সংগ্রামী এক নারীর নাম ফাতেমা

362

নারী

সাহসী, অদম্য ও আত্মপ্রত্যয়ী এক নারীর নাম ফাতেমা। যার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এলাকার বিবাহিত ও শিক্ষিত বেকার নারীরাও। নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছেন, আয়ের পথ দেখিয়েছেন অন্য নারীদেরও । তিনি এখন অন্য নারীদের আলোর পথ প্রদর্শক।

প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফাতেমা। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা ফাতেমার বিয়ে হয়েছিল কিশোরী বয়সে উপজেলার কোলা ইউনিয়নের থৈরগাঁও গ্রামের মো. ইউসুফ আলীর সাথে। বিয়ের ৩ বছরের মাথায় স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তখন ফাতেমার চোখেমুখে অন্ধকারের ছাপ। আর দিন দিন স্বামীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

স্বামী প্রায় ১১ বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে না ফেরার দেশে চলে জান। স্বামীকে ক্যান্সার থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন ফাতেমা। এরপর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ফাতেমার সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ২০০৬ সাল থেকে হস্তশিল্প দিয়ে শুরু করেন জীবনযুদ্ধের পথচলা। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। ২০১৫ সালে হাঁস-মুরগির খামার দিয়ে কয়েক বছরের মাথায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন আবার অন্য নারীদেরও স্বাবলম্বী করে ঘুচিয়েছেন বেকারত্ব।

ধৈর্য এবং সততার সাথে ক্ষুদ্র ব্যবসা করেও স্বাবলম্বী হওয়া যায় এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলার থৈরগাঁও গ্রামের মো. ইউসুফ আলীর স্ত্রী ফাতেমা। ২ সন্তান নিয়ে ৩ জনের সংসার ফাতেমার। আস্তে আস্তে দরিদ্রকে জয় করে মুখে হাসির ঝিলিক পড়তে থাকে ফাতেমার। হাঁস-মুরগি, মাছচাষ, হস্তশিল্প— সবমিলিয়ে তিনি সফল হওয়ার দিকে এগিয়ে জান।

বর্তমানে ফাতেমার খামারে রয়েছে চিনাহাঁস বড় ২৪টি, বাচ্চা ২২টি, দেশি প্রজাতির হাঁস বাচ্চা ২০০, মাংসের জন্য বড় হাঁস ১৮০টি, ডিমের হাঁস ৪৫টি। এছাড়া ৩টি পুকুরে মধ্যে ২টিতে রয়েছে কাপ মিক্স, আরেকটিতে মৌসুমি মাছ। তার খামারে হাঁসের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তিন মাস বিরতিহীনভাবে প্রতিদিন হাঁসগুলো গড়ে ডিম দেয় ৫০টি। প্রতিটি ডিম ১২ টাকা হিসাবে বিক্রি করেন ৬০০ টাকা।

এছাড়া তিন থেকে চার মাস পর পর পরিপক্ব হাঁস প্রতিটি বাজারে বিক্রি হয় ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। হাঁসের বাচ্চা কিনে এনে পালন করে প্রতিটি পরিপক্ব হতে খাদ্য ও ওষুধ বাবদ সাকুল্যে খরচ হয় প্রায় ১৫০ টাকা। এসব মিলিয়ে ফাতেমার মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। ফাতেমা সন্তানদের নিয়ে এখন সুখে জীবন যাপন করছেন।

কর্মী নাছিমা বেগম জানান, আগে আমার সংসারে অনেক অভাব ছিল। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারতাম না। কিন্তু ফাতেমার এখানে কাজ করার পর থেকে সংসারের অভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাচ্ছি এখন। ফাতেমার কর্মী রেখা মন্ডল কষ্ট নিয়ে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তান নিয়ে জীবন চলা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফাতেমা আপার কাছ থেকে নকশি কাঁথার কাজ পাওয়ার পর থেকে সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারছি। এখন সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি আমি।

ফাতেমা বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। কিন্তু আমি হার মানি নাই। জীবনযুদ্ধে জয় পাওয়ার আশায় অন্যের কাঁথা শেলাই করি। কিছু দিন পর আমি এলাকার নারীদের দিয়ে হস্তশিল্প শুরু করি। এখন আমি আমার জীবনযুদ্ধে সফল হয়েছি। আমি মনে করি নারীরা আর দুর্বল নয়, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এখন অনেক এগিয়ে গেছেন।

যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ডলিরানী নাগ বলেন, জীবনের সাথে যুদ্ধ করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন ফাতেমা। তিনি বেকারত্ব দূরীকরণে অনেক বড় ভূমিকা রাখছেন। আমরা বেকার নারীদের ট্রেনিং ও আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের দিকে উদ্বুদ্ধ করছেন। ফাতেমা আমার দেখা একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তার মতো বেকার নারীরা এগিয়ে এলে দেশের বেকারত্ব কমবে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশফিকুন নাহার বলেন, অবহেলিত নারীদের জন্য ফাতেমা একটি দৃষ্টান্ত। নারীরা আর পিছিয়ে নেই এটা ফাতেমাকে দেখলেই বোঝা যায়। আমরা ফাতেমার পাশে আছি সবসময়। ফাতেমার কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