জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান, পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষমেলা-১৭’র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

1380

650000000000000904990894433

‘বৃক্ষরোপন করে যে সম্পদশালী হয় সে’ এ স্লোগান নিয়ে রোববার থেকে তিন মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষরোপন কর্মসূচিও শুরু হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রাঙ্গনে একটি কাঁঠাল গাছের চারা রোপন করে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষমেলা ২০১৭ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৭, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৬ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক প্রদান করেন।

বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং ঢাকার কলাবাগানের মোকারম হোসেন ব্যক্তিগতভাবে বৃক্ষরোপনে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পরিবেশ পুরস্কার ২০১৭ এবং স্কয়ার ফার্মসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগতভাবে এই পুরস্কার লাভ করে।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দুজনের হাতে সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেকও প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরিবেশের ভারসাম্যকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে এই ভারসাম্য রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “প্রকৃতি যখন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তখন মানুষের জন্য তা বিপদ ডেকে নিয়ে আসে। প্রধানমন্ত্রী এই সময় জাতির পিতার দূরদর্শীতার উল্লেখ করে বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ‘পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’ জারি করেন। তখন পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়। এ অধ্যাদেশ ও প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে আজকের পরিবেশ অধিদপ্তর।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে অনুচ্ছেদ ১৮(ক) সংযুক্ত করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবে’।”

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকার দ্বিমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিগত সাড়ে ৮ বছরে আমাদের দেশের মোট বনভূমির পরিমাণ ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। স্থানীয় দরিদ্র নারীসহ সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করে বন অধিদপ্তর সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সাফল্য অর্জন করেছে।”

তিনি বলেন, “সামাজিক বনায়নের আওতায় এ যাবৎ প্রায় ৭৯ হাজার ২৯৮ হেক্টর এবং ৬৬ হাজার ৪৭২ কিলোমিটার এলাকায় বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব বাগান প্রায় ৭৭৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার বৃক্ষ সম্পদ আহরণ করা হয়েছে। এ যাবৎ ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮০ জন দরিদ্র উপকারভোগীর মধ্যে ২৬১ কোটি ১৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সামাজিক বনায়ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সৃষ্টি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ সবুজায়নে ও দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে একটি সফল কৌশল হিসেবে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি লাভ করেছে।”

সরকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই আহরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৬ জারী করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ কিছু এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ৪০টি বনসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা এবং জলাভূমি, হাওর, নদী, উপকূলীয় দ্বীপসহ ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা না থাকলেও আমরা এর বিরূপ প্রভাবের নির্মম শিকার। বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আমাদের। আমাদের সরকার ইতোমধ্যে জলবায়ু
পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবিলায় ২০০৯ সালে প্রণীত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি এন্ড অ্যাকশন প্লান (বিসিসিএসএপি) যুগোপযোগী করছে।”

তিনি বলেন, “আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ২০১০ সালে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি। এ খাতে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গঠিত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এবং এলডিসি ফান্ড হতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ প্রাপ্তির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন নেগোশিয়েশনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ বাংলাদেশকে ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ পুরস্কারে ভূষিত করে।” সূত্র: বাসস

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম