ডেইরি খামার শুরুর আগে যে ৭টি বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় রাখা জরুরি

812

বাংলাদেশে ডেইরি শিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে। দেশের অনেক শিক্ষিত এবং বেকার যুবক এতে আত্মনিয়োগ শুরু করেছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা এবং জরুরি বিষয়গুলো বিবেচনায় না নেয়ার জন্য অনেকে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন। তাই ডেইরি খামার শুরুর আগে যে ৭টি বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় রাখা জরুরি সেগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো:

১. সঠিক পরিকল্পনা এবং বিশ্লেষণ : অনেকেই বলে থাকেন, শখ করে খামার করেছি। শখ এবং ব্যবসা এক বিষয় নয়। ব্যবসা হলে ভালো মানের পণ্য যোগানের মাধ্যমে লাভবান হতে হবে। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনায় আসবে সক্ষমতা, দূর্বলতা, সুযোগ এবং ঝুকি(SWOT) . প্রতিটি পয়েন্ট আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে, সেখানে কোন ঋনাত্মক পয়েন্ট আসলে সেটা ধণাত্মক করার সক্ষমতা আনতে হবে। যেমন- নিরবচ্ছিন্ন আন্তরিক দক্ষ জনবল, পর্যাপ্ত উপযুক্ত ঘাসের জমি, দুধের বাজার (চাহিদা ও যোগান) এর নিরবচ্ছিন্নতা, বিকল্প বাজার ব্যবস্থা ইত্যাদি।

২. দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান –এর সাথে পরামর্শকরণ : একসময় মনে করা হতো যে “গাভী পালন তো পরিবার থেকেই দেখে আসতেছি, এটার আবার পরামর্শ করার কি আছে”? ধারণাটা ভুল। একজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান শুরুতেই বিভিন্ন দিক নির্দেশনার মাধ্যমে আপনার পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের সিডির পথ দেখিয়ে দিতে পারে।

৩. গবাদিপ্রাণির খাদ্য পরিকল্পনা : একটি খামারের চলমান খরচের প্রায় ৭০% খরচ হয় খাদ্যে। এই খরচকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে খামারের মোট খরচের অনেকটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। একটি ডেইরি খামারে শুষ্ক গাভি, প্রেগন্যান্ট গাভি, দুগ্ধবতী গাভি, বাছুর ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায়ের গরু থাকে। সেক্ষেত্রে এক এক পর্যায়ে এক এক রকমের পুষ্টি চাহিদার প্রয়োজন। এই পুষ্টি চাহিদা পূরণে TMR (Total Mixed Ration) এর ভিত্তিতে যেভাবেই হিসাব করি না কেন, কাচা ঘাস লাগবেই। এই কাচাঘাস (ডাল জাতীয় ও শর্করা জাতীয়) কোনটা কত পরিমান লাগবে তার হিসাব, আপদকালীন সময়ে সাইলেজ / কখন কতটুকু পরিমাণ, কতটুকু জমিতে কোন ঘাস ইত্যাদি এর সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে। দানাদার খাদ্য এর মিশ্রণ তৈরির সময় কোন উপাদান ব্যবহার করে সাশ্রয়ী কিন্তু সুষম খাদ্য প্রস্তুত করা যাবে তার পরিকল্পনা করতে হবে। বর্তমান ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নের যুগে অনেকেই শুধু দানাদার খাদ্য দিয়ে গাভি পালনের কথা চিন্তা করেন। আমি বলবো, যার কাচাঘাস/সাইলেজ খাওয়ানোর সুযোগ নেই, তার খামার করার প্রয়োজন নেই।

৪. সঠিক বর্জ্র ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা : ডেইরি খামারে বর্জ্য পদার্থের মধ্যে গরুর গোবর অন্যতম। এই গোবর প্রক্রিয়াজাত করে গ্যাস তৈরি করলে, একদিকে যেমন নগদ অর্থ পাওয়া যাবে, অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত গোবর জৈবসার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করে ঘাসের উতপাদন বাডানো সম্ভব। বর্তমান ক্রমবর্ধমান নগরায়নের যুগে খামারের সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার অভাবে সৃষ্ট অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে গবাদিপ্রাণির রোগের প্রবণতা বেডে যাচ্ছে। খামারের স্বার্থেই এই পরিকল্পনাও জরুরি।

৫. পূঁজি ব্যবস্থাপনা : একটি ডেইরি খামারে শুরু থেকে একটি পর্যায় পর্যন্ত (প্রায় ২-৩ বছর) একটু বড় ধরনের অনেক খরচ হয়। সেটি কোন উৎস থেকে কিভাবে আসবে সেটা আগেই পরিকল্পনায় আনতে হবে। সম্ভব হলে ঋণ এর চাইতে শেয়ার পদ্ধতি শ্রেয়। যেহেতু খামার একটি জৈবিক পক্রিয়ার মধ্যে চলে, তাই এর কোন পর্যায়েই অর্থের অভাবে কোন কাজ বাধাগ্রস্ত করা চলবে না।

৬. ডেইরি খামার একটি চলমান জৈবিক প্রক্রিয়া : ডেইরি খামারের সফলতা অনেকটা নির্ভর করে গাভির সুস্থতা, পরিমাণমত দুধ উৎপাদন, উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত জাতের বাচ্চাপ্রদান এবং সেই বাচ্চা উপযুক্ত সময়ে পরবর্তীকালে গর্ভধারণ এর জন্য তৈরি হওয়া এর উপর। এটি একটি চেইনের মতো চলমান প্রক্রিয়া, যা কখনো থেমে থাকার নয়। এই প্রক্রিয়ার যে কোন পর্যায়ে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি হলে তা পরবর্তী পর্যায়ে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। মনে রাখতে হবে যে, এটি অনেকগুলো চালু ইঞ্জিন বিশিষ্ট একটি ফ্যাক্টরি, যেখানে কোন এক ইঞ্জিন একবার বন্ধ হলে আর চালু হবে না।

কোন খামারকেই আদর্শ বা মডেল মনে করা ঠিক নয় : প্রতিটি ডেইরি খামার তার উদ্দেশ্য, চাহিদা এবং যোগান অনুযায়ী তৈরি করা হয়। বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে সময় অনুযায়ী সেটার আপডেটও হয়। কাজেই আপনার খামার কেমন হবে, তা নির্ভর করবে আপনার ইচ্ছা, রিসোর্সেস এবং পরিচালনার উপর।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৩সেপ্টেম্বর২০