গাংনীতে শিমের মাচায় দুলছে চাষির স্বপ্ন

106

চলতি রবি মৌসুমে শিমের মাচায় দুলছে চাষির আশার স্বপ্ন। রঙিন ফুল আর সবুজ ফলের সঙ্গে চাষির মুখে ফুটে উঠেছে মিষ্টি হাসি। বেগুনি রঙের মনোমুগ্ধকর ফুলে প্রকৃতি সেজেছে দারুণ মুগ্ধতায়। মৌসুম শুরুর আগেই এমন মনোরম দৃশ্যে মাচায় ভরে আছে এলাকার শিম বাগান।

আগাম শিম চাষ করে ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম শিম। বছর পাঁচেক ধরে এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে আগাম জাতের শিম। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এই আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। আগাম বাজারে নামাতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যাবে, এমন প্রত্যাশা কৃষকদের। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৯৭০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হচ্ছে। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মাচা কিংবা গাছে শোভা পাচ্ছে শিম গাছ। গৃহিণীরা সাংসারিক প্রয়োজন মেটানোর পর শিম বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছেন।

বানিয়া পুকুর গ্রামের শিমচাষি হাফিজুল জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত উৎপাদিত শিম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ২৮ হাজার টাকা। আরও ১৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া শিম চাষের উপযোগী হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। অন্যদিকে চাহিদা থাকায় দামও আশানুরূপ। আগামীতে আরও এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

করমদি গ্রামের শিমচাষি হুদা জানান, প্রতি বছর বিভিন্ন জাতের আগাম সবজি চাষ করেন তিনি। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষে খরচও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। তবে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, চারা গজানোর ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায় ফুল আসে। এরপর দেড় মাস পর থেকেই শিম তোলা শুরু হয়। প্রতি তিন থেকে চার দিন পরপর শিম তুলে বাজারে বিক্রি করা হয়। একটানা ছয় মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে শিম ওঠানো যায়।

বামন্দী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আরিফ জানান, চলতি মৌসুমে শিমের চাহিদা রয়েছে। ক্রেতারা টাটকা এ সবজি কিনে নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকদের ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করায় খরচ কম হচ্ছে এবং ভালো লাভও হচ্ছে। একই কথা জানালেন সবজি ব্যবসায়ী হেমায়েতপুরের মনিরুল ও আকরাম আলী। তিনি আরও জানান, শুধু কাঁচা শিমই নয়, পাকা শিম কিনে তা থেকে বীজ বের করে বীজ হিসেবে ও মানুষের মুখরোচক খাবার হিসেবেও বিক্রি করা হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ জানান, এখানকার মাটি সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা সহজেই এর চাষ করতে পারে। কৃষি বিভাগও সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছে। বিশেষ করে বালাইনাশক ব্যবহার ও শিম বাজারজাত করার ক্ষেত্রে সব সময় চাষিদের পাশে আছে কৃষি বিভাগ।