টবে ফুল পরিচর্যা

1770

Untitled-18-5aec7e0e45864
বাগানের টবে বিভিন্ন ফুলগাছ লাগানোর পর থেকে ফুল ধরা পর্যন্ত এবং সেসব ফুলের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য কিছু কিছু পরিচর্যা করার প্রয়োজন হয়। সেরকমই কিছু পরিচর্যার বিষয় কৃষি ও সম্ভাবনা পাতার পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।

টব স্থাপন: ফুলের টব কড়া রোদে সবসময় না রেখে মাঝেমধ্যে ছায়ায় রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। কারণ অতিরিক্ত আলোর নিচে ফুলের টব রাখলে ফুল ও ফুলগাছের রং বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। সকালের হালকা রোদ ফুলগাছের জন্য ভালো।

সেচ ব্যবস্থাপনা: টবে একবারে বেশি পানি সেচ দেয়া উচিত নয়। এতে টবের মাটি শক্ত হয়ে যেতে পারে। আবার টবের মাটি যেন কখনো শুকিয়ে না যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। এ জন্য টবের মাটিতে রসের অবস্থা বুঝে অল্প অল্প করে পানি সেচ দিতে হয়। প্রয়োজনে সকালে, বিকালে পানি দিতে হয়। মনে রাখতে হবে, বেশি পানি দিলে গাছের গোড়া ও শিকড় পচে যেতে পারে এবং কম পানি দিলে গাছের সজীবতা নষ্ট হতে পারে, বিশেষ করে গাছে ফুল থাকলে তা শুকনো ও বিবর্ণ দেখাতে পারে। টবের অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য টবের নিচে একটি ছিদ্র করতে হয় এবং টবটি একটি মাটির প্লেটের ওপর রাখতে হয়। সকালে বা বিকালে যখন রোদের তেজ কম থাকে তখন পানি সেচ দিতে হয়। তবে পড়ন্ত বিকেল বেলায়ই সেচ দেয়া ভালো।

মাটি ব্যবস্থাপনা: ৭ থেকে ১০ দিন পর পর টবের ওপরের স্তুরের মাটি সাবধানে উলট-পালট করে দিতে হয়। সেটি করা সম্ভব না হলে মাসে অন্ত্মত একবার নিড়ানির সাহায্যে খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হয়। এ কাজটি এমনভাবে করা দরকার, যেন গাছের শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এতে টবের মাটির নিচের দিকে জমা হওয়া ক্ষতিকর গ্যাস বের হওয়ার সুযোগ পায়। অতিরিক্ত রস থাকলে তা কমে যায় এবং টবের মাটিতে কোনো পোকাই অবস্থান করতে পারে না। টবের মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে টবের গাছের গোড়ায় অনেক সময় মালচিং দ্রব্য হিসেবে শুকনো খড় বা ঘাস বা কাগজ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হয়, এসবের নিচে যেন কোনো পোকামাকড় লুকিয়ে থাকার সুযোগ না পায়।

টবে সার ব্যবস্থাপনা: দুর্বল ফুলগাছের সঠিক বৃদ্ধি ও নতুন পাতা বের হওয়ার সময় প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে টবের মাটিতে ও গাছে ২-৩ দিন পর পর বিকেল বেলায় ¯েপ্র করলে গাছের ও পাতা বৃদ্ধি ভালো হয়। এতে ফুল ধরার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও ফুলের আকার বড় হয়। ট্যাবলেট সারও টবের ফুলগাছে ব্যবহার করা যায়, এতেও ফুলের আকার বড় হয়। টবে ব্যবহারের জন্য বাড়িতেই জৈবসার তৈরি করা যেতে পারে। এজন্য ফেলে দেয়া চা-পাতা ও ডিমের খোসা গুঁড়ো করে এক সঙ্গে মিশিয়ে ৭-৮ দিন রোদে শুকিয়ে গোলাপ ও অন্যান্য ফুলগাছের গোড়ায় ব্যবহার করলে খুব ভালো কাজ করে। অনেকে টবের মাটিতে খৈল ব্যবহার করেন। এতে পিঁপড়ার উপদ্রব দেখা দিতে পারে। পিঁপড়া তাড়ানোর জন্য টবের বাইরে নিচের দিকে ফিনিস পাউডার ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। বছরে অন্তত একবার টবের উপরের দিকে কোনা ঘেঁষে ৬ সেন্টিমিটার গভীর ও ৩ সেন্টিমিটার চওড়া করে মাটি তুলে ফেলে শুকনো গোবর বা জৈব সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে পুনঃভরাট করতে হয়। এসময়ে হাড়ের গুঁড়া, ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার টবের নতুন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন ফুলের জন্য আলাদা আলাদা সারের মাত্রা থাকায় উপরি সার প্রয়োগের বেলায় পরিমাণ জেনে সে অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হয়।

টব পরিবর্তন: মাঝেমধ্যে গাছের জন্য টব পরিবর্তন করতে হতে পারে। টব পরিবর্তনের সময় খুব সাবধানে কাজটি করতে হয়। কোনোক্রমেই যেন মূলগাছের শিকড়ের সঙ্গে লেগে থাকা মাটি বা মাটির দলা ভেঙে না যায়। টব পরিবর্তনের বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে টবে হালকা করে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হয়।

পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ: টবের ফুল ও ফুলগাছে কোনো পোকামাকড় দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে ধরে মেরে ফেলতে হয়। ফুলগাছে সাধারণত জাব পোকা, জ্যাসিড বা সবুজ পাতা ফড়িং, পাতা ফড়িং, বিভিন্ন ধরনের পাতাখেকো বিটল, কান্ড ও ফুলের মাজরা পোকা, ছাতরা পোকা বা মিলিবাগ, লেদা পোকা, শুঁয়ো পোকা, পিঁপড়া, উইপোকা, গান্ধী পোকা, থ্রিপস বা চোষী পোকা ও লাল মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়। জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে এসব পোকার উপদ্রব প্রতিরোধ করা যায়। রোগ নিয়ন্ত্রণ ঃ এ ছাড়া সাদা গুঁড়া বা পাউডারী মিলডিউ, ঢলে পড়া, গোড়া পচা, ডগা পচা, কুঁড়ি পচা, কুঁড়ি ঝরা, পাতা ঝলসানো, পাতায় দাগ, আগা মরা, ক্লোরোসিস এবং ভাইরাসঘটিত রোগের সংক্রমণ ফুলে ও ফুলের গাছে দেখা যায়। এসব নিয়ন্ত্রণে জৈব ছত্রাকনাশক বা অনুমোদিত অজৈব ছত্রাকনাশক নির্দিষ্ট মাত্রায় স্প্রে করতে হয়।

অনুখাদ্য ব্যবহার: অনুখাদ্যের অভাবে টবের ফুলগাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। অথবা ফুলের আকার ছোট বা রং ফ্যাকাশে হতে পারে। এজন্য উপরি সার প্রয়োগের সময় টবের ফুলগাছের বিভিন্ন অনুখাদ্যের অভাবের লক্ষণ দেখে ক্যালসিয়ামের জন্য চুন, ম্যাগনেশিয়ামের জন্য ম্যাগসালফ, সালফারের জন্য জিপসাম, দস্তুার জন্য জিঙ্ক অক্সাইড, বোরনের জন্য বোরিক এসিড বা সলুবর স্প্রে করা যেতে পারে।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/১২জানু২০২০