দুগ্ধ খামার থেকে অধিক লাভবান হবার গোপন কিছু কৌশল

1420

বর্তমানে অনেক খামারি ভাই আছেন যারা দুগ্ধ জাত খামার গরেছেন কিন্তু আশানুরূপ লাভবান হতে পারছেন না।দুধের দাম কম থাকার কারনে লাভ করতে পারেনা এটা যেমন সত্য, তেমনি দুধের দাম ভাল থাকার পরও অনেক ভাইরা আছেন খামারকে লাভবান করতে পারছেনা। একটি দুগ্ধ খামারকে লাভবান করার জন্য কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল দেয়া জরুরী।

ভালবেসে অনেক সময় গরু বিক্রয় করতে ইচ্ছে হয়না। টাকা আছে পর্যাপ্ত হাতে, ভাবি চলুক দেখা যাক কি দাঁড়ায়। যদি হিসাব এমন হয় তাহলে আমি নেই। আমার কথা হচ্ছে ব্যবসা যাই করি লাভ করতে হবে। অযথা সময় শ্রম দিয়ে লোকসান অনেক করেছি, আর না।

সবার প্রথম, আপনার খামারে অপ্রয়োজনীয়, আনপ্রোডাক্টিভ গরু বা গাভীকে বিক্রি করে দিন। যে গাভীগুলো কনসেভ করতে সমস্যা, দুধ কম হয় সেগুলো খামারে রাখার দরকার নেই। তিনটি সার্কেলের গাভী রাখুন।

১) প্রথম সার্কেল, যেগুলো এখন দুধ দিচ্ছে
২) দ্বিতীয় সার্কেল, প্রথম সার্কের গাভীর দুধ দেয়া শেষ হলে দ্বিতীয় সার্কেল বাচ্চা দেবে।
৩) তৃতীয় সার্কেল যেটা প্রথম সার্কেলকে সাপোর্ট দিবে

দ্বিতীয়ত, খামারে যত বেশী দুধ দেয়া গরু থাকবে, খামারে তত বেশী লাভ। এই বেশী দুধের গরু তৈরীর জন্য জাত উন্নয়ন করে নিতে হবে। আপনার হাতে ভাল দুধের গরু কেউ তুলে দিয়ে যাবেনা বা ভাল দুধের গরু কেউ বিক্রিও করেনা। যেসব গরু বাজারে বিক্রি হয় দেখা যায় তার কোননা কোন সমস্যা থাকে যা ক্রেতা ধরতে পারেনা।

সাধারনত দেখা যায় অনেকদিন ধরে কনসিভ করেনা এমন সমস্যাযুক্ত গাভীকে কোনভাবে কনসিভ করায়ে সাথে সাথে বিক্রি করে দেয়। আপনি আমি না বুঝে কিনে এনে পরবর্তী সময়ে একই সমস্যায় পড়ি। বিক্রেতা বেশীর ভাগ সময় দেখবেন ৯ মাসের গাভীন গরু বিক্রি করে। এর কারন একটাই আপনাকে সহজে ধোকা বা বোকা বানানো যায় যখন গাভী প্রেগন্যান্ট থাকে বিশেষ করে ৮-৯ মাসের সময়।

এই সময়ে গাভীকে দৈহিক গঠনে অনেক বড় দেখায়। ক্রেতাতো দেখে ভাবে এত বড় গরু! আর এই সময়ে আপনাকে নানান গল্পও দেয়া যায় যেমন: আগের বিয়ানে ২৫ লিটার দুধ হয়েছিল, এবার ৩০ হবে নিশ্চিত। বিশ্বাস করলেনতো ধরা খেলেন। আপনাকে গাভী বাচ্চা দিয়েছে ১৫-২০ দিন এমন গাভী দেখে কিনতে হবে। সামনে দাড়ায়ে দুধ চেক করে তারপর নিবেন। এই দুধ চেকটা প্রথম দিন বিকালে করবেন এবং ঠিক তার পরেরদিন সকালে করবেন। সকালে যে দুধ পাবেন সেটা ধরেই দর দাম ঠিক করতে হবে। আগে সকাল পরে বিকাল করলে ধরা খাবেন।

এই রকম নানান ধোকাবাজী আর সমস্যায় পড়ে একজন খামারী লোকসাম দিয়ে নিস্ব হয়ে পড়ে। তাই নিজেকে জাত উন্নয়ন করে নিতে হবে ভাল জাতের সিমেন ব্যবহার করে। ভাল সিমেন বা বীজ মানে ১০০% তা নয়। মনে রাখবেন গাভীকে ৭৫% উপরে নেয়া যাবেনা। সর্বাধিক খেয়াল দিবেন যে বুল বা ষাড়ের বীজ দিচ্ছেন তার কোয়ালিটি কেমন।

মানে ষাড়ের পরিবারে মা দাদী নানী, বোন এদের দুধের রেকর্ড কেমন। এই রেকর্ড ভাল হলে আপনার গাভী থেকে যে বাচ্চা আসবে তার থেকে ভাল দুধ পাবেন। ফেসবুকে ছবি দেখে কোনদিন বোঝা যাবেনা কোন গাভী বা কোন বাচ্চা ভবিষ্যতে কেমন দুধ দেবে বা পারসেন্ট কত।

তৃতীয়ত, আপনার খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিন। আপনার এলাকায় যে রিসোর্স ভাল পাওয়া যায় গাভীকে সেই খাদ্য অভ্যাস করানোই বুদ্ধিমানের। দেখা যায় উত্তরাঞ্চলে ভুট্টা ভাল হয় সেখানে উচিত খাদ্য উপাদান হিসাবে ভুট্টাকে বেশী প্রধান্য দেয়া। ভেজাল খাদ্য খাওয়ানোর থেকে খাদ্যে উপাদান কম রাখেন এটা ভাল।

ফেসবুকের কল্যানে এবং অনেকের পরামর্শে আমরা অন্যকে ফলো করার চেস্টা করি। কেউ বলে তিলের খৈল দাও, ডালের ওমুক তমুক ভুষি দাও। যেমন অনেক জায়গায় দেখা যায় তিলের খৈল হাজার হাজার টন পাওয়া যায়। আমিতো ১ কেজি তিলের তেল কোথাও খুজে পাইনা।

তাহলে এত তিলের খৈল কোথা থেকে আসলো! অনেক জায়গায় ডালের ভুষিতে কাঠের গুড়া সহ নানান ভেজাল দেয়া থাকে। যদি ভালমানের পান তাহলে অবশ্যই দিতে পারেন। আর যদি ভাল মানের না পান তাহলে কম উপাদান দিয়েই একটি রেশন ফর্মুলা বানিয়ে নিবেন।

দুগ্ধ খামারে ষাড় বাচ্চা না রাখাই ভাল, বিক্রি করে দিন। শখের বসে কিছু বড় করলেন সেটা ভিন্ন ব্যাপার। ঘাস চাষ ছাড়া বা সাইলেজ ছাড়া দুগ্ধ খামারকে কোনভাবেই লাভে আনা যাবেনা। খামারে গরু বাড়ানোর আগে এদের খাবার কিভাবে কম পয়সায় ব্যবস্থা করবেন তার দিকে নজরদিন। দুধের ভাল দাম না পেলে প্যাকেট করে খুচরা বিক্রি বা দুগ্ধজাত পন্য তৈরীর উদ্যোগ নিন। একা না পারলে কয়েকজন খামারীরা মিলে করুন।

যারা খামারে লোকসান করছেন আজ থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন, আশাকরি লোকসান ঠেকাতে পারবেন।

তথ্যসূত্রঃ কৃষি সংবাদ

ফার্মসএন্ডফার্মার/১১আগস্ট২০