মাশরুম চাষে ভাগ্য বদল কুষ্টিয়ার সাগর হোসেনের

84

ইচ্ছা থাকলে যে কোনো প্রতিবন্ধকতাই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, তার উদাহরণ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর উপজেলার যুবক সাগর হোসেন (২৫)। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি মাশরুম চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। বর্তমানে বছরে সাগরের বেচা বিক্রি প্রায় ২২ লাখ টাকা। মাশরুম চাষ করে ছাত্রজীবনেই একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সাগর।

সাগর কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের বাবু প্রামাণিকের ছেলে। তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র।

সাগর বছরে প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করেন। খরচ বাদে প্রায় আট থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। চাহিদা থাকায় তার উৎপাদিত মাশরুম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। তার খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচ যুবকের। সাগরের সফলতা ও তুলনামূলক কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এলাকাবাসী অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও সাগরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পড়াশোনার জন্য তিন বছর আগে রাজবাড়ী শহরের একটি মেসে থাকতেন সাগর। এসময় শিক্ষিত যুবকদের অনেককে বেকার থাকার বিষয়টি তাকে নাড়া দেয়। চাকরি না করে কীভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, সেটা ভাবতে থাকেন। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন উদ্যোক্তা হওয়ার। এসময় একটি টিভি চ্যানেলে মাশরুম চাষের ওপর একটি প্রতিবেদন দেখেন সাগর। প্রতিবেদনটি দেখে মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরে যুব উন্নয়ন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেন। টিউশনি করে জমানো টাকা ও বাবার কাছ থেকে ধার নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগে ২০ শতাংশ জমির একটি টিনশেড ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। ২০২১ সালে যখন খামার শুরু করেন তখন স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।

মাশরুম চাষে এলাকার অনেকে বিদ্রুপ করলেও প্রথম বছরেই ব্যাপক লাভের সম্ভাবনা দেখতে পান সাগর। পরের বছর মাশরুম চাষের পাশাপাশি বীজ উৎপাদনের কাজও শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গ্রীষ্ম মৌসুমে তিনি প্রতিমাসে ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি মাশরুম উৎপাদন করেন। আর শীতকালে তিনি প্রতিমাসে এক হাজার থেকে দেড় হাজার কেজি মাশরুম উৎপাদন করেন সাগর। এছাড়া প্রতিমাসে এক লাখ থেকে থেকে দেড় লাখ টাকার বীজ বিক্রি করেন তিনি।

সাগর জানান, তার খামারে কয়েকজন যুবক সারাবছর কাজ করেন। তাদের প্রতিমাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতন দেন তিনি।

জানতে চাইলে যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. মাসুম আব্দুল্লাহ বলেন, কঠোর পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছা থাকায় ছাত্রজীবনেই সফল মাশরুম চাষি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সাগর। স্বল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ থাকায় কৃষি বিভাগ মাশরুম চাষ বৃদ্ধি এবং আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করছে।

ইউএনও বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন এরই মধ্যে উদ্যোক্তা অ্যাপস ও ম্যাপসের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া প্রয়োজনে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণও দেয়া হচ্ছে।