ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার : কাদাকনাথ মুরগির কালো মাংসের জন্য বিখ্যাত। এর উৎপত্তিস্থল ভারতের মধ্যপ্রদেশ। এটি মূলত সেখানে কালী মাসী বা কড়কনাথ নামেই বেশি পরিচিত। মাংসের গুণগত মান এবং স্বাদের জন্যই এর জনপ্রিয়তা বেশি। বিশেষ করে যদি বলতে হয় তবে এর ঔষুধি গুনাগুণ এর জন্যে বিশেষ মহলে এর যথেষ্ট কদর রয়েছে। স্নায়বিক রোগের অন্যতম প্রতিশোধক হিসেবে এটার ভূমিকা আছে। কাদাকনাথ মুরগির যথেষ্ট বাণিজ্যিক সম্ভবনা আছে যা দিন দিন আরও ব্যাপকতা পাচ্ছে। এর মাংস, হাড়, গায়ের রং মাথার ঝুঁটি সবই প্রায় কালো, শুধুমাত্র ডিম হালকা বাদামী রঙয়ের হয়ে থাকে।
কালো রঙের ওই জাতের মুরগি কাদাকনাথের খামার এখন রাজশাহীর বাগমারায়। উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের গোয়ালকান্দি গ্রামের গৃহবধূ শিরিনা নিজ বাড়িতে ওই মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। এ কাজে শিরিনাকে সহযোগিতা করছেন তার স্বামী ও দুই ছেলে।
শিরিনা প্রায় দশ বছর আগে থেকে পোল্ট্রি মুরগির খামার গড়ে তুলেন নিজ বাড়িতে। তার পোল্ট্রিতে এখনো লেয়ার ব্রয়লার, টাইগার, টার্কিসহ নানা জাতের মুরগি রয়েছে। মুরগি পালনে শিরিনার অভিজ্ঞতা কম নয়। আর এভাবে নানা জাতের মুরগির খামার করেই তিনি সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।
এদিকে প্রায় দুই বছর আগে তিনি খোঁজ পান কালো রঙের কাদাকনাথ মুরগির। মাংস সুস্বাদু, ঔষধি গুণসম্পন্ন ও দামি এবং এর ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করেও অধিক লাভবান হওয়া যায়। এ কথা জানার পর তিনি নরসিংদী থেকে প্রতিটি ৮০০ টাকা করে ২২টি কাদাকনাথ মুরগির বাচ্চা কিনে আনেন। ওই মুরগির হাড়, মাংস, জিব, নখ পর্যন্ত কুচকুচে কালো।
নিজস্ব ইনকিউবেটরের মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন করেন তিনি। এই ২২টি মুরগির ডিম থেকে এখন শিরিনার খামারে রয়েছে ২৫০টি এক মাসের বাচ্চা। প্রতি সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০টি নতুন বাচ্চা যোগ হচ্ছে শিরিনার খামারে। গত দুই মাস থেকে তিনি বাচ্চা বিক্রি আরম্ভ করেছেন। তার খামারে নতুন প্রজাতির মুরগি দেখতে প্রতিদিনই উৎসুক নারী পুরুষের ভিড় দেখা যায়।
জানা যায়, এই জাতের মুরগির আদি নিবাস ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপ। সেখানে এটাকে বলা হয় ‘আয়্যাম কেমানি’। ভারতের মধ্য প্রদেশে কাদাকনাথ ‘কালোমাসি’ বা ‘কড়কনাথ’ নামে পরিচিত।
নারী উদ্যোক্তা শিরিনা জানান, এ জাতের মুরগির বৈশিষ্ট হলো ২১ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদিত হয়। এক মাস বয়সি বাচ্চার দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেড় মাস বাচ্চার দাম এক হাজার টাকা এবং দুই মাসের বাচ্চার দাম এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।
তিনি আরও জানান, কাদাকনাথের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হলো এই জাতের মুরগির খাবার খরচ খুবই কম আর পুষ্টি উপাদান ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য সব মুরগির চেয়ে বহুগুনে বেশি। বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে বাগমারায় মন্দা অবস্থা বিরাজ করলেও শিরিনা আশা পোষণ করেন কাদাকনাথ পালনের মাধ্যমেই তিনি অধিক লাভবান হবেন।
তিনি আরো জানান, মাংসের জন্যে পালতে চাইলে এবং ভালো মানের খাবার দিলে ১০০ থেকে ১২৫ দিনে এগুলোর ওজন ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২৫০ গ্রাম হয়। এই অসাধারণ মুরগিটি আমাদের দেশি মুরগির মত ছেড়ে পালন করা যায়, তবে ভালো ফলাফল এবং সুস্থ সবল মুরগি পেতে হলে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন।
এর মাংস স্বাদে অনন্য, এতে ঔষধি গুণ বিদ্যমান, যেকোন পরিবেশে পালন করা যায়, বাজার মূল্য ভাল, এই মুরগির মাংসে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বিদ্যমান, এই মাংস মানুষের শরীরে রক্ত কোষ এবং হিমোগ্লোবিন তৈরি করে, ফুসফুস সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখে, এর মাংস দ্রুত হজম হয় এবং শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, এর ডিম মাথাব্যথা, পোস্ট ডেলিভারি সমস্যা, হাঁপানি ও নেফ্রাইটিস এর সমাধান করে, এদের মাংসে কয়েকটি প্রয়োজনীয় ভিটামিন যেমন, বি ১, বি ২, বি ৬, বি ১২, সি, এবং ই বিদ্যমান, এতে আরও রয়েছে নিয়াসিন, প্রোটিন, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, এবং নিকোটিনিক অ্যাসিড।
এছাড়াও এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অসাধারণ, এই মাংসে অত্যধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ, এই মাংসে চর্বি এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা খুবই কম যা হার্টের এবং ডায়াবেটিস রোগিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও এটাকে বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় মুরগির মধ্যেও ধরা হয়।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ইলিয়াস/মোমিন