লেবু মিয়ার ভাগ্য পরিবর্তনের গল্প

136

জেলার সমতলের মাটিতে ফলেছে এখন ভারতের দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি জাতের কমলা সাদকি। আকারে বড়, রসালো এ কমলার রঙ ও স্বাদ রয়েছে অটুট। নীলফামারী সদরের কচুকাটা গ্রামের এ আর লেবু মিয়া (৫৬) নার্সারি ব্যবসার পাশিপাশি গড়ে তুলেছেন একটি বাগান। সে বাগানে পাহাড়ি সাদকি জাতের কমলার রঙ, স্বাদ ধরে রাখতে সফল হয়েছেন তিনি। গত কয়েক বছর থেকে ফল পাওয়ায় এখন বেড়েছে বাগানের পরিধি।

গ্রামটিতে কচুকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে এ আর মামুন নামে তার ওই নার্সারির অবস্থান। এরই একটি অংশে গড়ে তুলেছেন পাহাড়ি সাদকি জাতের কমলার বাগান। ২০১৩ সালে ভারতের দার্জিলিং থেকে দুটি সাদকি জাতের কমলার চারা এনে রোপণ করেছিলেন নার্সারিতে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে চারা তৈরীর পর গত বছর থেকে পরিপূর্ণ ফল পেতে শুরু করেছেন ৬০টি গাছে। বাগানের পরিধি বাড়ায় আগামী বছর পাঁচ বিঘা জমিতে আরো ৬০০ গাছে ফল পাওয়ার আশা প্রকাশ করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তার নার্সারিতে প্রস্তুত আছে ৮০ হাজার সাদকি জাতের কমলার চারা। শুধু কমলা এবং মালটা মিলে নার্সারিতে রয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার চারা। বাগানে ফল দেখে আগ্রহী হয়ে অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সে চারা।

লেবু মিয়া জানান, একসময়ে অর্থভাবে লেখাপড়ার করতে পারেনি তার বড় ছেলে। এরপর নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে ২০০১ সালে এক বিঘা জমি চুক্তি নিয়ে শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। দিনে দিনে বাড়তে থাকে প্রসার। বর্তমানে ২৫ বিঘা জমি ক্রয় করে বৃদ্ধি করেছেন নার্সারির এলাকা। সেখানে প্রতিদিন কাজ করছেন ৩৫জন শ্রমিক। এছাড়া চায়না কমলা, বিভিন্ন জাতের মাল্টা, ত্বিন ফল, পেপে, মিষ্টি লেবু, অ্যাভোকাডো, জয়তুন, মালবেরি জয়তুন, বিভিন্ন প্রজাতির আমসহ ফিলিপাইন আম, ব্লাকবেরি, লিচুসহ ফুল ও ফলের বাগান ছড়িয়েছেন ৪৯ বিঘা জমিতে। বাগানের এমন পরিধিতে গত বছর ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে আয় করেছেন ৮০ লাখ ১৪ হাজার টাকা। দিনে দিনে বাড়ছে তাঁর আয়ের পরিধি। অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে না পারা বড় ছেলে এ আর হারুন খুঁজে পেয়েছেন কর্মের পরিধি। মেজ ছেলে এ আর মামুন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়ার পাশপাশি দেখভাল করছেন ব্যবস্যার। একমাত্র মেয়ে মাহমুদা আক্তার লিহা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির
তার বাগানে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি গাছে থোকায়-থোকায় ঝুলছে পাকা কমলা। সুমিষ্ট পাকা কমলার রঙ আকৃষ্ট করছে মানুষকে। সেখানে আগতরা সুমিষ্ট পাকা কমলা খেয়ে তৃপ্ত হচ্ছেন আর লেবু মিয়ার কাছে মনযোগ সহকারে শুনছেন বাগান গড়ার সফলতার গল্প।

লেবু মিয়া জানান, গত চারবছর ধরে তার বাগানের ৬০টি কমলা গাছে ফল আসছে। এসব ফল বাজারে বিক্রি না করে দর্শনার্থীদের খাওয়ার জন্য রেখেছেন। ফল খেয়ে তৃপ্ত হয়ে অনেকে চারা সংগ্রহ এবং বাগান তৈরীতে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামী বছর আরও ৬০০ গাছে ফল আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

লেবু মিয়ার মেজ ছেলে এ আর মামুন বলেন, ‘আমরা যখন কমলা বাগান করি- তখন অনেকে বলেছিলেন এটা শীত প্রধান এলাকার পাহাড়ি ফল। সমতলে হবে না, ফল হলেও টক হবে, আকারে ছোট হবে। কিন্তু এখন তারাই এসে এ ফল খেয়ে প্রসংসা করছেন।’

এআর মামুন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের মাধ্যমে ফলের চারা সংগ্রহ করি। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে বাগানে লাগাই। গাছে ফল আসার পর মান ভালো না হলে সে গাছ কেটে ফেলি। মানসম্মত হলে ওই গাছ থেকে চারা উৎপাদন করে বাজাজাত করি। আমাদের বাগানের সাদকি কমলা খুবই সাড়া ফেলেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ চারা সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করছেন। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে আগ্রহীদের মধ্যে চারা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি।’

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোছা. হোমায়রা মন্ডল বলেন, ‘সাদকি কমলার জাতটি পাহাড়ি হলেও নীলফামারীর সমতলের মাটির আবহাওয়ার সঙ্গে ভালোই খাপ খেয়েছে। রসালো ওই কমলার স্বাদ এবং আকার অক্ষুন্ন আছে। এ আর মামুন নার্সারি বাগান করে রীতিমতো ফল ফলিয়ে দেখাচ্ছেন যে এখানে ফলন সম্ভব। বিভিন্নজন চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানেও ফলন ভালো হচ্ছে। আমরা চাষীদের উৎসাহিত করছি, যাতে নীলফামারীসহ আশপাশ অঞ্চলে কমলার বাগান আরও বাড়ে। যে কমলা বাইরের দেশ থেকে এনে আমরা খাই সেটির ব্যাপকতা বাড়লে হাতের নাগালে বাগান থেকে নিরাপদ ফল পাবেন ভোক্তরা। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’