খাদ্যে ভেজাল: একটি জাতি নিঃশেষ করার স্লো পয়জন

676

food-adulteration-655x360
কীটনাশকের রেসিডুয়াল ইফেক্ট:
গত বছর দিনাজপুরে লিচু খেয়ে ১৫ শিশুর মৃত্যুর খবর বেশ আলোড়ন তুলেছিল। শিশুমৃত্যুর কারণ আমরা অনেকেই জানি।

জানা গেছে কীটনাশক প্রয়োগের সাথে সাথেই বিষযুক্ত লিচু খেয়ে শিশুগুলোর মৃত্যু হয়েছিল। যে বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে জানতে হবে তা হলো- রেসিডুয়াল ইফেক্ট। উন্নত বিশ্বে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়- এটা সত্য। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, এর কারণ তারা রেসিডুয়াল ইফেক্ট এর নিয়ম মেনে ফল বা শাক-সবজি বাজারজাত করে থাকে।

সাধারণ নিয়ম হচ্ছে- কীটনাশক প্রয়োগের এক সপ্তাহ পর ফল বা শাক-সবজি ভালোমত ধুঁয়ে খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ক্ষেক্রেই কীটনাশক স্প্রে করে সাথে সাথে বাজারে বিক্রির জন্য নেয়া হয় বা বাজারে নেয়ার পরও স্প্রে করা হয়। দেখতে টাটকা তাই কেমিকেলমুক্ত ভেবে আমরা ভুল করি। স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এসব সবজি আমরা ভালো মনে করে কিনছি, খাচ্ছি, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খাওয়াচ্ছি। তাদের ঠেলে দিচ্ছি নিশ্চিত ভয়াবহ পরিণতির দিকে।

প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয়তা:
যুগে যুগে মানুষের প্রয়োজনে প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে জীবনকে আরো সুন্দর ও সহজ করার জন্য। কৃষক, পাইকারী-খুচরা বিক্রেতা, আড়ৎদারদের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠা বা ইনস্টলেশনের ক্ষেত্রে দুটি দিক বিবেচ্য।

প্রথমত: যদি কোন প্রযুক্তি আদৌ না থাকে তাহলে নতুন প্রযুক্তি আয়ত্ব করানো খুব সহজ।

দ্বিতীয়ত: পূর্বে থেকে যদি কোন প্রযুক্তি ব্যবহার চালু থাকে তাহলে তার স্থলে নতুন প্রযুক্তি চালু করতে হলে তা অবশ্যই পদ্বতি, সময়, মুনাফা সর্বোপরি জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় পূর্বের প্রযুক্তির চেয়ে ভালো হতে হবে। কোন প্রযুক্তি একবার ব্যবহার করে মজা পেলে সেটা ছাড়া মানুষ আর চলতে পারে না উপরন্তু ভালো প্রযুক্তির আশা করে। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলেও ফরমালিন বা কার্বাইডকে প্রযুক্তি বলেই কৃষক-পাইকার-খুচরা বিক্রেতা-আড়ৎদারদের কাছে বিবেচিত হয়েছে কেননা এর ব্যবহারের মাধ্যমে তারা বেশি আয় করতে পারছে ও বাঁচতে পারছে লোকসানের হাত থেকে। এ অবস্থায় নতুন ও সার্বিক বিবেচনায় ভালো প্রযুক্তির প্রয়োজন। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে নতুন খাদ্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি ক্ষেত্র বিশেষে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেকোনোভাবে ইথিলিন তৈরি হওয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ফল বা ফলজাতীয় সবজি কাঁচা রাখার সময়কাল বাড়ানো সম্ভব। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এলইডি (লাইট ইমিটিং ডায়ড) টেকনোলজির মাধ্যমে নির্দিষ্ট রং এর আলো (নীল রং) ব্যবহার করে টমেটোর সবুজ থাকার স্থায়িত্ব বেশ কিছুদিন বাড়ানো সম্ভব। এলইডি এর মত উচ্চপ্রযুক্তি কৃষকদের জন্য সহজলভ্য করা না গেলেও নীল রঙের পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

খাদ্যে বিষাক্ত কেমিকেল সনাক্তকরণ ও ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর উপায়:
খাদ্যে নিষিদ্ধ ফরমালিন বা কার্বাইডের উপস্থিতি পরীক্ষার উপকরণ সহজলভ্য করা জরুরি।

সারাদেশে বর্তমানে মাত্র ৮৭টি ফরমালিন সনাক্তকরণ ‘কিটবক্স’ রয়েছে- যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। জরুরি ভিত্তিতে এ সুবিধা আরো অনেক বেশি বিস্তৃত করা দরকার।

সম্প্রতি খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের অস্তিত্ব পরীক্ষায় এক অসাধারণ সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) গবেষক ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন- এটা একটি আনন্দের সংবাদ। মাত্র ৫ সেকেন্ড সময়ে ও নামমাত্র মূল্যে ফরমালিনের অস্তিত্ব নির্ণয় করা সম্ভব তার উদ্ভাবিত পদ্বতিতে।

