তীব্র শীতে রবি ফসলে চাষীদের করনীয়

289

চলছে রবি মৌসুম। শীতকালীন এ মৌসুমে রবিশস্যসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতে কৃষকরা যেসব সমস্যায় পড়েন তার মধ্যে অন্যতম ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত শীত।

এতে উদ্বিগ্ন না হয়ে কৃষি জমির সঠিক পরিচর্যা ও ‍ঠিকমতো কৃষি উপকরণ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদরা।
রবি মৌসুমের কয়েকটি প্রধান ফসলের পরিচর্যা ও করণীয় সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদদের পরামর্শ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

বোরো বীজতলা:
শৈত্য প্রবাহের সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০ অথবা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে যাতে বীজতলার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে রশি টানা দিয়ে চারা থেকে কুয়াশার পানি ফেলে দিতে হবে; বীজতলার চারার গোড়ায় ৩-৫ সেন্টিমিটার (দেড় থেকে দুই ইঞ্চি) পানি ধরে রাখতে হবে; ঠাণ্ডার কারণে চারার ধসা রোগ দেখা দিলে বীজতলা থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে; চারা রোপণের সময় শৈত্যপ্রবাহ থাকলে কয়েক দিন দেরি করে চারা রোপণ করা প্রয়োজন।

এছাড়া জমিতে ৫-৭ সেন্টিমিটার (দুই থেকে তিন ইঞ্চি) পানি ধরে রাখতে হবে। রোপণের জন্য ৩৫-৪৫ দিনের চারা ব্যবহার করলে শীতে চারা কম মারা যায়, চারা সতেজ থাকে এবং ফলন বেশি হয়।

আলু ও টমেটো:
নিম্ন তাপমাত্রা, ঘন কুয়াশা ও মেঘলা আকাশ থাকলে আলু ও টমেটো ফসলে লেইট ব্লাইট (মড়ক রোগ) রোগের আক্রমণ হতে পারে। এ ধরণের আবহাওয়ায় আলু ও টমেটো ফসলে প্রতিরোধক হিসেবে বর্দোমিক্সচার অথবা ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

এ রোগের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত গাছ তুলে মাটি চাপা দিতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। এ অবস্থায় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মোতাবেক জমিতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।

সরিষা ও শিম:
সরিষা ও শিম গাছে জাবপোকার আক্রমণ দেখা দিলে আধাভাঙ্গা নিমবীজের পানি (১ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম নিমবীজ ভেঙ্গে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ছেঁকে নিতে হবে) আক্রান্ত গাছে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। তবে আক্রমণের মাত্রা খুব বেশি হলে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মোতাবেক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

আমের মুকুল:
ঘন কুয়াশার কারণে আম গাছের মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এরকম আবহাওয়ায় প্রতিরোধক হিসেবে বর্দোমিক্সচার অথবা অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া, এ সময়ে আমের শোষক পোকার (হপার পোকা) আক্রমণ বেশি হতে পারে। সে জন্য কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মোতাবেক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

পানের পাতা ঝরা:
তীব্র শীতের কারণে অনেক সময় পানের পাতা ঝরে যেতে পারে। পানের বরজের চারপাশে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিলে তীব্র শীতের হাত থেকে বরজকে রক্ষা করা যায়।

রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে ডিএপি, এমওপিসহ অন্যান্য রাসায়নিক সার সুষম মাত্রায় ব্যবহার করলে বেশি ঠাণ্ডা থেকে ফসল রক্ষা পায় এবং ফলন বেশি পাওয়া যায়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য কাছের কোনো উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২১ডিসেম্বর২০২০