এক ফসলি জমিতে পশুর খামার

96

বর্ষাকালে বন্যার পানি আর শুষ্ক মৌসুমে খাঁ খাঁ ছিল ‘সিংশ্রী চক’। চাষ হতো একটি মাত্র ফসল। সেখানেই বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছে গরুর খামার। সেটি দেখছে লাভের মুখ। ঢাকার ধামরাইয়ের কুশুরা ইউনিয়নের সিংশ্রী গ্রামে খামারটি করেছে সুপ্রিম এগ্রো নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ বছর কোরবানির ঈদে কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা দরে পশু বিক্রি করবে তারা।

সম্প্রতি খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, বড় দুটি শেডের ভেতর চারটি সারিতে ও একটি ছোট শেডে একটি সারিতে গরুগুলো রাখা হয়েছে। গরম থেকে গরুগুলোকে স্বস্তি দিতে প্রতিটি গরুর মাথার ওপর বৈদ্যুতিক পাখা স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প হিসেবে জেনারেটরের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। খামারের পশ্চিম পাশে স্থাপন করা দুটি কাটার যন্ত্র দিয়ে ঘাস কাটছেন দুই শ্রমিক।

২০২০ সালে ২০টি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু করে সুপ্রিম এগ্রো নামের যৌথ মালিকানাধীন খামারটি। বর্তমানে এই খামারে ফ্রিজিয়ান ও শাহীওয়াল জাতের মিলিয়ে গরুর সংখ্যা ৩১২টি। আছে ২৮টি মহিষও। গরুর দেখভালে কাজ করছেন ২১ জন শ্রমিক। এই খামারে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। খামারে ওজন করে বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে গরু বিক্রি করা হবে। জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি খাবারটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন।

তার কাছেই জানা গেলো খামার তৈরির গল্প। একরকম শখের বসে ঢাকার কয়েকজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের কাছে গরুর খামার করার পরিকল্পনা জানান। তখন তিনি সিংশ্রীর এই এক ফসলি জমিতে খামার করার পরামর্শ দেন। সেই ভাবনা থেকেই ৭০ বিঘা জমি কেনা হয়। এর মধ্যে ৩০ বিঘা জমিতে গরুর শেড করা হয়। গরুর দুধ থেকে মিষ্টি ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী তৈরি করতে একটি খাদ্য উৎপাদন কারখানাও করা হয়েছে। আর ৪০ বিঘা জমিতে ঘাস উৎপাদন করা হচ্ছে।

খামারের তদারকির দায়িত্বে থাকা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আগে এসব জমিতে শুধু একবার ধান চাষ হতো। সেখানেই আমরা খামার করেছি।’

তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম পদ্ধতিতে গরু দ্রুত সময়ের মধ্যে মোটাতাজা করা যায়। তবে আমরা ভুট্টা, চালের গুঁড়া, তাজা ঘাস, খড়, খইল ও খেসারিগুঁড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে খামারের গরুগুলোকে পালন করছি।’

গরুর দুধ থেকে নিজেরাই মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরি ও বিক্রিও করা হয় এই সুপ্রিম এগ্রো খামার থেকে। জসীম উদ্দিন বলেন, ‘এখানে আমাদের শতাধিক গাভী রয়েছে। এসব গাভী দিনে গড়ে ৭০০ লিটার দুধ দেয়। এসব দুধ থেকে কয়েক রকমের মিষ্টি ও দই তৈরি করা হয়। তৈরি করা খাবার বিক্রির জন্য আমাদের শো-রুমও রয়েছে।’

খামারের গরু খামার থেকেই বিক্রি করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও গরুর সংখ্যা বাড়াচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা ১,০০০ গরু পালন করার। তবে প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু গরু প্রস্তুত করা হয়। এ বছর ৭৮টি গরু কোরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’