জাতীয়ভাবে এ ধরনের পদ্বতি সবার জন্য সহজলভ্য করা গেলে ভোক্তারা দারুণ উপকৃত হবে। খাদ্যে ফরমালিনের উপস্থিতি নির্ণয় করে তা পরিহার করার পাশাপাশি সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে ফরমালিনের হাত থেকে অনেকটা বাঁচা সম্ভব। মৌসুমি ফল অন্য মৌসুমে খাওয়া থেকে বিরত থাকা যেতে পারে। খোলাবাজার থেকে কাটা ফল যেমন আনারস, পেঁপে ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। ফল বা ফলজাতীয় শবজি রান্নার আগে খোসা ফেলে দেওয়া ভালো। রান্নার আগে মাছ বা শাক-সবজি এবং খাওয়ার আগে ফল কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রবাহমান পানি দিয়ে ভালো মত ধুয়ে রান্না করা বা সরাসরি খাওয়া যেতে পারে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে লবণাক্ত পানিতে ফরমালিন দেয়া মাছ ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে ৯০ ভাগ পর্যন্ত ফরমালিন কমে যায়। ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে (১:৯ অনুপাতে) ফরমালিন মেশানো মাছ ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে শতভাগ পর্যন্ত ফর্মালিন দূর করা সম্ভব। শাক-সবজির ক্ষেত্রেও একই পদ্বতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

সার্বিকভাবে ভেজালরোধে করণীয়:
সন্দেহাতীতভাবে খাদ্যে ভেজাল একটি জাতীয় সমস্যা, জাতীয় বিপর্যয়- এটা আমাদের সবাইকে বিশেষ করে নীতি নির্ধারকদের সর্বাগ্রে সত্যিকারভাবে অনুধাবন করতে হবে। ফল পাকার মূলনীতিকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তা পাকানোর সহজ পদ্বতি উদ্ভাবন ও তার ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। গ্রামবাংলার শত বছরের অভিজ্ঞতাকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করা যেতে পারে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

শুধু কঠিন থেকে কঠিনতম আইন পাশ করলেই চলবে না, প্রয়োজন তার যথাযথ বাস্তবায়ন। সাথে সাথে প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। অসাধু ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে এবং তা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে।

গ্রামবাংলার আপামর জনসাধারণ থেকে শুরু করে শহরের উচ্চশিক্ষিত সবাইকে দ্রুততম সময়ে ব্যাপক প্রচার-প্রসার বা অভিযানের মাধ্যমে সচেতন করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি, এনজিও প্রতিষ্ঠান সবার সমন্বয়ে বছরে এক বা দুইবার নিরাপদ খাদ্য সপ্তাহ বা পক্ষ পালন করা যেতে পারে। এ কাজে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে একদিকে তারা নিজেরা সচেতন হবে অন্যদিকে সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মনে করে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নাটক, সিনেমা, বাউল-সংগীত, আলোচনা ইত্যাদির আয়োজন করা এবং তা ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাবক প্রচারের ব্যবস্থা করা, মাইকিং করা, সাথে সাথে পত্রিকা, ম্যাগাজিন, লিফলেট, পোস্টার, ফোল্ডার ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করা যেতে পারে।

জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ কাজে নিয়োজিত সবাইকে অন্য অনেকের চেয়ে বেশি প্রেরণাদ্দীপ্ত (মটিভেটেড) হতে হবে।

কৃষক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থের দিকটাও দেখতে হবে। জোর জবরদস্তি বা শুধু আইন করে তাদের ভেজাল না মেশাতে বাধ্য করলে ক্ষণিকের জন্য কিছুটা সফলতা পাওয়া গেলেও স্থায়ীভাবে ভাল ফল পাওয়া সম্ভব নয়। মাঝে মধ্যে দু’একটি ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে, সাজা দিয়ে বা জরিমানা করলে চলবে না। এতে করে যা হবার তাই হয়। অভিযান শেষ হলে আবার আগের মত চলতে থাকে- এর সত্যতা আমরা স্বচক্ষে দেখছি। বাস্তবতাকে স্বীকার করে তাদের বিকল্প পথ বাতলে দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।

গ্রামের মানুষের মধ্যে থাকা ভ্রান্ত কনসেপ্ট বা বদ্ধমুল ধারণা সরানোর মাধ্যমে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ খাদ্যপন্যের প্রবাহ দেশের মধ্যে ত্বড়িৎ ও বাঁধাহীন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে আত্মবিশ্বাস জন্মাতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কৃষক বা আড়ৎদার তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে।

কার্বাইড বা ফরমালিন না মিশিয়েও যদি লাভ করা যায় তাহলে হয়ত তারা এ কাজ আর করবে না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদন করে ফল, শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।

খাদ্য উৎপাদনের সাথে সরাসরি জড়িত ব্যক্তি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, রাজনীতিবিদ, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, গবেষক- সবাই এ বিপর্যয়কে নিজেদের জীবন-মরণ সমস্যা মনে করলে খুব সহজেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। ভেজাল সম্পর্কিত দুর্নীতিকে অবশ্যই ‘না’ বলতে হবে।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত সিন্ডিকেটকে তাদের নিজেদের ও বৃহত্তর স্বার্থে ভেঙে দিতে হবে। উল্লেখযোগ্য হারে আঞ্চলিক পর্যায়ে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও তার ব্যবহার সহজলভ্য করতে হবে যাতে করে কৃষক থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা, আড়ৎদার সবাই সহজে ও কম খরচে সে সুবিধা নিতে পারে।

