দ্রুত বর্ধনশীল ১০ টি সবজি চাষ

2530

সবজী আমাদের দেশে শীতকালেই সবচেয়ে বেশি সবজি পাওয়া যায়। তাও আবার বিচিত্র ধরনের। শীতকালে যত ধরনের সবজি পাওয়া যায়, তা বছরের অন্য কোন সময়ে পাওয়া যায় না। আর এই সবজিগুলোর পুষ্টিগুণ বলেও শেষ করা যাবে না। শীতকালে নানান ধরনের সবজির বাণিজ্যিক চাষ যেমন হয়ে থাকে,তেমনি সৌখিন চাষি যারা ছাদে এবং নিজেদের আঙ্গিনাতে সবজি চাষ করেন ,তাদের জন্যও এই সময়টা সবচেয়ে উপযোগী। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে সিম, বাধাকপি, ফুলকপি, গাজর, মটরশুঁটি, মুলা, পালংশাক, ওলকপি, লাল শাক, লাউ শাক, করলা, বেগুন, টমেটো, বরবটি, আলু উল্লেখযোগ্য। আজকে আপনাদের পরিচিত কিছু সব্জির সাথে পরিচয় করিয়ে দেব, যেগুলো থেকে আপনারা এই শীতকালে অতিদ্রুত ফসল পেতে পারেন। যারা সৌখিন চাষি তারা তাদের ছাদে, বারান্দায় টব, ড্রাম, অব্যবহৃত প্লাস্টিক কৌটা, পানির বোতলে এই দ্রুত বর্ধনশীল ১০ টি সবজি চাষ করতে পারেন। এখানে আমারা দ্রুত বর্ধনশীল ১০ টি সবজি চাষ পদ্ধতি জানব।

গাজর
গাজরে পোকামাকড়ের আক্রমন নেই বললেই চলে, যে কারণে চাষ করাও খুব সহজ। এর চাষ পদ্ধতি অনেকটা মুলার মতই। ৫/৬ ইঞ্চি পর পর গাজরের বিজ বপন করুন। সেচ দেওয়ার পদ্ধতি মুলার মতই। গাজরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন আছে। সালাদ হিসেবে আমাদের দেশে বেশি জনপ্রিয়।

পালং শাক
পালং শাকের বীজ ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে একটি পরিষ্কার সুতি কাপড়ে মুড়ে রাখুন . পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘন্টায় এর বীজ বোনার উপযোগী হয়ে যাবে . তবে বিজ বপনের পূর্বে মাটিতে ভালভাবে জৈব সার দিন। মাতি প্রস্তুত হলে একটি নিড়ানি দিয়ে মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে বিজ বপন করুন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনি শাক তুলতে পারবেন। আগে যে গাছগুলোর পাতা বেরুবে সেগুলো আগে তুলে নিন। আপনি চাইলে একই সিজনে ২ বারও পালং শাক লাগাতে পারেন। পালং শাকে প্রচুর আয়রন ও ক্যালশিয়াম আছে।

মটরশুঁটি
মটরশুঁটির বীজ ২/৩ ইঞ্ছি পরপর মাটির ১ ইঞ্চি নিচে বপন করুন। বিজ থেকে চারা গজালে মাচা করে দিন। যারা বারান্দায় লাগাবেন তারা সুতা দিয়ে বারান্দার গ্রিলে উঠিয়ে দিন। ভাল ফসলের জন্য নিয়মিত পানি দিন। মটরশুঁটিতে ভিটামিন এ, বি ও সি আছে। ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে ধরবে প্রচুর পরিমানে।

বিট
সাধারনত ২ ধরনের বিট দেখা যায় লাল এবং বেগুনি রঙের। বীজ বপনের পূর্বে মাটি ভালভাবে কুপিয়ে ঝরঝরা করে নিন। খেয়াল রাখবেন মাটিতে যেন কোন ধরনের ইটের অথবা পাথরের টুকরো না থাকে। মাটির ২ ইঞ্চি নিচে বীজ বপন করুন। দিনে অন্তত একবার পানি দিন। বিট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে খুবই কার্যকর। সালাদ এবং রান্নার উপকরন হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।

