সোনালীতেই স্বাবলম্বী দুলালের দুই ছেলে

370

নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের কুড়াইল সরদারপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ দুলাল মন্ডল। বাড়ির সামনেই ৮ বছর আগে দুই বিঘা জমিতে ছিল আমবাগান। এখন আর সেই বাগান নেই। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় পোল্ট্রি খামার।

বৃদ্ধার দুই ছেলে বায়োজিদ বোস্তামি ও সোবহান রহমান। দুই ভাইয়ের তিনটি খামার। এসব খামারে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সোনালী মুরগির বাচ্চা। সোবহানের খামারে দেড় হাজার ও বায়োজিদের ৩ হাজার সোনালী মুরগি। এসব মুরগির বাচ্চাতেই স্বপ্ন বুনছেন বায়োজিদ। কারণ, করোনায় যে তাঁর স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে! লোকসান হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

বৃদ্ধার আবাদযোগ্য কৃষি জমি নেই বললেই চলে। দুই ছেলেকে কিভাবে নিজ পায়ে দাঁড় করানো যায় সেই চিন্তা মাথায়। সেই চিন্তা থেকেই সরিয়ে দিলেন আমবাগান। দুই ছেলের কিছুতো একটা হোক! ৮ বছর আগে দুই ছেলেকে দুটি শেড তৈরি করে দেন তিনি।

এলাকায় অধিকাংশ খামারেই সোনালী মুরগি চাষ হয়। সম্ভাবনা বুঝে শুরু করিয়ে দিলেন সোনালী মুরগির চাষ। সোবহান সাম্প্রতিক তিন বছরে লাভ করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকা। তা দিয়ে শুরু করেছেন আমবাগান ইজারা নেওয়ার ব্যবসা। ৫০ বিঘা ইজারা নেওয়া আমবাগান থেকে ৩ বছরে ঘরে তুলেছেন ১৬ লাখ টাকা। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সোবহানকে। চিন্তা দূর হয়েছে দুলাল মন্ডল।

করিম মোল্লার বড় ছেলে বায়োজিদের দুই ছেলে মুজাহিদ (১১) ও মাসুম (৭)। দাদা হিসেবে দুলাল মন্ডলের চিন্তা যেন আরেকটু বেশিই। বড় ছেলেকে ব্যবসা বাড়ানোর পরামর্শ তার। দেড় বছর আগে ১০৫ ফিট দৈঘ্য ও ২৫ ফিট প্রস্থের আরেকটি খামার তৈরি করেন বায়োজিদ। ধানী জমির পাশেই তারজালি দিয়ে ঘেরা খামারটি দুর থেকেও চোখে পড়ে। খামারে রয়েছে ৩ হাজার সোনালী মুরগির বাচ্চা। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখে ১দিন বয়সী বাচ্চা তোলেন তিনি। বাচ্চার বয়স এখন ১০ দিন।

বায়োজিদের সাথে কথা হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। বায়োজিদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এই এলাকায় প্রায় সত্তর থেকে আশি হাজার সোনালী মুরগি পালন করা হয়। সবগুলো সোনালী মুরগি। এসব মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ঔষুধ সবকিছু নিয়ে আসতে হয় ডিলারের কাছে থেকে। বাঁকি নেওয়ার কারনে দাম ধরে বেশি। করোনার মধ্যে প্রতিবস্তা খাদ্যে দাম বেড়েছে দেড়শ টাকা। মুরগি যদি ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয় তাহলে বাচ্চার দাম ধরে কম, ৮ থেকে ১০ টাকা। আবার যদি মুরগি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয় তাহলে বাচ্চার দাম বেড়ে যায়। তখন প্রতিপিস বাচ্চা ২০ টাকার উপরে দাম ধরে।

এই খামারি আরোও বলেন, আমরা নিজেরা ইচ্ছামতো মুরগি বিক্রিও করতে পারি না। মুরগি বড় হলে ডিলারের কাছে দিতে হয়। তার মাধ্যমে ঢাকায় যায় এসব মুরগি। লাভ যা হয় তার অর্ধেক পাই আমরা। কারণ অর্ধেক টাকা বাঁকি শোধ করতেই চলে যায়। ডিলার সেই টাকা কেটে রেখে দেয়। তবে, লাভ লোকসান মিলেই ব্যবসা চলে।

বায়োজিদের ছোট ভাই পোল্ট্রি খামারি সোবহান রহমান বলেন, আমরা নগদ টাকায় ব্যবসা করতে পারিনা বলে ডিলাররা সুযোগ নেয়। মিলে হক ফিডের বস্তা ১৯”শ ৫০ টাকা। আর আমাদের কাছে ডিলাররা দাম ধরে ২১’শ ৯০ টাকা। নগদে কিনলে দাম কিছুটা কম পাওয়া যেতো। আবার মুরগি বিক্রি করার সময় ডিলারকেই দিতে হয় বাধ্য হয়ে। ঢাকার পার্টিকে (পাইকারি ব্যবসায়ীদের) দিলে যদি টাকা না দেয়! এই ভয়ে ডিলারের হাতেই মুরগি বিক্রি করি। যদি বলে ১৩০ টাকা তো তাই, আবার ১৯০ টাকা বললেও তাই। তার পরেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হবে তাই রাখা। আমি মূলত আমের ব্যবসার দিকে নজর দিয়েছি। ৬ মাসে দ্ইু চালান মুরগি তুলি।

বায়োজিদের বাবা দুলাল মন্ডল বলেন, একজন বলল- ছেলেদের পোল্ট্রি খামার করে দিতে, ভালো লাভ আছে। আমবাগান কেটে ফেলে দুই ছেলেকে খামার করে দিয়েছি। এখন ছোট ছেলের ১ টা আর বড় ছেলের দুইটা। করোনার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। সরকারি কোন সহায়তা পাইনি। কাগজপত্র নিয়ে গেছে ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা পাওয়া যাবে বলে। এখোনো কোন টাকা পাইনি। তবে, এখন যে সোনালী মুরগির দাম আছে এরকম থাকলে ব্যবসা করা যায়। কিন্তু এ দাম তো আর থাকে না। মুরগি বেঁচার উপযোগী হলেই দাম কমে যায়। তবে, দুই ছেলেকে নিয়ে আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি।

উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা: মোঃ গোলাম রাব্বানী বলেন, উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নে অনেক খামার রয়েছে। ডিমপাড়া লেয়ার বা ব্রয়লার মুরগি সেখানে মূলত পালন হয় না। সবগুলোই সোনালী মুরগি। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে নিয়মিত খোঁজ খবর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া খামারিরা মোটামুটি অভিজ্ঞ। কোন সমস্যা হয়না। আমাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে। জনবল নিয়োগ হলে কাজের আরো গতি ফিরে আসবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২২ফেব্রুয়ারি২০২১