বিশ্ব বাজারে চাহিদা বাড়ছে কাঁকড়ার, বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষ

698

amarbarta44_76640
বিশ্ব বাজারে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ছে। ফলে চিংড়ি চাষে ঝুঁকি থাকলেও কাঁকড়া চাষে প্রান্তিক চাষিরা রয়েছেন শঙ্কা মুক্ত। তীব্র গরম, রোগ বালাই, ঘেরে পানির স্বল্পতা ও পানিতে অক্সিজেন কম থাকাসহ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে এ অঞ্চলে চিংড়ি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য চাষিরা এখন কাঁকড়া চাষে মনোযোগী হচ্ছেন।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো খুলনার তথ্য থেকে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থ বছরের চেয়ে চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৫ মাস ১২ লাখ ২০ হাজার ৭৫৬ দশমিক ৬ ডলার বেশি কাকড়া রফতানি হয়েছে। বিদায়ী অর্থ বছরে কাকড়া রফতানি হয়েছে ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৯৫৫ দশমিক ৪৩ ডলার। আর চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৫ মাসে কাকড়া রফতানি হয়েছে ২৬ লাখ ৬১ হজার ৭১২ দশমিক ০৩ ডলার। যা ৮৪ দশমিক ৭১ ভাগ বেশি।

চিংড়ির চেয়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রা, বাগেরহাটের রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর ও শরণখোলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলায় কাঁকড়া চাষ বেড়েছে। খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ২৮ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৯৮৯ মেট্রিকটন কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছে।

চীনের পাশাপাশি আরও ছয়টি দেশে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদা বেড়েছে। ফলে এ দেশগুলোতে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার রফতানিও বেড়েছে। গত পাঁচ মাসে ৩০ লাখ ৮১ হাজার ডলার মূল্যের কাঁকড়া চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় রফতানি হয়েছে। এ সব দেশে হিমায়িত চিংড়ির চেয়ে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়া বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কাঁকড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও বেশি হচ্ছে। কাঁকড়া চাষে রোগ-বালাই কম হওয়ায় ও দাম ভালো পাওয়ার কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন ১৩ উপজেলায় কাঁকড়ার চাষ বেড়েছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো খুলনা সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ২৬ লাখ ৬১ হাজার ৭১২ দশমিক ০৩ ডলার মূল্যের কাঁকড়া রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৮ দশমিক ৯৫ ডলার, আগস্ট মাসে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫২ দশমিক ২০ ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে ৯ লাখ ২৫ হাজার ২৩৯ দশমিক ৮৮ ডলার, অক্টোবর মাসে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯০ ডলার ও নভেম্বর মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬১ ডলার মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রফাতানি হয়েছে। গত অর্থ বছর খুলনা অঞ্চল থেকে কাকড়া রফতানি ছিল ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৯৫৫ দশমিক ৪৩ ডলার।

বিদায়ী অর্থ বছরের শেষ মাসে (জুন মাসে) এ অঞ্চল থেকে ২ লাখ ৬৯১ ডলারের কাঁকড়া রফতানি হয়েছিল। এছাড়া জুলাই ২০১৮ সালে ৯৭ হাজার ৭৫০ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭২২ ডলার, অক্টোবর ২ লাখ ৭০ হাজার ৭৭২ দশমিক ৯৩ ডলার, নভেম্বর মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৫০ ডলার, ডিসেম্বরে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৯ ডলার, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৫০ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮২৬ ডলার ও মে মাসে ৭১ হাজার ৯৫৫ ডলারের কাঁকড়া রফতানি করা হয়েছে।

কাঁকড়া রফতানিকারক শেখ ওয়াহিদুজ্জামান লাবু জানান, ‘মোংলা বন্দর সংলগ্ন দিগরাজ মোকাম থেকে রফতানির উদ্দেশে প্রতিদিন ১০ মেট্রিক টন কাঁকড়া ঢাকার নলভোগ আড়তে পাঠানো হয়। কাঁকড়া প্রকারভেদে কেজি প্রতি সাড়ে ৫শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। চীন ও তাইওয়ানে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদা বেশি।

বটিয়াঘাটা উপজেলার ভগবতিপুরের কাঁকড়া চাষি রতন সরকার বলেন, ‘এক সময় চিংড়ি ও কাঁকড়া একই ঘের বা পুকুরে চাষ করা হত। ভাইরাসের কারণে চিংড়ির ক্ষতি হতো। কাঁকড়ার উৎপাদনও ভাল হতো না। এখন কাঁকড়া চাষের আধুনিক পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা লাভবান হচ্ছেন। এখনও সঠিক প্রক্রিয়ায় কাঁকড়ার বীজ আনতে না পারার কারণে ২০-২৫ ভাগ কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। তারপরও লাভ থাকছে। ৫০ শতক জমিতে প্রথম দফায় ৩৫ কেজি কাঁকড়া ছেড়ে ৫ হাজার টাকা লোকসান হয়। দ্বিতীয় দফায় একই কাঁকড়ায় ৪১ হাজার টাকা লাভ হয়। তিনি আরও বলেন, ‘১৫ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে কাঁকড়া বিক্রি করা যায়।’

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ বলেন, ‘সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কাঁকড়া চাষের মৌসুম। চাষ শুরু করে চাষীরা প্রতি মাসে ২ বার বিক্রিযোগ্য কাঁকড়া তুলতে পারেন। গুণগত মান ঠিক রাখতে পারলে কাঁকড়া রফতানির অবাধ সুযোগ রয়েছে। যা ক্রমাগত বাড়ছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১২জানু২০২০