গ্রামীণ অর্থনীতিতে ফুল চাষের অবদান

939

1452958147
বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এছাড়া আমাদের আছে ফুল চাষ, পরিচর্যা, গ্রেডিং ও প্যাকেজিং কাজের জন্য সস্তা সহজলভ্য শ্রমিক এবং ফুল চাষের আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেধাবী কৃষি বিজ্ঞানী। ফুলের পাপড়িবিন্যাস, আকর্ষণীয় রং ও গন্ধের মাধুর্য মানুষের মনকে বিমোহিত করে তোলে। ফুল শুধু মুগ্ধতা ও ভালোবাসারই প্রতীকই নয়, ফুল একটি লাভজন রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য। মানুষের সামাজিক আচার-আচরণ ও শিল্পিত রুচিবোধের পরিবর্তনের সাথে সাথে সারা বিশ্বে বাড়ছে ফুলের চাহিদা , উৎপাদন, রপ্তানি ও ব্যবসাবাণিজ্য। দারিদ্র্য বিমোচন , কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ফুল চাষের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর অনেক উন্নয়নশীল দেশ ফুল উৎপাদন ও রপ্তানি করে উপার্জন করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। আফ্রিকার কেনিয়া ও ইথিওপিয়া তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কেনিয়া ফুল রপ্তানি করে বছরে আয় করে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এ কাজে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয় দেশটিতে।

ঢাকার সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা ও ময়মনসিংহ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হলেও যশোর জেলার ঝিকরগাছা, শার্শা ও মনিরামপুর উপজেলাতেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রচুর উৎকৃষ্ট মানের ফুল উৎপাদিত হয়। এসব এলাকায় বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাঁচটি ও পরীক্ষামূলকভাবে আরও ছয় থেকে সাতটি জাতের ফুল চাষ হচ্ছে। গত বছর বসন্তবরণ উৎসব, বিশ্বভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুলের রাজধানী গদখালীতে ৬০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়।

ফুলকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠেছে বিশাল বাণিজ্য ও শত শত কোটি ডলারের বাজার। নেদারল্যান্ডসের আলসামিরে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ফুলের বাজার অবস্থিত। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুলের বাজার হংহংয়ের মংকক রোডে অবস্থিত। তবে এ ফুলের বেশিরভাগই স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করা হয়ে থাকে। মূলত চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এখান থেকে ফুল আমদানি করে থাকে। ফুলের বাজার হিসেবে বিখ্যাত হলো লন্ডনে অবিস্থিত কলম্বিয়া রোড। বিশ্বের তৃতীয় এ বৃহত্তম বাজারটি ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । স্পেন, ইসরায়েল, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে থেকে এখানে ফুল আসে। ফুল বিক্রির চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতায় মানিকঘাট। প্রায় ১২৫ বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ বাজারে ফুল বিক্রি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ৫ থেকে ৭ ধরনের ফুল সৌদি আরব, দুবাই, জর্ডানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে । এগুলো হলো- গ্লাডিওলাস, সিঙ্গেল ও ডবল রজনীগন্ধা এবং সাদা ও রঙিন গোলাপ। এছাড়া আমদানীকৃত কিছু ফুল মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। অপরদিকে বিদেশ থেকে গাঁদা, লিলিয়াম, থাইঅর্কিড, থাই ও চায়না গোলাপ, কার্নেশন, জারবেরা ¯েœাবল আমদানি করে ঢাকা ও চট্ট্গ্রামসহ দেশের অভিজাত মার্কেটগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। সপ্তাহে ২ দিন ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে বিমানে ফুল আমদানি করা হয় বাংলাদেশে।

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিববঙ্গ, আফ্রিকার কেনিয়া, উগান্ডা ও ইথিওপিয়া যদি ফুল রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে, তা হলে আমরা পারব না কেন? এদেশে গ্লাডিওলাস, গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা ও অর্কিড ফুলের উৎপাদন ও রপ্তানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/৮জানু২০২০