনসার্ন বাংলাদেশ, আইএসডিই ও ক্যাব চট্টগ্রামের আয়োজনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নুরুল আলম নিজামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুল মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় পুষ্ঠি পরিষদের মহাপরিচালক ডাঃ মোঃ শাহ নেওয়াজ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন, স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ আবদুস সালাম ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এজেডএম শরীফ হোসেন।

ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটির এপ্লাইড ফুড সাইন্স ও নিউট্রিশনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আলতাফ হোসেন। ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের সুচনা বক্তব্যে আলোচনায় অংশনেন টিআইবি সনাকের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী, সিভয়েস২৪.কমের সম্পাদক এম নাসিরুল হক, এডাব চট্টগ্রামের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেখা আলম চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, নারী নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, তেীহদুল ইসলাম, অজয় মিত্র শংকু, ভেজিটেল এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সেলিম জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ দিলীপ কুমার প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন বাংলাদেশের মানুষ খাদ্য গ্রহন করে পেট ভর্তি করেন আর উন্নত দেশগুলিতে খাদ্য পরিবেশন দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়। ফলে মানুষের অতি ভক্ষন শরীরের উপকারের চেয়ে অপকার করছে। মানুষ এখন আর না খেয়ে মরছে না। মানুষ মরছে অতি ভক্ষনের ফলে। ফলে হার্ট অ্যার্টাক, ক্যান্সার, স্থুল হয়ে যাওয়াসহ নানা মারাত্মক ব্যাধি এখন নিত্যসঙ্গী। তার উপর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিয়ে, মেজবানসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে বিপুল ভুরি ভোজনের কারনে বিপুল পরিমান খাদ্য অপচয় হচ্ছে। আর এই খাদ্য অপচয় রোধ করা গেলে বিপুল সংখ্যক ক্ষুদার্থ মানুষের মুখে অন্ন যোগানো সম্ভব হতো। পুষ্ঠিকর খাবার শুধু খাবার নয়, এটা প্রতিষেধকও বটে বিষয়টি সকলের গোছরীভুত করতে দেশে নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য আন্দোলনের মতো সামাজিক আন্দোলনে পরিনত করতে ক্যাবসহ বিভিন্ন সামাজিক শক্তিগুলির আরও তৎপরতা চালানোর আহবান জানান।

জাতীয় পুষ্ঠি পরিষদের মহাপচিালক ডাঃ মোঃ শাহ নেওয়াজ বলেন চট্টগ্রাম বিভাগ পুষ্ঠির চাহিদা পুরণে পিছিয়ে আছে। সরকার নানামুখী তৎপরতা পরিচালনা করলেও জনসম্পৃক্ততার ঘাটতির কারনে কাংখিত সাফল্য আসছে না। তাই সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি সিএসএ সানসহ বিভিন্ন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সংগঠনের এ কাজের সাথে আরও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

অধ্যাপক আলতাফ হোসেন চট্টগ্রাম বিভাগে পুষ্ঠি সুচকের অগ্রগতির কারন ব্যাখ্যা করেন। সেবাগ্রহীতাদের সচেতনতা ও তাদেরস্বার্থ সংরক্ষনে শক্তিশালী নাগরিক সমাজের ভুমিকা অনস্বীকার্য। শক্তিশালী নাগরিক সমাজ ও তাদের কার্যকর ভুমিকার রাখা সম্ভব হলে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে বলে মতপ্রকাশ করেন। তাই নাগরিক সংগঠনগুলিকেও শক্তিশালী করা দরকার। যারা পুষ্ঠি সুচকের উন্নয়নসহ সরকারের নেতিবাচক দুর্বলতাগুলিকে তুলে ধরে গঠন মুলক সমালোচনার মাধ্যমে সমাজ পরির্বতনে ভুমিকা রাখতে পারেন ।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