লিচু গাছে মুকুল থেকে ফল আসা পর্যন্ত করণীয়

425

লিচু বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে চাষ হলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে দিনাজপুর, রংপুর, বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর প্রভৃতি অঞ্চলে লিচু বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ পরিসরে চাষ হয়ে থাকে।

দিনাজপুরে বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদানা, চায়না-৩, চায়না-৪ জাতের লিচু চাষ হয়ে থাকে। দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাসিমপুরে চাষ করা হয় ‘বেদানা লিচু’ যা সুগন্ধি, সুস্বাদু ও রসালো হওয়ায় দেশে ও বাইরে এ লিচুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এসব লিচু বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়েও রপ্তানি করা হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
লিচু গাছে মুকুল আসা থেকে শুরু করে ফল ধরা পর্যন্ত পরিচর্যাঃ লিচু গাছে মুকুল আসার আগ থেকে ফল আসা পর্যন্ত প্রায় ৩ মাস সঠিক পরিচর্যা করা অত্যন্ত জরুরি।

গাছের যথাযথ বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য সঠিক নিয়মে ও পরিমাণমতো সার প্রয়োগ করা জরুরি। নিম্নে সারের পরিমাণ উল্লেখ করা হলো-
সারের নাম গাছের বয়স (বছর ) ১-৪ ৫-১০ ১১-২০ ২০ এর ঊর্ধ্বে
গোবর (কেজি ) ১০ ২০ ৩০ ৫০
ইউরিয়া (গ্রাম ) ৩০০ ৮০০ ১২০০ ২০০০
টিএসপি (গ্রাম ) ৪০০ ১২০০ ২০০০ ৩০০০
এমওপি (গ্রাম ) ৩০০ ৮০০ ১২০০ ১৫০০
জিপসাম (গ্রাম ) ১০০ ২০০ ২৫০ ৩০০
জিংক সালফেট(গ্রাম) ১০ ২০ ৩০ ৫০
বোরন সার ৫ ১০ ১৫ ২০

উল্লিখিত সার বছরে ৩ কিস্তিতে লিচু গাছে প্রয়োগ করতে হবে। ১ম কিস্তি বর্ষার শুরুতে ( ফল আহরণের পর ), ২য় কিস্তি বর্ষার শেষে ( আশ্বিন- কার্তিক মাসে ) এবং শেষ কিস্তি গাছে ফুল আসার পর প্রয়োগ করতে হবে।

নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে। মাটির ধরণ অনুসারে খরার সময় ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।
গাছে মুকুল আসার আগে ১ বার, গাছে যখন ফল মটরদানার সমান হবে তখন ১ বার এবং মার্বেল আকার ধারণ করলে ১ বার প্লানোফিক্স ( ১ মিলি/৪.৫ লিটার পানি)/মিরাকুলান (১ মিলি/ লিটার পানি)/ফ্লোরা ( ২ মিলি/লিটার পানিতে ) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লিচু গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে ল্যাম্বডাসাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কোনো কীটনাশক ( ফাইটার/ রীভা ২.৫ ইসি) ১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া কার্বেন্ডাজিম জাতীয় একটি ছত্রাকনাশক (করজিম/নোইন/বেনডাজিম ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। একই সময় ফ্লোরা ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। লিচু গুটি বা মটরদানার সমান হলে একইভাবে উল্লিখিত কীটনাশক, ছত্রাকনাশক এবং পিজিআর ( PGR ) আরেক বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
ফল বৃদ্ধির সময় জিংক সালফেট ১০ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩ সপ্তাহ পর পর গাছে স্প্রে করলে গাছে ফল ফাটা ও ফল ঝরা সমস্যা দূর হওয়াসহ এবং ফলের আকৃতিও বড় হয়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৮ডিসেম্বর২০২০