বৃষ্টিতে সবজির ক্ষতি হলে ও সুফল পাচ্ছেন আমন চাষিরা

63

যশোর অঞ্চলে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে আগাম শীতকালীন সবজির জন্য ক্ষতি হলেও এর বড় সুফল পাচ্ছে আমন চাষিরা। বৃষ্টিপাত বাড়লে চলতি মৌসুমে সবজির উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। আর সবজির আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। আমন চাষিদের দাবি এ বছর আমন মৌসুমের চাষের উপযুক্ত সময়ে অনেকটা অনাবৃষ্টির কবলে পড়েন তারা। যে কারণে পুরোটাই সেচনির্ভর হয়ে পড়ে। তবে ক্ষেতের ধান যখন অঙ্কুর গজিয়ে পরিপুষ্ট হওয়ার পথে ঠিক সেই সময়ে আশ্বিনের শুরু থেকে এ অঞ্চলে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন তারা।

অপর দিকে সবজি চাষিদের দাবি জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে এখন আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মূলা, পালং শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি উল্লেখযোগ্য। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে এসব সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। সামনে বৃষ্টিপাত বাড়লে আরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলেও কৃষকরা জানান।

যশোর জেলার বাঘারপাড়ার বন্দবিলা গ্রামের ফিরোজ হোসেন জানান, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। পাশাপাশি দুই বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করেছেন। চলতি বৃষ্টিতে আমন ধানের জন্য বড় উপকার হলেও সবজির আবাদ হুমকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, এই সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমনের জন্য আশীর্বাদ হলেও সবজির জন্য খারাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও মুলা ক্ষেতের সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, সামনে যদি বৃষ্টিপাত আরও বাড়ে তাহলে এ বছর আগাম শীতকালীন সবজির বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

জেলার সদর উপজেলার নোঙরপুর মাঠের কৃষক ফিরোজ হোসেন বলেন, তাদের মাঠে যেসব ক্ষেকে লাল শাক চাষ করা হয়েছে তার অধিকাংশ গোড়ায় পচন ধরে মরতে শুরু করেছে। একই অবস্থা বাঁধাকপি ও ফুলকপির ক্ষেত্রেও। বৃষ্টিতে গোড়া পচে যাওয়ায় কোথাও কোথাও গাছ মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে এ সময়ে আমরা এসব সবজি বাজারে তুলতে পারলেও এখন বৈরী আবহাওয়ার জন্য আর পারছি না। সামনে বৃষ্টিপাত কী পর্যায়ে হবে সেই চিন্তায় আছেন বলে তিনি জানান।

এ দিকে বৃষ্টির কারণে সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এর বড় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সবজির বাজারে। গত দুই দিনের ব্যবধানেই যশোরের বাজারে প্রতিকেজি সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা করে। সামনে আরও বাড়বে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে বাজারে নতুন সবজির দাম আকাশছোঁয়া।

যশোর বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার প্রতিকেজি শিম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, ফুলকপি ১০০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করোলা ৬০ টাকা, বেগুন, কচুরমুখি, ওল এই তিনটি সবজিই ১০০ টাকা দরে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম তো ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠানামা করছে।

বড়বাজারের সবজির খুচরা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। আড়ত থেকে বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সামনে শীতের মৌসুমের সবজি বাজারে পুরোদমে না আসা পর্যন্ত দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, বৃষ্টিতে আমন ধানের জন্য বড় উপকার হয়েছে। তবে আগাম শীতকালীন সবজির জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন, সামনে যদি বৃষ্টিপাত আর বিলম্বিত না হয় তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে চাষিরা বেঁচে যাবে এবং ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবে।