মাটির উর্বরতা রক্ষায় চাষাবাদ

391

চট্টগ্রাম

আদিত্য বিপ্লব, চট্টগ্রাম থেকে: ইট-পাথরের সমন্বয়ে নগরকে আধুনিক করতে কাজ করেন সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীরা। তারা এবার মাটির উর্বরতা পরীক্ষায় করছেন চাষাবাদ। নগরীর টাইগারপাস পাহাড়ের পাদদেশে ৩০টি প্লটে ভাগ হয়ে করপোরেশনের প্রকৌশলীরা করেছেন শাক-সবজির বাগান। কি নেই এ বাগানে? কলমি শাক থেকে পানিকচু পর্যন্ত শতাধিক সবুজ শাক-সবজির সমারোহ বাগানটিতে। এ যেন পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৌশলীদের সবুজ গড়ার প্রতিযোগিতা।

চাইলেই পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা যেত ভবন কিংবা দোকান। কিন্তু সে পথে হাঁটেননি চসিকের প্রকৌশলীরা। জায়গাটিতে লোহা-সিমেন্ট পুঁতে দেওয়ার বদলে তাঁরা পুঁতে দিয়েছেন সবজি আর ফুলের দানা। শুধু শাক সবজি উৎপাদন নয়, নান্দনিক উপস্থাপনা নজর কাড়বে যে কারোরই। পথচলা বেশ কয়েকজনের মতামত জানতে চেয়ে ভেসে এসেছে মনোরম, সুন্দর চিন্তা আর সৃজনশীল উদ্যোগের প্রশংসায় ব্যবহৃত সবকটি শব্দই।

তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রকৌশলীদের গড়া সে সবজি বাগানেও রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং রহস্য। পাশেই রয়েছে বিন্নাঘাস প্রকল্পের প্রদর্শনী প্লট। পাহাড়ের ক্ষয়রোধে লাগানো হবে এ ঘাস। তাই পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়েছে টাইগারপাস পাহাড়ের পাদদেশে। বিন্নাঘাস লাগানোর পর মাটির উর্বরতা কমে কি-না, তা যাচাই করতে কাজ করবে এ সবজি বাগান। ইতোমধ্যে পরীক্ষা করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বাগানের নমুনা-জানান চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ।

বাগানটিতে প্লট-১ সেজেছে পুরকৌশল, ডি-২ এর মরিচ, ওলকপি, মুলা চাষে। শহুরেদের এসব সবজি চিনতে মোটেও কষ্ট হওয়ার কথা না। তারই সুবিধার্থে প্রতিটি শাক-সবজির প্লটে দেয়া হয়েছে ‘নেম প্লেট’। যেখানে শুধু নাম নয়, ইংরেজি নাম, বৈজ্ঞানিক নাম, ফলনের সময়, ফলনের আনুপাতিক পরিমাণ, সবজি গাছের উচ্চতা আর সবজিতে প্রধানত কি কি ভিটামিন রয়েছে, এমন সবক’টি বৃত্তান্ত উপস্থাপিত হচ্ছে সে প্লেটে। এমন গোছানো উপস্থাপনের কারণও আছে, তা হলো পরীক্ষায় নম্বর লাভ আর সবুজ গড়ার প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার তাড়না।

কথা হয় চসিকের সহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল মাহমুদের সাথে। তিনি জানান, এ উদ্যোগটি নিয়েছেন আমাদের প্রধান প্রকৌশলী। সত্যিকার অর্থে এগুলো আমাদের সজীবতা দেয়, আনন্দ দেয়। বুঝতে শেখায়, কিভাবে একটি গাছ আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠে। তাদের কত যত্নই না করতে হয়। ঠিক এ ছোট ছোট কাজগুলো আমাদের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলে, মনে জন্ম হয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিখাদ ভালোবাসার।

প্লট-২ তে প্রকিউরমেন্ট শাখার সবজি বাগানে ব্যবহার করা হয়েছে কীটনাশকের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ফেরোমেন পদ্ধতি। সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের নামেও রয়েছে একটি প্লট। সে প্লটে অবশ্য কয়েক ধরনের মরিচ ছাড়া আর কোনো সবজির দেখা মেলেনি।

হাটহাজারী মরিচ, লাল মরিচ, কালো মরিচ আর ক্যাপসিকাম চাষ হচ্ছে মেয়রের প্লটটিতে। রসুন, লাল শাক, ধনে পাতা, পালং শাক, ওলকপির সমন্বিত চাষ করা হয়েছে প্লট-১৭ এ পুরকৌশল, ডি-৭ ইউনিট।

এছাড়াও বিভিন্ন প্লটে ভুট্টা, বেগুন, ফরাশ শীম, টমেটো, আলবেরা ফুল, স্ট্রবেরিসহ শতাধিক শাক, সবজি ও ফুলের চাষ। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা মিলেছে সবজি আর শাকের চাষ।

এমন উদ্যোগের বিষয় জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে, কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কাজগুলোর মধ্যে সবুজের উপস্থিতি খুব কম। তাই মাটির কাছে, সবুজের কাছে, মানুষের কাছে ইঞ্জিনিয়ারদের পৌঁছে দিতে এমন উদ্যোগের কথা মাথায় আসে। পরে সকল ইঞ্জিনিয়ারদের সহযোগিতায় সেটি হয়ে উঠে নান্দনিক। তারা ব্যাপারটিকে খুব উপভোগ করছেন। কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতে ঘুরতে যাচ্ছেন।

এছাড়াও তাদের এ প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে, এখানে মার্কিং সিস্টেম রাখা হয়েছে। গত নভেম্বরের ১১ তারিখ উদ্যোগটা নিই, ১৫ নভেম্বর প্লটগুলো বরাদ্দ দিই। তারপর থেকে চলছে কাজ। আর এখন সবজি বাগানটি দেখলে আমাদের প্রকৌশল পরিবারের নান্দনিকতা ফুটে উঠে। একটি মার্কিং শেষ হয়েছে, আরো দুইটা মার্কিংয়ের পর ফেব্রুয়ারিতে পুরস্কৃত করা হবে। তাদের সুন্দর কাজের সুন্দর একটি আয়োজনের মাধ্যমে তাদের পুরস্কৃত করা হবে বলে জানান তিনি।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/আদিত্য/ মোমিন