যেহেতু খাদ্য মৌলিক চাহিদাগুলোর অন্যতম এবং সবার স্বার্থ জড়িত তাই এক্ষেত্রে সরকারিভাবে যথাসম্ভব সাবসিডি দেয়া যেতে পারে। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ প্রভৃতি কাজে যারা সরাসরি জড়িত তাদের বিশেষ-ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদের সর্বোচ্চ সচেতন করে তুলতে হবে।

কৃষিজাত পণ্যে ভেজাল মনিটরিং করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সংখা বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি থাকবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল কোর্ট যাতে যেকোনো সময় বিনা নোটিশে বাজারের খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়।

আমার জানামতে, কোন ধর্মেই অপরকে দূরে থাক নিজের উপর জুলুম করার অনুমতি নেই। একটি ছোট্ট ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার খাদ্য বিক্রেতার গৃহে গিয়ে খাদ্যপণ্যের বস্তায় তার নিজ হাত ঢুকিয়ে দিয়ে আর্দ্রতা অনুভব করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ভেজা কেন? বৃষ্টিতে ভিজে গেছে- বিক্রেতার উত্তর। এরপর তিনি হাত বের করে বললেন- আপনি কেন আর্দ্রতামিশ্রত খাদ্য বস্তার ওপরের অংশে রাখলেন না যাতে লোকজন তা সরাসরি দেখতে পায়? এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে ভেজাল করে সে আমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত নয়। কাজেই ধর্মীয় অনুশাসন ও শিক্ষা হতে পারে একটা উৎকৃষ্ট সমাধান কেননা সবখানে সৃষ্টিকর্তার নজর রয়েছে এমন বদ্ধমুল ধারণা থাকলে কেউ ভেজাল দিতে পারবে না। নিজেই নিজের পাহারাদার হয়ে যাবে।

সর্বোপরি প্রাইমারি ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ভেজাল সম্পর্কিত শিক্ষা ও সচেতনতামূলক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নৈতিকতার চর্চায় তাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। মিনা কার্টুন বা জনপ্রিয় অন্য কার্টুনের মাধ্যমে স্কুলপড়ুয়া শিশু থেকে শুরু করে সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করা যেতে পারে।

শেষকথা:
ভয়াবহ এ বিপর্যয় সম্পর্কে দরকার সত্যিকারভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রসার, জনসচেতনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে কাঙ্খিতপর্যায়ে আমরা তা করতে পারিনি। এটা সত্য জনসচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। ক্ষুধার যন্ত্রণায় যখন একটি শিশু কাঁদে তার মুখে ফিডারভর্তি দুধ দিয়ে কান্না থামাতে পারলেই আমরা স্বস্তিবোধ করি। দুধ কোথা থেকে আসলো বা কি মেশানো আছে তা অনেক সময় ভাবার সময় থাকে না। যেকোনভাবেই হোক উদরপূর্তি করাই যেন আমাদের মূল লক্ষ্য।

ইংরেজিতে একটা কথা আছে- ‘Medicine is not healthcare rather than sickcare. Food is healthcare.’ কাজেই সুস্থ থাকার জন্য ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। ভেজাল খাবার খেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এর ক্ষতিকর প্রভাব বুঝতে পারি না বলেই আমরা বিষয়টাকে তেমন গায়ে লাগাতে চাই না বা অগ্রাধিকারের দিক দিয়ে অনেক পেছনে রাখি। অনেকেই মনে করি আমার তো কিছু হচ্ছে না বরং লাভ হচ্ছে অন্যের কি হলো তাতে আমার কি?

আমরা দিন দিন বড় বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সত্যিকারভাবে অনুধাবন করতে হবে বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে খাদ্যে ভেজালের বিস্তৃত জাল থেকে আমরা কেউ রেহাই পাবো না, পাবার নয়। এমনকি যারা নিজ হাতে ভেজাল মেশায়, বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিকেল বা কীটনাশক ব্যবহার করে, তারাও না।

আমাদের চিরাচরিত স্বভাব হচ্ছে- চোখের সামনে দিয়ে পাঁচ টাকা চলে গেলে সহ্য করতে পারি না অথচ অন্তরালে আমাদের কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখ বা অন্যান্য অমূল্য সম্পদ চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সবাইকে খাদ্যে ভেজালের ভয়াবহ পরিণতি অনুধাবন করার পাশাপাশি এর ব্যাপ্তি ও কারণ সম্পর্কে সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে। সাথে সাথে সম্ভাব্য প্রতিকারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেকোনো মূল্যে ক্রমেই মেধাশুন্য হওয়া থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। (তৃতীয় অংশ)

লেখক: ড. কেএইচএম নাজমুল হুসাইন নাজির
প্রফেসর, মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম