বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এই দুই জেলায় প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসনের হিসাবে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সিলেটে বন্যায় প্রাণিসম্পদে ক্ষতি ২ কোটি ছাড়িয়েছে। জেলায় সাড়ে ৪ লাখ মুরগি ও ২ লাখ গরু বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বন্যাকবলিত পশু-পাখির সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ১৯২ টি হাঁস, ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৪৩৯টি মুরগি, ২ লাখ ৮১৩টি গরু, ৪৮ হাজার ৪১১টি ছাগল, ২৬ হাজার ৮৭৭ টি মহিষ ও ১৮ হাজার ১৫৫ টি ভেড়া বন্যার কবলে পড়েছে।
জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, সিলেট সদর, জকিগঞ্জ, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও মহানগরী বন্যাকবলিত হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জে পৌর শহর, সদর উপজেলা, ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, দিরাই বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব এলাকার হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, ভেড়া, মহিষ পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ২ কোটি টাকার ঘাস ও খড়।
বন্যা পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সিলেটের ৩টি উপজেলা বিভাগীয় শহর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একইসঙ্গে বন্যাকবলিত সবকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। হাঁস-মুরগির খামারগুলো পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে গেছে পশু-পাখির খাবার। পানিতে ভিজে পোল্ট্রি ও গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে। এ যেন বিভীষিকাময় রাজ্য!
জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় ২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। আজ ১৯ জুন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: রুস্তম আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিনি জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোতে ইতোমধ্যেই প্রায় ২ হাজার ৬১৫ টি মুরগি, ৪৪৭টি হাঁস, ১১টি গরু, ২৪টি ছাগল, ৪ টি মহিষ মারা গেছে। কয়েক হাজার গবাদি ও পোল্ট্রি খামারে পানি উঠেছে। ২ কোটি ৯ লাখ টাকার উপরে খড় ও ঘাস পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত সকল উপজেলায় পশু খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা কবলিত পশুকে পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচাতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডা. মো: রুস্তম আলী চলমান কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলায় সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদের রোগ জরুরি ভিত্তিতে নির্ণয়ের জন্য পশু রোগের মেডিকেল টিম গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যা কবলিত প্রতিটি উপজেলায়ও পৃথক পৃথক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
যে কেউ যেকোন সময় অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্ডদ কর্মকর্তা ড. মো: শহীদুল ইসলাম (০১৭১১৪৮৪৯৪৫) এবং জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ক্যাশিয়ার সূর্য্য কুমার দত্ত (০১৭১১৩০৫৭৬০) নাম্বারে কল দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সহযোগিতা নিয়ে পৌঁছে যাবে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২০জুন ২০২২