কবুতরের প্যারাটাইফয়েড রোগ প্রতিরোধে করণীয়

1003

maxresdefault
কবুতরের প্যারাটাইফয়েড রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সকল কবুতর পালনকারীর জানা থাকা দরকার। আমাদের দেশে অনেকেই শখের বসে আবার কেউ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কবুতর পালন করে থাকে। তবে যে কারণেই কবুতর পালন করা হোক না কেন এর রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা অতি জরুরী। কবুতরের রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কবুতরের প্যারাটাইফয়েড রোগ। আসুন জেনে নেই কবুতরের প্যারাটাইফয়েড রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে-

কবুতরের প্যারাটাইফয়েড রোগ প্রতিরোধে করণীয়: কবুতরের মারাত্মক রোগগুলোর মধ্যে প্রধান রোগ হচ্ছে প্যারাটাইফয়েড। এই রোগে কবুতরের রোগে মৃত্যুর হার সব থেকে বেশী।

যেভাবে প্যারাটাইফয়েড ছড়াতে পারে: অপরিষ্কার খাবার পাত্র এবং পানির পাত্র থেকে। জীবানু সম্বলিত ধুলিকনা (dust) শ্বসন এর দ্বারা।
পোকামাকড়, মাছি, ইদুর ইত্যাদি দ্বারা দুষিত খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে। মাদী থেকে ডিমে সংক্রমন। মেটিং বা রতীক্রিয়া থেকে। ছোট বেবীকে ক্রপ মিল্ক খাওয়ানোর মাধমে এবং বিলিং এর মাধ্যমে।

রোগের লক্ষন: তীব্র সংক্রমণ (প্রধানত বাচ্চা কবুতর এর ওপর প্রভাব বিস্তারকারী): আন্ত্রিক প্রদাহের সাথে নরম, মিউকাস (আমাশয়) সমৃদ্ধ সবুজ ড্রপিংস; লিভার, কিডনী, স্পলীন আক্রান্ত হবার পর স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধিহীনতা, দুর্বিলতা/ক্লান্তি এবং দু-এক ক্ষেত্রে মৃত্যু। সাল্মোনেলা আক্রান্ত ভ্রুন সাধারনত ডিমের খোশার ভেতরেই মৃত্যুবরণ করে কিংবা বেবী জন্ম নেবার প্রথম কয়েকদিনের ভেতরে মারা যায়।

দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা (সংক্রমণ) (প্রধানত বয়স্ক কবুতরের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী): ইনফ্লামেশনের কারণে হাড়ের জয়েন্ট ফূলে ওঠে বিশেষকরে ডানার এলবো জয়েন্ট বা অসাড় পা, ভারসাম্যহীনতা এবং গলা বাকানো।

সংক্রমনের স্থান অনুযায়ী: আন্ত্রিক (Enteric Form) : বয়স্ক কবুতরের আন্ত্রিক সংক্রমন হলে অনেক সময় কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাসের ভেতরেও রোগের কোন লক্ষন নাও দেখা যেতে পারে। এসসব ক্ষেত্রে কবুতরটি স্ট্রেসে পড়ার আগ পর্যন্ত ড্রপিংস স্বাভাবিক থাকে। এরপর অত্যন্ত দ্রুত ওজন হ্রাস এর সাথে সাথে তীব্র দুর্গন্ধময় আমাশয় যুক্ত ড্রপিংস দেখা দেয়।

গ্রন্থি সংক্রমণ: এ ধরনের সংক্রমণ বয়স্ক এবং বাচ্চা উভয় ধরনের কবুতরের মধ্যে ঘটে। মুখ দিয়ে ব্যাক্টেরিয়া দেহে প্রবেশ করে ইন্টেস্টাইনে দ্রুত বৃদ্ধিঘটার পর এক বা একাধিক জয়েন্টে পুঞ্জিভুত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডানার এলবো জয়েন্ট আক্রান্ত হয়। পুরীক্ষায় জয়েন্টে স্ফীতি, উত্তাপ এবং ব্যাথা ধরা পড়ে। অনেক সময় চামড়া থেকে ঘামের মতো হলদে রস চুইয়ে বের হতে পারে।

স্নায়বিক সংক্রমণ: ব্রেনের টিস্যুতে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণের ফলে ইনফ্লামেশন এবং বিভিন্ন স্নায়বিক লক্ষন ফুটে ওঠে: ভারসাম্যহীনতা, স্টারগেজিং, ঘাড় বাকা, খিচুনি ইত্যাদি। PMV সংক্রমনের সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ!

