গাংনীতে গবাদি পশুর শরীরে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ‘লাম্পি স্কিন’

64

মেহেরপুরের গাংনীতে গবাদি পশুর শরীরে দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। এ রোগে গত তিন মাসে ১৭টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে কয়েক হাজার। অ্যানথ্রাক্সের পর হঠাৎ গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন খামারিরা। দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দিয়ে অনেকের গরু সুস্থ হলেও ধকল কাটতে সময় লাগছে কয়েক মাস। এতে মাংস ও দুধ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি গরু পালনকারীদের। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৯ সালের দিকে রোগটি ব্যাপকহারে দেখা দেয়। সে সময় এ রোগের ব্যাপকতা ছিল না। পরে ২০২২ সাল থেকে এটি মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। এলএসডি আক্রান্ত গরুর প্রথমে জ্বর হয় এবং খাওয়ার রুচি কমে যায়। পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়ায় গুটি গুটি আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ রোগটি মূলত মশা-মাছির মাধ্যমে রোগাক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুতে ছড়ায়। এতে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। একটু সচেতন হলেই এই রোগ নিরাময় সম্ভব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকদের রোগ প্রতিরোধে ‘গোটপক্স ভ্যাকসিন’ দেয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, লাম্পি স্কিন ডিজিজ অন্তত ১০টি গরুকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে। হাসপাতালে প্রতিদিন শতাধিক গরুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ। তবে কোনো পরামর্শই কাজে আসছে না বলে অভিযোগ গরুর মালিকদের।

গাংনীর চৌগাছা গ্রামের কোব্বাত আলী জানান, তার একটি গাভী গরু চার দিন আগে আক্রান্ত হয়েছে। তার বাড়িতে ১৫টি গরু রয়েছে। আক্রান্ত গরুগুলোকে আলাদা করে মশা-মাছি থেকে নিরাপদ রাখা হচ্ছে। মশারি ব্যবহার করা হচ্ছে।

কামারখালী গ্রামের জিল্লুর রহমান জানান, তার ১২টি গরুর মধ্যে একটি লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত। প্রথমে গরুর শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে সারা শরীরের গুটি গুটি বের হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসা দিয়েও কাজ হচ্ছে না।

নিত্যানন্দনপুরের রহিমা খাতুন জানান, দশ দিন আগে তার গরুর শরীরে প্রচণ্ড জ্বর ছিল। গ্রাম্য পশু চিকিৎসকের কাছ থেকে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর পর জ্বর কিছুটা কমলেও গরুর সারা শরীর গুটি গুটি দেখা দেয় ও গরু খাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা নিচ্ছি। তবে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি মশা ও মাছি থেকে গরুকে সুরক্ষা রাখতে বলেছে। হাড়িয়াদাহ গ্রামের পল্টু জানান, তার বাড়িতে চারটি গরু রয়েছে। তিনটি গুরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মাস তিনেক আগও একটি গরু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। গরুর শরীরের বিভিন্ন গুটি ফেটে রক্ত বের হচ্ছে এবং ঘায়ের সৃষ্টি হয়েছে। দু’একদিন পরপরই আমাকে গরু নিয়ে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে।

সাহারবাটি গ্রামের বাদশাহ জানান, তার বাড়ির একটি বড় গরু দশ দিন যাবত আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। এতে তার লক্ষাধিক টাকা লোকসান হয়েছে। উপজেলার রায়পুর গ্রামের আলামিন জানান, গ্রামের প্রতিটি বাড়ির গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত। তার গরুর খামারে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৬টি গরু। গ্রামের নিয়াত আলীর ৩টা ও জাহিদের একটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। তারা জানান, উপজেলা বা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে যা চিকিৎসা সেবা বা পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। প্রতিনিয়িত অনেক টাকার ওষুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে।

গাংনী উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আরিফুল ইসলাম বলেন, এই রোগটি শুধু আমাদের এখানেই নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগে আক্রান্ত গরুগুলোকে প্যারাসিটামল ও এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ রোগে প্রতিদিন অন্তত ১০০ থেকে ১২০টি গরুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে সুস্থ গরুকে আক্রান্ত গরু থেকে আলাদা রাখতে হবে এবং অবশ্যই গরুকে মশারি দ্বারা আবৃত রাখার পরামর্শ দেন তিনি।