দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম তৈরির উদ্যোগ জরুরি

1459

দেশী-মাছ-farmsandfarmer24.com

একসময় এদেশের খালে বিলে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেতো। আর সারা বছরই এসব মাছে বাঙালি তাদের চাহিদা মিটাতো। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়া আর অসচেতনতায় প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে দেশি ‍প্রজাতির মাছ।

মূলত অপরিকল্পিত কৃষি, মাত্রা ছাড়ানো সার ও কীটনাশকের প্রয়োগ আমাদের দেশি প্রজাতির মাছের প্রভূত ক্ষতি করেছে। টেংরা, কৈ, শিং, মাগুর, পাবদাসহ অসংখ্য মাছ অনেকটাই রূপকথায় পরিণত হয়েছে। এগুলোর হাইব্রিড সংস্করণ বাজারে পাওয়া গেলেও সেগুলোর স্বাদ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার দেশি এসব মাছ খামারে উৎপাদন করতে গিয়ে এগুলোর আকার আকৃতি একেবারে পরিবর্তন হয়ে গেছে। চাষের এসব মাছ খেতে অনেক ক্ষেত্রে রুচি হয় না।

দেশি মাছ রক্ষায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের চেষ্টায় কিছু আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন নদ-নদী ও জলাশয়ে মাছের জন্য অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। এসব অভয়াশ্রমে দেশীয় মাছের একটা আশ্রয় হয়েছে। নতুন করে দেশি বিভিন্ন মাছের দেখা মিলছে। বিলুপ্তপ্রায় ২২ প্রজাতির মাছ এর মাধ্যমে ফিরে আসার নমুনা দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে দেশে ৮০০ প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৬০ প্রজাতি মিঠা পানির ও ৪৭৫ প্রজাতি সামুদ্রিক। এগুলোর মধ্যে ২৮ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে আরো ৫৪ প্রজাতির মাছ। বিএফআরআই বিলুপ্তপ্রায় ১৮ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে।

২০১৮ সালে অভ্যন্তরীণ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদের মধ্যে ইলিশ অন্যতম অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে ইলিশের প্রজনন ও সংরক্ষণের উদ্যোগের ফলে এর উৎপাদন বেড়েছে। ২০১৭-১৮ সালে দেশে পাঁচ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে এর উৎপাদন ছিল তিন লাখ টন। কৃত্রিম উপায়ে চাষাবাদ বাড়ানো এবং সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বাড়ার কারণে বাংলাদেশে প্রাণিজ আমিষের ৫৮ শতাংশ আসছে মাছ থেকে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে।

বিশ্বে গড়ে প্রাণিজ আমিষের কুড়ি শতাংশ আসে মাছ থেকে। একইভাবে যদি দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রাচুর্য আগের মতো ফিরে আসে তাহলে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ রেকর্ড অর্জন করতে পারবে।

বিএফআরআই দেশি মাছ সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়ায় আমরা আশাবাদী। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশি মাছের প্রাচুর্য এখনো আগের অবস্থায় আসেনি। আইড়, চিতল, ফলিসহ প্রায় প্রত্যেকটি প্রজাতির মিঠা পানির মাছের দুষ্প্রাপ্যতা রয়েছে। বাজারে এসব মাছের একেবারে আকাল। কখনো এসব দেশি মাছের সরবরাহ সীমিত আকারে দেখা গেলেও দাম অত্যন্ত চড়া থাকে। দেশি এসব মাছ আগের উৎপাদন ব্যবস্থায় আনতে হলে ব্যাপক মাত্রায় চেষ্টা-প্রচেষ্টা দরকার।

বিএফআরআই যে চেষ্টা চালাচ্ছে, এর মাধ্যমে বিলুপ্ত মাছগুলোর সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এসব মাছ পৌঁছাতে হলে কৃষিব্যবস্থার সংস্কার দরকার। বিশেষ করে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জলাশয় ও নদ-নদী রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া। বেহাত হয়ে যাওয়া জলমহালগুলো উদ্ধারের মাধ্যমে সেগুলোতে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এনডি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন