মুরগির রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস রোগ

909

মুরগির রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস (Coccidiosis) রোগ। এটি একটি মোরগ-মুরগির প্রতজোয়ান পরজীবী রোগ (protozoal gastrointestinal disease)। আইমেরিয়া গণের বিভিন্ন প্রজাতির প্রোটোজোয়া (Protozoa) থেকে এ রোগ সৃষ্টি হয়। বাচ্চা মুরগির ক্ষেত্রে এ রোগের প্রভাব তীব্র ও ভয়াবহ হয়। অনেকক্ষেত্রে 70 পার্সেন্ট থেকে 80 পার্সেন্ট বাচ্চা মোরগ-মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মূলত নিচে বর্ণিত ৯ টি প্রজাতি থেকে মুরগির রক্ত আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়।

মুরগির রক্ত আমাশয়
Eimeria Tanella- এটি সবচেয়ে মারাত্মক। এ জীবাণু সিকামে আক্রমণ করে বলে একে সিকাম ককসিডিওসিস বলা হয়। সাধারণত এ প্রজাতি থেকে মোরগ-মুরগির সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।

মুরগির রক্ত আমাশয়ের সাথে গামবোরো রোগের সম্পর্ক
সংক্ষিপ্ত রোগ পরিচিতি
রোগের নাম মুরগির রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস
রোগের ধরণ মুরগির পরজীবী জনিত রোগ
জীবাণুর নাম বিভিন্ন প্রজাতির প্রোটোজোয়া (Protozoa )
সংক্রমণ পোল্ট্রি
মৃত্যুর হার বাচ্চাতে মৃত্যুর হার বেশি।
সংক্রমন সময় যেকোন বয়সে।
চিকিৎসা চিকিৎসায় রোগ সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়।

মুরগির রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস
Aspergillosis fumigatus ব্রুডার নিউমোনিয়া

রোগ ছড়ানোর মাধ্যম
অধিক আদ্রতা এবং লিটারের সেতসেতে ভাব রোগ ছড়ানোর উপযুক্ত মাধ্যম।
আইমেরিয়া আক্রান্ত মুরগির পায়খানার মাধ্যমে জীবাণু বের হয়ে আসে ফলে খাদ্য পানি ইত্যাদি দূষিত হয়।
এ দূষিত খাদ্য-পানীয় লিটার এর মাধ্যমে সুস্থ মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

মুরগির রক্ত আমাশয় রোগের লক্ষণ

কোকসিডিওসিসের প্রথম লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হ’ল ফিড এবং পানির ব্যবহার হ্রাস, যার ফলে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি ঘটে। মুরগির ফোঁটা ফেকাল টেস্টের মাধ্যমে মুরগীতে কোকসিডিওসিস নির্ণয় করা হয়। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে মলদ্বারটি তাকানো হলে আইমরিয়া ডিমগুলি সনাক্ত করা যায়। একটি সম্পূর্ণ রক্ত গণনা (সিবিসি) আক্রান্ত পাখিগুলিতে লোহিত রক্তকণিকা এবং মোট প্রোটিন স্তরের গণনা হ্রাস করতে পারে।

পাতলা পায়খানা করে।
পায়খানার সাথে রক্ত নির্গত হয় এজন্য এ লক্ষ্যে রক্ত আমাশয় বলা হয়।
খাদ্য খাওয়া বন্ধ করে দেয় পালক উস্কোখুস্কো হয়ে যায়।
মাথা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে মুরগি ঝিমাতে থাকে।
দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে সমস্ত বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
১০০ টি বাচ্চার মধ্যে প্রতিদিন আট থেকে বারটি বাচ্চা মারা যেতে পারে।

মৃত্যুর পূর্বে বাচ্চাগুলো লিটারে শুয়ে পড়ে এবং চার থেকে পাঁচ ঘন্টা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে এবং পরে মৃত্যুবরণ করে।
মুরগির রক্ত আমাশয় রোগের চিকিৎসা

নিচে উল্লেখিত চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট বা প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।

মুরগির রক্ত আমাশয় ঔষধ
মুরগির রক্ত আমাশয় বা সাধারণ আমাশয় রোগে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা এ রোগে মৃত্যুর হার বেশি ও এ রোগ ব্রয়লার মুরগির উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। লেয়ার মুরগির ডিমের উৎপাদন কমে যায়। সোনালি মুরগির রক্ত আমাশয় মুরগির ওজন কমে যায়।

এন্টিবায়টিক ঔষধ
ইএসবি ৩ প্লাস– প্রতি লিটার খাবার পানিতে 1 গ্রাম ইএসবি ৩ প্লাস মিশিয়ে তিন থেকে সাত দিন খাওয়াতে হবে।
ককট্রিট ডব্লিউ ডি-পি– প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম মিশিয়ে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
ককসিকিউর পাওডার– প্রতি লিটার খাবার পানিতে 2 থেকে ২.৫ গ্রাম মিশিয়ে তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে।
এন্টিপ্রোটোজোন ঔষধ

মুরগির এন্টিপ্রোটোজয়ান ঔষধের মধ্যে এম্প্রোলিয়াম ও টল্ট্রাজুরিল ঔষধ অন্যতম। মুরগির রক্ত আমাশয় রোগের জন্য এই গ্রুপের একটি ভালো কোম্পাণির ঔষধ প্রয়োগ করা যেতে পারে।

অন্যান্য ঔষধ
মুরগির আমাশয় আথবা মুরগির রক্ত আমাশয় রোগের জন্য রোগের উপসর্গ বুঝে আরো অনেক প্রকার ঔষধ প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে পিএইচ বা এসিডিফায়ার, ইলেকট্রোলাইট বা স্যালাইন, প্রবায়টিক এবং প্রিবায়টিক প্রিমিক্স ইত্যাদি অন্যতম।

মুরগির রক্ত আমাশয়ের সাথে গামবোরো রোগের সম্পর্ক
ব্রয়লার মুরগির রক্ত আমাশয় হলে একই সাথে গামবোরো রোগ থাকার সম্ভাবনা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মুরগির রক্ত আমাশয় এর চিকিৎসা দিয়েও মৃত্যু রোধ করা যায় না। সেক্ষেত্রে মুরগির ময়নাতদন্ত করে রোগ নির্নয়ের মাধ্যমে চিকৎিসা দিতে হবে। এ ধরনের সমস্যায় মুরগির রক্ত আমাশয় রোগের চিকিৎসা বা ঔষধের সাথে গামবোরো রোগের ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় মুরগির মর্টালিটি চেক দেওয়া যাবে না।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৬ নভেম্বর ২০২১