মরিচ
মরিচ গাছ লাগানোর জন্য আপনি বাজার থেকে মরিচের চারা কিনে আনতে পারেন অথবা নিজেই মরিচের চারা উৎপাদন করতে পারেন। এ জন্য ভাল জাতের বীজ সংগ্রহ করে বীজ বপনের আগের রাতে বীজগুলোকে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর একটি টবে বা ড্রামে বীজগুলো বপন করে দিন। মরিচের বীজ থেকে চারা গজাতে কিছুদিন সময় লাগে। সুতরাং বিচলিত হবেন না। বীজ থেকে চারা গজানো শুরু করলে চারা উঠিয়ে অন্য একটি টবে চারাটি লাগান। টবের আকার ছোট হলে একটি টবে একটি চারা লাগান, তব বড় হলে ২ টি লাগাতে পারেন। সব ধরনের মরিচের চাষ পদ্ধতি মোটামুটি একই। আপনি চাইলে মিষ্টি মরিচ ( ক্যাপসিকাম) ও লাগাতে পারেন। একটি মরিচ গাছ থেকে আপনি অনেক দিন পর্যন্ত মরিচ পাবেন।

লেটুস
লেটুস সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল সবজির মধ্যে অন্যতম লেটুস। টবে, কন্টেইনারে বা প্লাস্টিকের বোতল কেটে তাতে মাটি ভরে লেটুসের বীজ ছিটিয়ে দিন। ছোট টবে বা প্লাস্টিকের বোতলে একটি করে বীজ বপন করুন। জায়গা বড় হলে ৮-১৬ ইঞ্চি দূরে দূরে একটি করে গাছ লাগান। কয়েকদিন পর থেকেই পাতা তুলতে পারবেন। দিনের বেলায় প্রতিদিন একবার করে পানি দিন। লেটুস সালাদ, বার্গার,স্যান্ডউইচে ব্যবহৃত হয়। লেটুসে ভিটামিন এ এবং ফলিক এসিড আছে।

মুলা
মুলা লেটুসের সারির মাঝখানে লাগাতে পারেন। এতে অল্প জায়গাতেই দুইটি ফসল পেতে পারেন। মাটির .৫ ইঞ্চি নিচে মুলার বিজ লাগান। বিজ বপনের আগেই মাটিতে সেচ দিন। চারা গজানোর আগ পর্যন্ত আর পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। চারা একটু বড় হলে ২-৩ সপ্তাহ অল্প পরিমানে সেচ দিন। ২/৩ সপ্তাহ পরেই আপনি মুলা সংগ্রহ করতে পারবেন। মুলা সালাদ, রান্নার সবজি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এতে প্রছুর পরিমানে ফলিক এসিড, পটাসিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম আছে।

ব্রকলি
ব্রকলি দেখতে অনেকটা ফুলকপির মত। অনেকে এটিকে সবুজ ফুলকপিও বলে থাকেন। ব্রকলির অন্য সবকিছু ফুলকপির মত হলেও এর পুষ্টিগুণ অনন্য। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, সি, কে ও বিটা ক্যারোটিন আছে। বিজের চারায় ফসল আসতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে। ব্রকলির মাথায় যে ফুল থাকে তা ফোটার আগেই ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

পেঁয়াজ
পেঁয়াজ লাগানোর আগে মাটি ভালভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে, যাতে করে মাটিতে কোন পাথর বা ইটের কনা না থাকে। তারপর পেঁয়াজের বীজ বপন করতে হবে। সপ্তাহে এক দিন পানি দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর মাটিতে নিরানি দিতে হবে। অল্প কিছুদিন পর থেকেই পেঁয়াজকলি সংগ্রহ করতে পারবেন। ফুল চলে আসলে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারবেন। পেঁয়াজে ফাইবার, ভিটামিন সি আছে।

টমেটো
টমেটো গাছ লাগানোর জন্য আপনি একটি আলাদা টবে বিজতলা বানিয়ে নিতে পারেন। সেখানে টমেটোর বীজ বপন করুন। চারা একটু বড় হলে সেখান থেকে তুলে আলাদা একটি টবে চারা লাগান। একটি টবে একটি করে চারা লাগান। চারা বড় হলে একটি খুঁটি দিয়ে চারাটিকে বেধে দিন। কিছুদিন পর থেকেই ফুল আসা শুরু করবে। নিয়মিত পানি দিন। মাটিতে জৈব সার দিন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০২জুন২০