চাষ হচ্ছে মাচায়: রমজানে বাড়তি আকর্ষণ চুয়াডাঙ্গার তরমুজ

426

tbg120170531201018

কামরুজ্জামান সেলিম, চুয়াডাঙ্গা থেকে: চুয়াডাঙ্গার মাটিতে তরমুজের চাষ হবে তা ৮ বছর আগেও ভাবেনি কৃষকরা। তার ওপড় অসময়ে মাটির পরিবর্তে লাউয়ের মতো মাচায় তরমুজ চাষের এমন ধারণা না থাকলেও লাউ কুমড়ার মতোই দিব্যি চাষ হচ্ছে তরমুজের। মাটি থেকে অল্প উঁচু করা মাচায় শত শত ঝুলন্ত তরমুজে ভরে গেছে খেত। জাপানের ব্ল্যাক বেবি, তাইওয়ানের জেসমিন-১ ও জেসমিন-২ জাতের তরমুজ চাষ করে সফল হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।

এদিকে রমজান মাসের শুরুতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে চুয়াডাঙ্গার তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় তরমুজ পাঠিয়েছেন সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন। আরও অনেক কৃষক ১৫ রোজার মধ্যে তরমুজ ঢাকায় এবং স্থানীয় বাজারে পাঠাতে শুরু করবে। এসব কৃষকরা তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হবেন বলেও আশা করছেন।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২ হাজার ৫শ বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২ হাজার ২শ বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় ১২শ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ হয়। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৮শ ২৫ বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ হয়।

সাধারণত আমাদের দেশে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে তরমুজের চাষ হয়ে থাকে। এই তরমুজই চুয়াডাঙ্গা জেলায় ব্যবসায়ীরা আমদানি করে বিক্রি করেন। এ বছরও ফাল্গুন চৈত্র মাসে দেশের যেসব জেলা তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত সেসব এলাকা থেকে তরমুজ আমদানি করে বিক্রি করেছেন চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা। এখন আর সেই তরমুজ বাজারে নেই। তবে জাপান থেকে আমদানি করা বীজে চুয়াডাঙ্গার মাটিতে উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি করে বর্তমানে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে তিন বিঘা জমিতে প্রথম এই তরমুজের চাষ করেন গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ। তার সফলতা দেখে পরের বছর এই তরমুজ চাষ করেন গাড়াবাড়িয়া গ্রামের রতন আলী, লুৎফর রহমান, আজমত আলী, আব্দুস সাত্তার, সুবদিয়া গ্রামের ছানোয়ার হোসেন ও আজিজুল হকসহ আরও অনেকে।

কৃষকরা জানান, এই তরমুজ চাষে বিঘা প্রতি লাভ হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। জেলায় জাপানের ব্ল্যাক বেবি, তাইওয়ানের জেসমিন ১ ও ২ জাতের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদ হচ্ছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সারিবদ্ধ ভাবে তরমুজের বীজ লাগাতে হয়। এটি আবাদে মালসিং পেপারের দরকার হয়। বাঁশ দিয়ে নেট করে মাচা তৈরি করে দেয়া হয়। অধিক ফল ধরলেও প্রতিটি গাছে দুইটি করে ফল রাখলে ভালো। এতে ফল অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও পরিপুষ্ট হয়। পরিপুষ্ট একটি তরমুজ ৫ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এ তরমুজের সেরাটা চলে যায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে। বাকিগুলো বিক্রি হয় চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের তরমুজ চাষি শরীফ উদ্দীন হাসু জানান, নতুন জাতের তরমুজ প্রতিটি এক থেকে চার কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। দেশীয় তরমুজ পাঁচ থেকে ১০ কেজি হলেও নতুন জাতের এই তরমুজ খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। এবারের রোজার বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। মাত্র ৬০ দিনেই উৎপাদন সম্পন্ন হয়। যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় সময় লাগে অনেক কম।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাশরুর জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার তাইওয়ানের জেসমিন-১, জেসমিন-২ ও জাপানের ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজের আবাদ সবচেয়ে বেশি। এবার কোনো পোকামাকড়ের আক্রমণ ছিল না। তাই দামও অনেক বেশি পাচ্ছে কৃষকরা।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম