ডেইরি খামারে সফল প্রবাসফেরত নিজাম, বছরে আয় ৬ লাখ

88

২০০৮ সালে নিজাম উদ্দিন পাড়ি জমিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় ২০১৪ সালে খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়। দেশে ফিরে টেইলারিং করে ৫ হাজার টাকায় একটা বাছুর কেনেন। সেখান থেকে আস্তে আস্তে শুরু। এখন তার খামারে ১৬টি গরু আছে। তিনি এই খামারের নাম দিয়েছেন ‘মোহাম্মদপুর ডেইরি খামার’। সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েকজন নারী-পুরুষের।

নিজাম উদ্দিনের বাড়ি সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চর তোরাব আলী গ্রামে। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা নিজামের এখন বছরে আয় ৬ লাখ টাকা।

নিজাম উদ্দিন তার গরুর খামারের পাশাপাশি রসমালাই, মিষ্টি, দুধ, ঘি ও মাখন বিক্রি করে সাড়া ফেলেছেন। নিজের পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসে হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী ও সফল উদ্যোক্তা। তাকে দেখে অনেকেই গরুর খামার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় বাড়তি দুধ থেকে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করে নোয়াখালী জেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। তার খামারের দুধ দিয়ে তৈরি রসমালাই, মিষ্টি, ঘি কিনতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন মানুষ। পরিশ্রমই তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।

নিজাম উদ্দিন বলেন, সৌদি আরবে গিয়েও ভালো কিছু করতে পারিনি। ২০১৪ সালে দেশে এসে টেইলারিং পেশায় যুক্ত হই। সেটার আয় দিয়ে সেনবাগ উপজেলা থেকে দুই দিনের একটা বকনা বাছুর ক্রয় করে আমি তাকে লালন পালন শুরু করি। দুধ খাইয়ে তাকে বড় করি। সেই বাছুর আমাকে খামার করতে উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমানে আমার ত্রিশ লাখ টাকার গরু আছে। আমার মাসে ৬০ হাজার এবং বছরে ৬ লাখ টাকার উপরে লাভ হয়। পাশাপাশি আড়াই একর জমিতে ঘাস চাষ করছি। আমার মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আমি আমার এই খামারটিকে হাজার গরুতে রুপান্তর করতে চাই এবং শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই।

নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, আমার খামারে দুধ ও পার্শ্ববর্তী খামারিদের দুধ থেকে আমি দুগ্ধজাত পণ্য মিষ্টি, রসমালাই ও ঘি তৈরি করছি। এসব পণ্যের মান অনেক ভালো। আমি নোয়াখালীসহ সারাদেশে এসব পণ্য ছড়িয়ে দিতে চাই। মানুষ যেন আসল পণ্য পায় তার ব্যবস্থা করতে চাই। আমাদের এখানে প্রচুর দুধ উৎপাদন হয় কিন্তু খামারিরা ন্যায্য মূল্য পান না তাই, আমার দোকানের মাধ্যমে এসব দুধের তৈরি পণ্য মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে চাই। এতে করে খামারিরাও ন্যায্য মূল্য পাবে এবং ভোক্তারাও খাঁটি পণ্য পাবে।

চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টের মো. মনির হোসেন বলেন, নিজাম উদ্দিন আমাদের সহায়তা নিয়ে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। তিনি নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সফল খামারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। নিজাম উদ্দিন যেভাবে খামারের পাশাপাশি রসমালাই, মিষ্টি, ঘি তৈরি করছেন তাতে তিনি আরও সফল হবেন। তাকে দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। এই অঞ্চলের অসংখ্য বেকারের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। তার পণ্যগুলো নোয়াখালী জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে পরিচিত লাভ করবে।

সুবর্ণচর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো ফখরুল ইসলাম বলেন, যারা খামার করতে চান তাদের কেবল তরল দুধ দিয়ে লাভবান হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। যদি সেই দুধ কাজে লাগিয়ে পণ্য উৎপাদন করা হয় তাহলে বেশি লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রবাসফেরত নিজাম উদ্দিন একজন উদ্যোগী মানুষ। খামার করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার ডেইরি খামারটি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরামর্শ মোতাবেক পরিচালনা করে থাকেন। তিনি আরও ভালো কিছু করবেন বলে আমরা আশাবাদী।