পোল্ট্রি ফিডের দাম: সরকারের হস্তক্ষেপ চান খামারিরা

264

পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে এ খাতের কর্পোরেট কোম্পানিগুলো প্রান্তিক খামারিদের খামার বন্ধ করতে ‘বাধ্য করছে’ বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সমিতির সভাপতি সুমন হাওলাদার।

তিনি বলেন, সারাদেশে ১ লাখ ৬০ হাজার খামার ছিল। এখন আছে মাত্র ৬০ হাজার। প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনেও ৮৪ হাজার খামার থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে ৬০ হাজার খামার টিকে আছে। তার মধ্যে সবগুলো উৎপাদনেও নেই।

“প্রান্তিক খামারিরা জিম্মি হয়ে আছে গুটিকয়েক কর্পোরেট কোম্পানির কাছে। খামারি যখন বাচ্চা নেবে, তখন বাচ্চার দাম বেড়ে যায়, পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ দিকে কোনো নজরদারি নাই। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নিয়ম থাকলেও তারা তা করছে না।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ৯ থেকে ১০ টাকা। এখন ফেব্রুয়ারি মাসে বাচ্চার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বেশি দামে বাচ্চা কিনলে আর্থিক ক্ষতি হবে– এই আশঙ্কায় খামারিরা বাধ্য হয়ে খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন।

পোল্ট্রি খাতের করপোরেট কোম্পানিগুলো কেন এটা করবে? পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ করাই’ এর উদ্দেশ্য।

সুমন হাওলাদার বলেন, “কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ডিম ও মুরগির বাজারের ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার বাজারের ১০০ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে। অপরদিকে প্রান্তিক খামারিরা ডিম ও মুরগি ৯০ শতাংশ উৎপাদন করে। ১০ শতাংশ উৎপদন করে কৌশলে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

“তাই দিন দিন পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দিয়ে কন্ট্রাক্ট খামারে নেওয়ার জন্য বাধ্য করেন প্রান্তিক খামারিদের।”
কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে বড় কোম্পানি খাবার ও বাচ্চা সরবরাহ করে এবং ছোট খামারি চুক্তির ভিত্তিতে সেই মুরগি পালন করে নির্ধারিত বয়স হলে সেই বড় কোম্পানিকেই নির্ধারিত দামে বিক্রি করে দেয়। তাতে লাভের টাকা বড় কোম্পানির পকেটে যায়, ছোট খামারি পায় শুধু নির্দিষ্ট অংশ।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলনে সুমন হাওলাদার বলেন, “সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনকে ধরে রাখতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশে আমিষের ঘাটতি দেখা দেবে এবং কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে।”
প্রান্তিক খামারিদের ডিম ও মুরগির বর্তমান উৎপাদন খরচ নিয়ে শেরেবাংলা বিশ্ববিদ্যলয়ের পোল্ট্রি সায়েন্সের অধ্যাপক আনোয়ারুল হকের একটি সমীক্ষার তথ্য্য সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। বলা হয়, প্রাপ্তিক খামারিদের একটি ডিম উৎপাদনে এখন খরচ হচ্ছে ১১ টাকা ১১ পয়সা। আর ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হয় ১৪৮ টাকা, ১ কেজি সোনালী মুরগিতে ২৬২ টাকা।

সুমন হাওলাদার বলেন, “এখন ১১ টকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে, অথচ আমাদের উৎপাদন খরচ ১১ টাকার বেশি। যদি সরকারের কোনো দপ্তর থেকে আমাদেরকে কম মূল্যে ডিম বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে বাধ্য করতে হবে। তা-না হলে ডিমের দাম কমানোর কোনো প্রশ্ন নাই।

“কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ভর্তুকি পায়, কিন্তু আমাদের প্রান্তিক খামারিরা কোনো ভর্তুকি পায় না। যদি ডিম ও মুরগির দাম কমিয়ে রাখতে হয়, প্রত্যেকটা খামারিকে প্রণোদনা দিতে হবে। আমাদের প্রোফিট দিয়ে বাজার মূল্য নির্ধারণ করা লাগবে।”

কোন কোন কর্পোরেট কোম্পানি খামারিদের জিম্মি করে রাখছে– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সুমন হাওলাদার বলেন, “বাচ্চা ও ফিড উৎপাদন করে– এমন সব কোম্পানিই আমাদের জিম্মি করে রেখেছে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২টি কোম্পানি লিডিং পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে কাজী ফিড, প্যারাগন, নাহার, বিপিআইসি রয়েছে। তবে সুযোগ কিন্তু সব কোম্পানিই নেয়।”

সংবাদ সম্মেলন থেকে পোল্ট্রি নীতিমালা ও পোল্ট্রি ফিড নীতিমালা বাস্তবায়ন করে পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষার আহ্বান জানানো হয়।
সুমন হাওলাদার বলেন, “কোন অজানা কারণে পোল্ট্রি নীতিমালা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সকল খামারিকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে সরকারি সকল সুবিধা দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সকল প্রান্তিক খামারি উৎপাদন খরচের সাথে সমন্বয় করে বিক্রয় মূল্য পেতে পারে।

“সরকারের পক্ষ থেকে সকল পোল্ট্রি খামারির জন্য সকল ব্যাংকে জামানতবিহীন লোনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে শিল্প টেকানো সম্ভব। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে যায়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে মুরগির খাদ্যে প্রান্তিক খামারিদের ভর্তুকি দিয়ে দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব। এছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব না।”

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসাইন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মনসুর রহমান, আলমগীর হোসাইনসহ বিভিন্ন জেলা থেকে অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।