আভ্যন্তরীব সংক্রমণ: খুন সম্ভবত সবথেকে মারাত্মক ধরনের সংক্রমণ সাধারণত আভ্যন্তরীণ অর্গানগুলো প্রভাবিত হয় যার সাথে থাকে টিস্যুর নিষ্কৃয়তা। বাচ্চা কবুতর দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ডাইরিয়া, শ্বাস-কষ্ট, চোখের নীচের পাতার নীম্নদেশে ফোঁড়া, কখোনো এক বা উভয় চোখের অন্ধত্ব দেখা দেয়।

রিপ্রোডাক্টিভ সংক্রমণ: সাধারণত আভ্যন্তরীণ সংক্রমণ এর আওতাভুক্ত হিসেবে ধরা হয়। এ ধরনের সংক্রমণে নর কবুতর বাঞ্জা হয়ে যায়। মাদী কবুতরে সংক্রমনের ফলে ওভারী (ovary) প্রভাবিত হয় এবং ফলস্রুতিতে মাদী জোরা ডিম দেবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং একটি করে ডিম দেয়, বাঞ্জা হয়ে যায় অথবা বিকৃতাকার ডিম দেয়। এদের ড্রপিংস বা বিষ্টার মাধ্যমে ডিমে সংক্রমন ঘটে এবং এক্ষেত্রে ব্যাক্টেরিয়া ভ্রুনে সংক্রমিত হয় এবং ডিমের ভেতর বাচ্চা মারা যায় অথবা বেবী জন্ম নেবার পর হঠাৎ মারা যায়।

প্যারাটাইফয়েড রোগের চিকিৎসা: রোগের উপসর্গ দেখা দেবার সাথে সাথে যে ধরনের সংক্রমণ হয়েছে তার চিকিৎসা দেবার পাশা পাশি ডাইরিয়ার চিকিৎসাও দেয়া প্রয়োজন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আক্রান্ত কবুতরের চিকিৎসা না করে সকল কবুতরকে চিকিৎসা দেয়া অধিক ফলপ্রসু। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কবুতর যেগুলোর আলাদা সেবা এবং অধিকতর চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে সেগুলোকে চিকিৎসার শুরুতেই আলাদাকরে ফেলা দরকার। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কবুতরগুলোকে হাতে খাওয়ানো, কোন কোন ক্ষেত্রে মাল্টিভিটামিন এবং ইলেক্ট্রোলাইট দেয়া প্রয়োজন হতে পারে।

আরোগ্য লাভের ১৪ দিন পর ড্রপিংস বা বিষ্টা পরীক্ষা করে চিকিৎসা ফলাফল নির্নয় করা আবশ্যক। পরবর্তীতে ৩ সপ্তাহ পর পর অন্তত আরো দুই বার এই পরীক্ষা করে রোগ নির্মুল হবার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। প্যারাটাইফয়েড রোগ প্রতিরোধ: কবুতরের প্যারাটাইফয়েড ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে পারলেই এই রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এই ভ্যাক্সিন সহজলভ্য নয়।

যে সব পদক্ষেপ প্রতিরোধ সহায়ক হতে পারে: নিয়মিত এসিডিফাইয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে প্যারাটাইফয়েড সহ ক্ষতিকর জীবানু থেকে কবুতকে সুরক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে প্যারাটাইফয়েড প্রতিরোধ করা যায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১২জানু২০২০